নামাজের সামনে দিয়ে গেলে কি গুনাহ হয়

নামাজের সামনে দিয়ে গেলে কি গুনাহ হয়

ছবি: সংগৃহীত

নামাজ মুমিনের মিরাজ (আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ)। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার বিধানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিধান হলো নামাজ। মুমিন মুসলমান যখন নামাজ পড়েন আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেন। কালামুল্লাহ পাঠ করেন। তাই তো পৃথিবীতে আল্লাহর দেওয়া বিধানগুলোর মধ্যে নামাজের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি।

নামাজের মর্যাদা যেমন বেশি নামাজীর মর্যাদাও তেমন বেশি। নিঃসন্দেহে নামাজী ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুনাহের কাজ। 

বিশ্ব নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নামাজী ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত এতে কীরূপ শাস্তি ভোগের আশংকা রয়েছে তাতে, তবে চল্লিশ পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকাও ভালো মনে করতো। বর্ণনাকারী আবুন নাযর বলেন, আমার জানা নেই, হাদিসে চল্লিশের কী অর্থ, চল্লিশ দিন, চল্লিশ মাস, নাকি চল্লিশ বছর! (বোখারি, হাদিস ৫১০, মুসলিম, হাদিস ৫০৭)

কেউ যদি নামাজির বরাবর সামনে থাকে, তাহলে সেখান থেকে ডানে কিংবা বামে চলে যাওয়ার সুযোগ আছে। এটা নামাজের সামনে দিয়ে অতিক্রম করার অন্তর্ভুক্ত নয়। অবশ্য বিনা প্রয়োজনে এমন করা ঠিক নয়। অনুরূপভাবে যদি নামাজরত ব্যক্তির সামনে ‘সুতরা’ থাকে তাহলে তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করা যাবে। যদিও এটাও বিনা প্রয়োজনে করা ঠিক নয়।

কেননা, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, উটের পিঠের কাষ্ঠাসনের অনুরূপ কিছু (সুতরা) যদি মুসল্লির সামনে থাকে, তবে এর বাইরে দিয়ে কারো যাতায়াতে পরওয়া করার কিছু নেই। (ইবনু মাজাহ হাদিস ৯৪০, তিরমিজি, হাদিস ৩৩৫)

যে মসজিদের প্রশস্ততা ৪০ বর্গ হাতের বেশি হয়, তাহলে মুসল্লির দৃষ্টি সেজদার স্থানে থাকলে সাধারণত যে স্থান পর্যন্ত নজরে আসে, যার পরিমাণ মোটামুটি মুসল্লির কাতারসহ সামনের আরো দুই কাতার হয়, তবে ততটুকু জায়গার বাইরে দিয়ে অতিক্রম করা যাবে। কোনো গুনাহ হবে না। ততটুকু জায়গার ভেতর দিয়ে অতিক্রম করলে গুনাহ হবে। আর এর চেয়ে ছোট মসজিদে মুসল্লির সামনে দিয়ে সুতরা ছাড়া অতিক্রম করা যাবে না। (আদ দুররুল মুখতার ১/৬৩৬ হেদায়া ১/১১৮)

হাদিসে আছে- ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻱ ﺍﻟﻤﺼﻠﻲ নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, দৃষ্টি সেজদার স্থানে থাকলে সাধারণত যে স্থান পর্যন্ত নামাজরত ব্যক্তির নজরে অনুভূত হয় ততটুকু জায়গার ভেতর দিয়ে অতিক্রম করা যাবে না। এর বাইরে দিয়ে অতিক্রম করা যাবে।

অনেক মসজিদে ‘সুতরা’ না থাকায় কাপড় ঝুলিয়ে, রুমাল ঝুলিয় সামনে দিয়ে মুসল্লিরা যাতায়াত করেন। এটা সুতরা হিসেবে যথেষ্ট হয় না। তবে বিশেষ ওজরের মুহূর্তে সামনে রাখার মতো কোনো কিছু পাওয়া না গেলে ঐভাবে যাওয়া যাবে। (শরহুল মুনইয়াহ পৃষ্ঠা ৩৬৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৯)

নামাজের জামাত শুরু হয়ে যাবার পর খুব বেশি প্রয়োজনে জামাতে শরিক থাকা মুসল্লিদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েজ আছে। সেই হিসেবে যদি সামনে কাতার খালি রেখে পেছনের কাতারে কিছু মুসল্লি দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে বাকি মুসল্লিদের নামাজ চলা অবস্থায় তাদের সামনে দিয়ে গিয়ে সামনের কাতারে দাঁড়ানো জায়েজ আছে। সুতরাং পেছনের কাতারেও জায়গা থাকলে সামনে বিকল্প রাস্তা না থাকা অবস্থায় মুসল্লিদের সামনে দিয়ে গিয়ে পেছনে দাঁড়ানোতে কোনো সমস্যা নেই।

হজরত  ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সাবালক হবার নিকটবর্তী বয়সে একবার একটি গাধীর উপর আরোহিত অবস্থায় এলাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন মিনায় সালাত আদায় করছিলেন, তার সামনে কোনো দেয়াল না রেখেই। তখন আমি কোনো এক কাতারের সামনে দিয়ে অতিক্রম করলাম, গাধীটিকে বিচরণের জন্য ছেড়ে দিলাম। আমি কাতারের ভেতর ঢুকে পড়লাম কিন্তু এতে কেউ আমাকে নিষেধ করেননি। (বোখারি, হাদিস ৭৬)