সংসার সামলে ব্যবসা করে ভারতের শীর্ষ ধনী নারী সাবিত্রী জিন্দাল

সংসার সামলে ব্যবসা করে ভারতের শীর্ষ ধনী নারী সাবিত্রী জিন্দাল

সাবিত্রী জিন্দাল

ভারতের সবচেয়ে ধনী নারীর তকমা আগেই পেয়েছিলেন শিল্পপতি সাবিত্রী জিন্দাল। চলতি বছরও সেই আসন ধরে রাখলেন তিনি। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ারস ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সাবিত্রীর সম্পত্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্পত্তি বৃদ্ধির নিরিখে ৭৩ বছর বয়সী সাবিত্রী ধনকুবের মুকেশ আম্বানিকেও ছাপিয়ে গেছেন।

ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

আনন্দবাজার বলেছে, ২০২৩ সালে সাবিত্রীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৯৬০ কোটি ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপরীতে, রিলায়েন্স গোষ্ঠীর কর্তা মুকেশের সম্পত্তি বেড়েছে ৫০০ কোটি ডলার। যদিও ভারতের সবচেয়ে ধনীর তকমা রয়েছে আম্বানির কাছেই।

তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৯ হাজার ২৩০ কোটি ডলার। অন্যদিকে ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী সাবিত্রী ভারতের পঞ্চম বিত্তশালী। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ দুই হাজার ৫৩০ কোটি ডলার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘরের চৌহদ্দি ছেড়ে তাঁকে যে বেরোতে হবে, তা কখনো ভাবেননি সাবিত্রী।

বরং উল্টো মত পোষণ করতেন। একবার এক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁর বিখ্যাত উক্তি ছিল, ‘আমরা মেয়েরা ঘরের চৌহদ্দি সামলাব। আর পুরুষরা বাইরের জগতের সব কিছু দেখাশোনা করবে।’ তবে এক সময় তাঁকেই ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে বাইরের জগৎ সামলাতে হয়েছিল।

সাবিত্রীর স্বামী ছিলেন ভারতের ইস্পাত সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি ওম প্রকাশ জিন্দাল।

অন্যদিকে প্রাচুর্যে ভরপুর সংসারে মধ্য পঞ্চাশের সাবিত্রীর জীবন কাটছিল বেশ নিশ্চিন্তে। ৯ সন্তানকে নিয়ে বেশ নিশ্চিন্তেই সংসার সামলাতেন সাবিত্রী। কিন্তু ২০০৫ সালে আচমকা বড়সড় ঝাঁকুনিতে থমকে যায় জীবন। সে বছর হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল তাঁর স্বামী তথা শিল্পপতি ওম প্রকাশের। দুর্ঘটনায় ওম প্রকাশের অকস্মাৎ মৃত্যুর পর ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে হয়েছিল সাবিত্রীকে। অথচ এমনটা যে করতে হবে, কল্পনাও করেননি তিনি।

৭৪ বছরের ওম প্রকাশ ছিলেন ভারতের ও পি জিন্দাল গোষ্ঠীর কর্ণধার। ইস্পাত এবং বিদ্যুৎক্ষেত্রে গোষ্ঠীটির রমরমা ব্যবসা ছিল। ২০০৫ সালের ৩১ মার্চ উত্তর প্রদেশের সহারানপুরের কাছে তাঁর হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। তাঁর সঙ্গে মৃত্যু হয়েছিল হরিয়ানার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বংশীলালের ছেলে তথা সে সময় ওই রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী সুরেন্দ্র সিং এবং হেলিকপ্টারচালক টি এস চৌহানের। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন ওম প্রকাশের আত্মীয় বেদ গয়াল এবং কনস্টেবল বিনোদ কুমার।

শিল্পপতি ছাড়া আরো একটি পরিচয় ছিল ও পি জিন্দালের। তিনি ছিলেন ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের হিসার বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক। মৃত্যুকালে তিনি রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। জানা গিয়েছিল, প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ওম প্রকাশের হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েছিল।

স্বামীর অকালপ্রয়াণের পর ভেঙে পড়েননি সাবিত্রী। ও পি গোষ্ঠীর দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন। যে বয়সে নিশ্চিন্তে সংসার করেন অধিকাংশ নারী, সেই বয়সে ব্যবসার খুঁটিনাটি শিখতে হয়েছিল তাকে। তখন সাবিত্রীর বয়স ছিল ৫৫। সাবিত্রী বর্তমানে ও পি জিন্দল গোষ্ঠীর চেয়ারপার্সন এমিরেটা। গত দুই বছরে তাঁর হাত ধরেই এই গোষ্ঠীর প্রসার হয়েছে।

ভারতের আসাম রাজ্যের তিনসুকিয়া জেলার বাসিন্দা সাবিত্রীর জন্ম ১৯৫০ সালের ২০ মার্চ। সত্তরের দশকে ওম প্রকাশের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। সংবাদমাধ্যমের দাবি, গত তিন বছরে তরতর করে বেড়েছে সাবিত্রীর সম্পত্তি। গত বছর তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৭০০ কোটি ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় যা ২১ লাখ কোটি রুপিরও বেশি। এখন তা আরো বেড়ে হয়েছে ২১ লাখ চার হাজার ২৮ কোটি রুপি।

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এক পত্রিকায় প্রকাশিত ধনী ভারতীয়দের তালিকার প্রথম ১০-এ একমাত্র নারী প্রতিনিধি ছিলেন সাবিত্রীই।

গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, পৃথ্বীরাজ, সজ্জন, রতন এবং নবীন জিন্দাল—বাবার মৃত্যুর পর এই চার সন্তানের মধ্যে ও পি গোষ্ঠীর ভাগ দেওয়া হয়েছিল। চারজনের মধ্যে জেএসডাব্লিউ স্টিলের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সজ্জন। সেটি ছিল গোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় অংশ। তবে সম্প্রতি বিতর্কে নাম জড়িয়েছে সজ্জনের। এ শিল্পপতির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন এক অভিনেত্রী। যদিও সজ্জন সেই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সংসার সামলানোর ফাঁকে ব্যবসায় পা রাখলেও চোখে পড়ার মতো উত্থান হয়েছিল সাবিত্রীর। ২০২০ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত তাঁর মোট সম্পত্তি তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বছর তিনেক আগে সাবিত্রীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৪৮০ কোটি ডলার, চলতি বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৩০ কোটি ডলার।

আনন্দবাজার অনুসারে, ব্যবসার পাশাপাশি স্বামীর মতো রাজনীতির আঙিনায়ও পা রেখেছেন সাবিত্রী। ২০০৫ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর কেন্দ্র থেকেই নির্বাচনে দাঁড়ান। কংগ্রেসের টিকিটে সেই কেন্দ্রে জয়ী হয়ে পা রাখেন হরিয়ানা বিধানসভায়। পরের বিধানসভা নির্বাচনে আবারও জয় পান তিনি। ২০১৩ সালে হরিয়ানার ক্যাবিনেট মন্ত্রীও হয়েছিলেন সাবিত্রী। তবে রাজনীতিক নয়, সাবিত্রীর আসল সাফল্য ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে, এমনটাই মনে করেন শিল্প মহলের একটা বড় অংশ।