ভারতকে ইনিংস হারের লজ্জা দিল দক্ষিণ আফ্রিকা

ভারতকে ইনিংস হারের লজ্জা দিল দক্ষিণ আফ্রিকা

সংগৃহীত

মার্কো ইয়ানসেনের ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারি বোলারের মাথার ওপর দিয়ে খেললেন ভিরাট কোহলি। হলো না টাইমিং। লং অন থেকে অনেকখানি দৌড়ে বাম দিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নিলেন কাগিসো রাবাদা। গুটিয়ে গেল ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা পেল দারুণ এক জয়।

সেঞ্চুরিয়নে ভারতের বিপক্ষে বক্সিং ডে টেস্ট তিন দিনেই জিতে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় ইনিংসে প্রতিপক্ষকে ১৩১ রানে গুঁড়িয়ে স্বাগতিকরা ম্যাচ জিতেছে ইনিংস ও ৩২ রানের ব্যবধানে। ভারতের ২৪৫ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে ডিল এলগারের সেঞ্চুরিতে স্বাগতিকরা করে ৪০৮ রান। ১৬৩ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে কোহলি ছাড়া প্রোটিয়া পেসের সামনে কেউই দাঁড়াতে পারেনি।

প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নেওয়া অভিষিক্ত পেসার নান্দ্রে বার্গার দ্বিতীয়বারে নেন ৪টি। এছাড়া ইয়ানসেন ৩ ও রাবাদা ২ উইকেট নিয়ে গুটিয়ে দেন ভারতের ইনিংস। পেসারদের তোপের আগে দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুণ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে লিড এনে দেন এলগার। ১৮৫ রানের ইনিংসে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জেতেন এই সিরিজ দিয়ে টেস্ট ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া বাঁহাতি ওপেনার। 

আগের দিন সেঞ্চুরি ছোঁয়া এলগার বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) সম্ভাবনা জাগান ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতকের। দলকে এগিয়ে নেওয়ার পথে তিনি সঙ্গী হিসেবে পান ইয়ানসেনকে। ষষ্ঠ উইকেটে দুজন মিলে যোগ করেন ১১১ রান। ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার দেড়শ ছাড়ানো ইনিংস খেলে এলগার থামেন শার্দুল ঠাকুরের বলে, গতিময় বাউন্সারে সময়মতো সরতে পারেননি বাঁহাতি ওপেনার। তার গ্লাভস ছুঁয়ে যাওয়া বল সহজেই ক্যাচ নেন উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুল। প্রায় সাত ঘণ্টা ক্রিজে থেকে ২৮৭ বলের ইনিংসে ২৮টি চার মারেন এলগার।

এরপর নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান ইয়ানসেন। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে দলকে চারশ পার করান এই পেস অলরাউন্ডার। অন্যপ্রান্তে তাকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি জেরাল্ড কুটসিয়া, কাগিসো রাবাদারা।

শেষ পর্যন্ত ৮৪ রানে অপরাজিত থেকে যান ইয়ানসেন। ইনিংসটি ১১ চার ও ১ ছক্কায় তিনি সাজান ১৪৭ বলের ইনিংস। ম্যাচের প্রথম দিন পাওয়া হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি স্বাগতিক অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা।  ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন জাসপ্রিত বুমরাহ।

দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই রোহিত শার্মার উইকেট হারায় ভারত। রাবাদার মিডল স্টাম্পে পিচ করে হালকা বেরিয়ে যাওয়া বলে পরাস্ত হন ভারতীয় অধিনায়ক। ষষ্ঠ ওভারে বার্গারের বাউন্সারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন যাশাসবি জয়সাওয়াল। ১৩ রানে দুই ওপেনার ফেরার পর প্রতিরোধের আভাস দেন শুবমান গিল ও কোহলি। তবে বেশি লম্বা হয়নি তাদের বন্ধন। দলকে পঞ্চাশ পার করিয়ে ইয়ানসেনের ফুল লেংথ ডেলিভারি অন সাইডে খেলার চেষ্টায় স্টাম্প খোয়ান গিল। ৩৭ বলে ৬ চারে ২৬ রান করেন তিনি।

এরপর একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে শুধু বাকিদের আসা-যাওয়ার মিছিল দেখেন কোহলি। দুই ওপেনারের মতো শেষ সাত ব্যাটসম্যানও দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি।  শ্রেয়াস আইয়ারকে বোল্ড করেন ইয়ানসেন। আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান রাহুল এবার ৪ রানে ধরা পড়েন উইকেটের পেছনে। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ৬১ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন কোহলি। তার ব্যাটে ইনিংস পরাজয় এড়ানোর আশা জাগায় ভারত। কিন্তু অন্যদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত বড় পরাজয়ই সঙ্গী হয় তাদের। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়া কোহলি খেলেন ১২ চার ও ১ ছক্কায় ৮২ বলে ৭৬ রানের ইনিংস।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত ১ম ইনিংস: ২৪৫

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২৫৬/৫) ১০৮.৪ ওভারে ৪০৮ (এলগার ১৮৫, ইয়ানসেন ৮৪*, কুটসিয়া ১৯, রাবাদা ১, বার্গার ০, বাভুমা আহত অনুপস্থিত; বুমরাহ ২৬.৪-৫-৬৯-৪, সিরাজ ২৪-১-৯১-২, ঠাকুর ১৯-২-১০১-১, কৃষ্ণা ২০-২-৯৩-১, অশ্বিন ১৯-৬-৪১-১)

ভারত ২য় ইনিংস: ৩৪.১ ওভারে ১৩১ (জয়সাওয়াল ৫, রোহিত ০, গিল ২৬, কোহলি ৭৬, শ্রেয়াস ৬, রাহুল ৪, অশ্বিন ০, ঠাকুর ২, বুমরাহ ০, সিরাজ ৪, কৃষ্ণা ০*; রাবাদা ১২-৩-৩২-২, বার্গার ১০-৩-৩৩-৪, ইয়ানসেন ৭.১-১-৩৬-৩, কুটসিয়া ৫-০-২৮-০)

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস ও ৩২ রানে জয়ী