নানা অস্থিরতায় ধুঁকছে যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক

নানা অস্থিরতায় ধুঁকছে যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক

নানা অস্থিরতায় ধুঁকছে যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক

যশোরে অবস্থিত শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের কোম্পানিগুলোর ব্যবসা গুরুতর ঝুঁকিতে পড়েছে। বেশিরভাগ কোম্পানি ইতোমধ্যে লোকসানে চলে গেছে। ফলে বাড়ছে ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলের চাপ, ছাঁটাইয়ের ঝুঁকিতে পড়ছেন কর্মীরা।মূলত অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

যশোর শহরের পূর্বপ্রান্তে নাজির শংকরপুর এলাকায় প্রতিষ্ঠিত পার্কটিতে এখন ৪০টির মতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সক্রিয় আছে। এরা মূলত আইটি ও আইটিসংশ্লিষ্ট ব্যবসা যেমন, সফটওয়্যার, ডিজিটাল মার্কেটিং, আইএসপি, গ্রাফিক্স, ই-কমার্স, কলসেন্টার এবং দক্ষ কর্মী সৃষ্টির কার্যক্রমে যুক্ত। এছাড়া কম্পাউন্ডেই রয়েছে একটি ডরমেটরি (যা এখন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট) এবং ক্যাফেটেরিয়া, একাধিক কনফারেন্স ও মিটিং রুম।কথা বলে জানা যায়, কোম্পানিগুলোর মালিকেরা ব্যবসার হাল অবস্থায় হতাশ ও চিন্তিত।

এখানকার কোম্পানি টেকনোসফট গ্লোবাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহজালাল, যিনি উদ্যোক্তাদের সংগঠনেরও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, হতাশা লুকাতে পারলেন না। বললেন, "আমরা সফটওয়্যারের নতুন কোনো অর্ডার পাচ্ছি না। যেসব কোম্পানি আমাদের সার্ভিস নেয়, তারাও নিয়মিত পেমেন্ট দিতে পারছে না। ফলে কোম্পানির আয়ে ধস নেমেছে।"

হাসনাত ইন্টারন্যাশনালের সত্বাধিকারী এএইচএম আরিফুল হাসনাত বলেন, "আমরা সফটওয়্যার ও ওয়েবসাইট তৈরি ও বিপণন করি। কিন্তু গত বেশ কিছুদিন ধরে কোনো অর্ডার নেই। এমনকী পাইপলাইনে থাকা অর্ডারগুলোও নিষ্পত্তি হচ্ছে না।"

ইভেন্টটেক নামের প্রতিষ্ঠানটি ই-কমার্সভিত্তিক। বিশেষ করে যশোরের ঐতিহ্য খেজুরের গুড়-পাটালি অনলাইনে বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি সুনাম অর্জন করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নাহিদুল ইসলাম বলছিলেন, "এখন ভরা মৌসুম। কিন্তু ব্যবসার অবস্থা করুণ।"

তাঁর ভাষ্য, একদিকে পণ্যমূল্যের ঊর্ধগতি, অন্যদিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস ব্যবসার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তাছাড়া হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জনচলাচল ও পণ্য পরিবহন কমেছে। এর ফলে নিত্যপণ্য নয়- এমন প্রোডাক্টের ব্যবসা আশঙ্কাজনক কমেছে।

যশোর আইটির অন্যতম ব্যবসা ইন্টারনেট সার্ভিস (আইএসপি) দেওয়া। এই কারবারের ব্যবস্থাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম।

তিনি বলছেন, তাঁদের বিজনেস গ্রোথ বন্ধ হয়ে গেছে মাস দুয়েক আগে। এখন উল্টো গ্রাহক কমছে। ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি চিন্তিত।এদিকে, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে 'টনিস ক্যাফে' নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে পার্কের কর্মীরা খাবার গ্রহণ করেন। নানা সামাজিক ও ব্যবসায়িক অনুষ্ঠান আয়োজনেরও ব্যবস্থা আছে এখানে।

কিন্তু সপ্তাহখানেক হলো বন্ধ হয়ে গেছে টনিস ক্যাফে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক অপারেশন্স মালিক মো. ইসমাইল আল আজম জানান, তাঁদের ভাড়া বকেয়া পড়েছে প্রায় দশ লাখ টাকা। সেকারণে গেল সপ্তাহে টেকসিটি বাংলাদেশ লি. (পার্কটি দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান) তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে টনিস ক্যাফেতে।

তিনি জানান, সাম্প্রতিককালে তাঁরা ভর্তুকি দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছিলেন। কিন্তু সামাজিক-ব্যবসায়িক অনুষ্ঠান একেবারেই কমে যাওয়ায় এখন আর চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা কাজ হারানোয় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

অন্যদিকে, টেকসিটির কাছ থেকে বছরখানেক আগে ১২ তলাবিশিষ্ট ডরমেটরিটি চুক্তিতে ইজারা নিয়ে তা 'হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট' হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান 'খান প্রোপার্টিস'। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আমেরিকায় থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

তবে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, রিসোর্টটির ব্যবসা তলানিতে ঠেকেছে। ব্যবহারযোগ্য ৭৫টি কক্ষের মধ্যে দিনে গড়ে ৪/৫টি বুক হচ্ছে। নাজুক পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতোমধ্যে ২০ জনের বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে মালিক প্রতিমাসে বিপুল টাকা ভর্তুকি দিচ্ছেন। তবে এভাবে আর কতদিন চালানো সম্ভব তা নিয়ে শঙ্কিত রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ।

যোগাযোগ করা হলে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসান কবীর পার্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক অবস্থার ঘোর অবনতির কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, এরই মধ্যে বেশকিছু কোম্পানি জনবল কমিয়েছে। কিন্তু দক্ষ কর্মী বিদায় করা সম্ভব না। কারণ প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি রয়েছে শুরু থেকেই।

"কোম্পানিগুলোর ভাড়া, বিদ্যুৎ বিলের বোঝা বাড়ছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে আরও কোম্পানি ব্যবসা হারিয়ে পার্ক থেকে বিদায় হতে পারে বলে আমার আশঙ্কা", বলছিলেন তিনি।