মর্গের সামনে সন্তানের লাশের জন্য ২৬ ঘণ্টার অপেক্ষা

মর্গের সামনে সন্তানের লাশের জন্য ২৬ ঘণ্টার অপেক্ষা

ছবিঃ সংগৃহীত।

হাসপাতালের মর্গে আদরের সন্তানের মরদেহ। পারিবারিক কবরস্থানে  তার জন্য প্রস্তুত কবর। আর মর্গের বাইরে মরদেহের জন্য অপেক্ষা স্বজনদের। অবশেষে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলে ২৬ ঘণ্টা পর মরদেহ হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর আগে দিনভর অসহায়ের মতো হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন স্বজনরা।

 

এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে। ২৬ ঘণ্টা পর সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে মরদেহ বুঝে পায় পরিবার।

জানা যায়, শনিবার (৯ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক ১২টার দিকে ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আবাসন এলাকার আবু বক্করের ঘর থেকে তার বড় ছেলে আবু সাঈদের (২০) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে স্বজনরা। নিজ শয়নকক্ষে গলায় বেল্ট পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। তাকে উদ্ধার করে ওইদিন রাত ২টার দিকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে মরদেহ মর্গে পাঠান।

 

এরপর কেটে গেছে পুরো একটা দিন। রোববার (১০ ডিসেম্বর) পুলিশ মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন সম্পন্ন করলেও সময় শেষ হয়ে যাওয়ার অজুহাতে মরদেহের ময়নাতদন্ত করেননি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শাহিনুর আলম সুমন।

নিহতের মামা আবদুল খালেক বলেন, আমার ভাগিনা এলাকায় একটি সুতার মিলে কাজ করতো। সেখানে স্বর্ণা নামে এক মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের কথা জেনেছি। ওইদিনও আত্মহত্যার আগে ওই মেয়ের সঙ্গে ৪৫ মিনিট কথা বলেছে সে। তারপর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমার ভাগিনার মরদেহ হাসপাতালের মর্গে আনা হলেও ময়নাতদন্ত করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

 

তিনি বলেন, রোববার সকালে পুলিশ এসে সুরতহাল প্রতিবেদন ও তদন্তের কাজ শেষ করে দুপুরে আরএমওকে ফোন দিলে বিকেল ৩টার পর ময়নাতদন্ত হবে না বলে জানিয়ে দেন তিনি। অথচ মরদেহ পাওয়ার আশায় আমরা বাড়িতে কবর খোঁড়াসহ মরদেহ দাফনের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করি। ডাক্তার ইচ্ছা করলেই ময়নাতদন্ত করতে পারতেন। শুধুমাত্র তার খামখেয়ালির কারণে মরদেহ পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে আমাদের। আজ দুপুরে মরদেহ বুঝে পেলে বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

জানতে চাইলে অপমৃত্যু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হক বলেন, মরদেহ সুরতহাল শেষে রোববার ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। আজ সোমবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

 

এ বিষয়ে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের ডোম আবদুর রহিম বলেন, আজ দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

 

এ বিষয়ে জানতে ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. শাহিনুর আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও সাড়া মেলেনি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল খায়ের মিয়াজী বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্ত না হওয়ার বিষয়টি তিনি জেনেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এ ব্যাপারে কর্তব্যরত আরএমও ডা. শাহিনুর আলমের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হবে।