সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া প্রশাসনের রদবদল হবে না : ইসি

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া নির্বাচনকালীন মাঠ প্রশাসনে রদবদল হবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। বুধবার নির্বাচন কমিশনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, অযৌক্তিত কারণে কাউকে বদলি করবো না। যৌক্তিক কোনো কারণ থাকলে-হ্যাঁ, এই অফিসার নিরপেক্ষ নন, তার আচরণে ও কাজে প্রমাণ হয়েছে, তখন বদলি করবো। যেমন জামালপুরের একজন জেলা প্রশাসককে আমরা বদলি করেছি সেই সময় সিডিউল ঘোষণা হয়নি। উনি একটি অনুষ্ঠানে একজন রাজনৈতিক দলের এমপির পক্ষে কথা বলেছেন। তখন তাকে বদলি করেছি।

প্রশাসনে নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য রদবদল করবেন কি? এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, অনেকে নিজেদের ভাবনা থেকে এগুলো বলেন। আইনের ব্যাখ্যাটা হলো আরপিও অনুযায়ী পুলিশের কমিশনার, বিভাগীয় কমিশনার এবং এর নিচে যতো কর্মকর্তা আছেন তারা নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া বদলি হতে পারবে না।  সরকার চাইলে এদের বদলি করতে পারবে না। সবাই আমাদের অধীনে এসেছে এই আইনটি আপনারা কোথায় পেলেন? যদি এটা দেখাতে পারেন তাহলে আমরা এর উত্তর দিতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, কোনো বিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি নির্বাচন কমিশনের কাছে মনে হয় তার আচরণ নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিপক্ষে।

তখন নির্বাচন কমিশন সেই কর্মকর্তাকে বদলি করতে পারে। রিটার্নিং অফিসার যাদের নিয়ে নির্বাচন করবেন অর্থাৎ প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার এদের জেলার বাইরে বদলি করা যাবে না। পুরো সরকারি আইন ও রাষ্ট্র আমাদের অধীনে এসেছে এটা আপনাদের কে বলেছে? এটা কোথায় পেয়েছেন। টকশো দিয়ে দেশ চলে না। সংবিধানে আছে নির্বাচন কমিশন নির্বাহী বিভাগের সহায়তা চাইলে তারা দিতে বাধ্য। আরওপিওতে আছে নির্বাচন কমিশন কোনো সংস্থা ও বিভাগের সহায়তা চাইলে তারা দিতে বাধ্য।

রদবদল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা রদবদল করবো, কেন করবো? একটা যৌক্তিক কারণ বা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হবে। যদি অভিযোগ থাকে এই কর্মকর্তা নিরপেক্ষ নন বা অমুকের পক্ষে কাজ করছেন যদি সেই প্রমাণ থাকে তখন আমরা ব্যবস্থা নেবো।  তাছাড়া এতো হাজার হাজার কর্মকর্তাদের বদলি করা হলে প্রশাসনে বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দেশ পরিচালনায় অথবা নির্বাচন পরিচালনায় যে একটা বিশাল বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে এই দায়িত্ব কে নেবে। এখন কোন যুক্তিতে আমরা সবাইকে বদলি করবো। একটা যুক্তি তো থাকতে হবে। বদলি করলে তাদেরকে প্রচুর টিএ বিল দিতে হবে, এই টিএ বিলের টাকাটা কে দেবে? কয়েকশ কোটি টাকা টিএ বিল লাগবে। আপনারা জানেন একটা কর্মকর্তাকে বদলি করা হলে তার ফ্যামিলির যাওয়া আসার খরচ ও মালামাল পরিবহনের খরচ দিতে হয়। অনেক টাকা দিতে হয়। তারপরে বাসা পরিবর্তন করতে হয় নতুন অফিসার এসে বলবে বাসায় রং করো তার একটা খরচ আছে। কারণ আগের বাসায় তিনি থাকবে না। এই টাকা কে দেবে? মুখ দিয়ে বদলি বললেই হয় না। বদলি করতে টাকা লাগে। হ্যাঁ আমরা অবশ্যই বদলি করবো যদি তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে এবং প্রমাণ পায়।

বিরোধী দল অভিযোগ করছে সরকার নিজের মতো প্রশাসন সাজিয়ে রেখেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, এই অভিযোগ আমি ১৯৭০ সাল থেকে শুনে আসছি। আমি তখন ছোট ছিলাম প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র ছিলাম যথেষ্ট বুঝতাম। তখন ইত্তেফাক পত্রিকা পড়েই দেখতাম এসব অভিযোগ। এর পরে যতো নির্বাচন বাংলাদেশে হয়ে এসেছে এই ধরনের অভিযোগ শুনে এসেছি। এই অভিযোগ কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে।

এ সময় ৩৪ দেশ ও ৪ সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা যেসব দেশের নির্বাচন কমিশনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি, সেসব কমিশনের কোনো কমিশনার বা কর্মকর্তা যদি বাংলাদেশে আসেন, তা হলে এখানে তাদের যাতায়াতর খরচ, হোটেল ভাড়া ও থাকা-খাওয়ার খরচ কমিশন ব্যবস্থা করবে। তবে তাদের বিমান খরচ বহন করা হবে না। এ ছাড়া অন্যান্য সংস্থা বা সাংবাদিকরা এলে তাদের সব খরচ নিজেদের বহন করতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন বিক্রি করতে আচরণবিধি ভঙ্গ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনোনয়ন ফরম কেনার সময় পার্টি অফিসে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকলাপ আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়বে না। কিন্তু মনোনয়ন ফরম কেনার সময় গাড়ি ও মোটরসাইকেলের শোডাউন করতে পারবে না।