ইবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন কাল : বিএনপিশূন্য মাঠে দুই ভাগে বিভক্ত আওয়ামীপন্থীরা

ইবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন কাল : বিএনপিশূন্য মাঠে দুই ভাগে বিভক্ত আওয়ামীপন্থীরা

ইবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন কাল : বিএনপিশূন্য মাঠে দুই ভাগে বিভক্ত আওয়ামীপন্থীরা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর)। দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা। বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠনগুলো তাদের সদস্যদেরকেও নির্বাচন বর্জনের অনুরোধ জানিয়েছেন। বিএনপিপন্থীরা অংশ না নিলেও নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেল নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা। এদিকে, প্যানেল দেওয়ার ক্ষেত্রে পদ ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পৃথক প্যানেলে অংশ নিয়েছে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা। ফলে জামায়াতপন্থীদের সঙ্গে আওয়ামীপন্থী দুই প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নির্বাচনে।  

নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, নির্বাচনে ১৫ টি পদের বিপরীতে তিন প্যানেলে ৪৫ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে একজন শিক্ষক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচনে মোট ৪০৮ শিক্ষক ভোটাধিকার প্রদান করবেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করে পূর্ণ প্যানেলে জয় পেলেও এবার প্যানেলে পদ ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। প্যানেলে পদ বন্টনের ক্ষেত্রে শাপলা ফোরামের নেতৃস্থানীয়দের পক্ষ থেকে অন্য পক্ষকে ছাড় না দেওয়ায় বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে উপাচার্যের মধ্যস্থতায় দফায় দফায় আলোচনা করেও শেষ পর্যন্ত এক হতে পারেনি দুই পক্ষ। ফলে জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে জামায়াতপন্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামীপন্থীদের বিভক্তিকে নেতিবাচক উল্লেখ করে নির্বাচনের ফল নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন প্রগতিশীল সিনিয়ির শিক্ষকরা। এই বিভক্তিকে শাপলা ফোরামের বর্তমান কমিটির ব্যর্থতা মনে করছেন অনেকে। 

অভিযোগ রয়েছে, পদ-পদবী ও ব্যক্তিগত স্বার্থে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গত প্রশাসনের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যপন্থীদের দুটি পক্ষ দৃশ্যত সক্রিয় ছিল। সম্প্রতি সাবেক উপ-উপাচার্যপন্থীদের একটি অংশ সাবেক উপাচার্যপন্থীদের সঙ্গে একজোট হয়েছেন এবং একটি অংশ বর্তমান উপাচার্যের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলছেন। গত ২ ডিসেম্বর আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরামের নির্বাচনে ১৫টি পদের মধ্যে ১০টিতে জয় পায় সাবেক প্রশাসনপন্থীরা। পরে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া সত্বেও বর্তমান প্রশাসনপন্থীদের কাউকে গুরুত্বপূর্ণ পদ না দেওয়ায় দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। একইভাবে শিক্ষক সিমিতর নির্বাচনে প্যানেল দেওয়ার ক্ষেত্রেও বর্তমান প্রশাসনপন্থীদের শীর্ষ পদের কোনটিই ছাড় দিতে রাজি না হওয়ায় দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়। ফলে দুই পক্ষ দুটি প্যানেলে মনোনয়ন সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে উপাচার্যের মধ্যস্ততায় দুই দফা বৈঠক করেও সমঝোতায় আসতে পারেনি পক্ষদুটি। 

বর্তমান প্রশাসনপন্থী শিক্ষকদের অভিযোগ, শাপলা ফোরামের নেতারা প্যানেল দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদেরকে উল্লেখযোগ্য কোন পদে ছাড় দেয়নি। যে প্যানেল দিয়েছে এটিতে শাপলা ফোরামের সাধারণ সদস্যদের ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটেনি। ফলে সাধারণ সদস্যদের প্রত্যাশায় আরেকটি প্যানেল দেওয়া হয়েছে। বিভক্তির জন্য তারা শাপলার নেতাদের ‘একগুয়েমিকে’ দায়ী করেন। 

অন্যদিকে সাবেক প্রশাসনপন্থীদের দাবি, শাপলা ফোরামের কমিটির অধিকাংশের সম্মতিতে একটি প্যানেল দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে শাপলা ফোরামের সদস্যদের যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তারা তাদের ব্যাক্তিগত স্বার্থ ও চিন্তা থেকে অংশ নিয়েছেন। এটি দলীয় গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী। 

সাবেক প্রশাসনপন্থী প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘শাপলা ফোরামের গঠনতন্ত্রে আছে প্রগতিশীল শিক্ষকদের সবার প্রতিনিধিত্ব করবে শাপলা ফোরাম। এখন এর বাইরে যদি কেউ ব্যাক্তিগতভাবে নির্বাচন করে এই বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্য প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শাপলা ফোরামের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় অন্য পক্ষকে ছাড় না দিয়ে একটি পক্ষ নিজেদের মতো করে কমিটি করেছে। সেই কমিটি থেকেই শিক্ষক সমিতির প্যানেল দিয়েছে। সেখানে আমাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ কোন পদই দিতে চায়নি তারা। ফলে এটি মিটিংয়েও সবার সম্মতি পায়নি। আমরা সভা বর্জন করে চলে আসি। এছাড়া ওই প্যানেলে সাধারণ সদস্যদের ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটেনি। তাই আমরা আলাদা প্যানেল দিয়েছি।’

শাপলা ফোরামের সভাপতি পরেশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘শাপলা ফোরাম থেকে একটি প্যানেল দেওয়া হয়েছে। বাকিরা ফোরামের সদস্য হলেও ফোরাম মনোনীত নয়। তারা শাপলা ফোরামকে বিভ্রান্ত করার জন্য পূর্বপরিকল্পিতভাবে এসব করছে। তবে এ নিয়ে আমাদের কোন শঙ্কা নেই।’