দুবাইয়ে কপ-২৮ জলবায়ু সম্মেলন শুরু আজ

দুবাইয়ে কপ-২৮ জলবায়ু সম্মেলন শুরু আজ

ছবি: সংগৃহীত

আজ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে শুরু হচ্ছে জাতিসংঘ আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলন কপ’র (কনফারেন্স অফ দ্য পার্টিজ) ২৮তম আসর। চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এবারের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বেশ বড় পরিসরে, যেখানে সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিসহ ৭০ হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, বায়ুমণ্ডলে অধিক কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা চীনের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান কেউ এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন না। পরিসংখ্যান যদিও বলছে, পৃথিবীব্যাপী ৫৫ শতাংশেরও বেশি ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণ করছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও রাশিয়া।

ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের (১৭৬০) পর থেকেই মূলত পৃথিবীতে কার্বন নিঃসরণ শুরু হয়, যা বাতাসের উষ্ণতা ও বায়ুদূষণের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অন্তত ১.৬২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে একবিংশ শতাব্দী শেষে বিশ্বের বুক থেকে ৪৩টি দেশ সমুদ্রপৃষ্ঠে হারিয়ে যাবে! ডুবে যাবে বাংলাদেশেরও উল্লেখযোগ্য অংশ। অথচ যেসব দেশ এজন্য দায়ী, তারা নির্বিকার। পৃথিবীব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আজ সহজেই দৃশ্যমান, যার মধ্যে রয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, বন্যা, খরা, দাবানল ইত্যাদি।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন দেশে সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার বিরূপ প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে, যাদের মধ্যে ৪ কোটি দক্ষিণ এশিয়ার। আমাদের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ উপকূলীয় অঞ্চলে বাস করে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ, ঘন ঘন বন্যা এবং প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে তারাও বাস্তুচ্যুতির ঝুঁকিতে রয়েছে।

মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) সদর দপ্তরে ৩ দিনব্যাপী অধিবেশনে ‘মানব গতিশীলতার ওপর জলবায়ুর প্রভাব : সমাধানের জন্য বৈশ্বিক আহ্বান’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সম্প্রচারিত এক ভিডিও বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু বাস্তুচ্যুতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ মানব সংকটের মুখোমুখি হওয়া থেকে তাদের রক্ষায় মানব গতিশীলতার পাঁচটি বিষয়ের ওপর নজর দিতেও বলেছেন তিনি।

বস্তুত, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতি যাতে মানবিক সংকটে পরিণত না হয়, সে লক্ষ্যে প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা ও সংহতি। একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যারা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তাদের মৌলিক পরিষেবা, সামাজিক সুরক্ষা এবং জীবিকার বিকল্প ক্ষেত্রগুলোতে প্রবেশাধিকার থাকা যেমন দরকার, তেমনি তাদের আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের ওপর বিরূপ প্রভাবগুলোও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতিতে মোকাবিলা করা দরকার।

এবারের সম্মেলনে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ভালো সংবাদ আসবে বলে আশা করছি আমরা। প্রত্যাশা থাকবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় বৈশ্বিক লড়াইয়ের প্রশ্নে কার্যকর ও জুতসই উদ্যোগ গ্রহণের। একইসঙ্গে জলবায়ু অর্থায়ন (ক্লাইমেট ফান্ডিং) বৃদ্ধির পাশাপাশি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বের হয়ে নবায়নযোগ্য উৎসের সন্ধানের বিষয়ও এবারের সম্মেলনে সব মহলে গুরুত্ব পাবে, এটাই প্রত্যাশা।