জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ইন্টারনেটে যেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন ভোটাররা

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ইন্টারনেটে যেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন ভোটাররা

ফাইল ছবি

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ছয় দিন বাকি। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসায় এর নানা দিক নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে মানুষের মধ্যে। নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্নের উত্তর তারা খুঁজছেন ইন্টারনেটে।

গত কয়েক দিনে গুগলে ট্রেন্ডে মানুষ নির্বাচন সম্পর্কিত বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন।

সবচেয়ে বেশিবার যে প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, নির্বাচনে ভোটার তালিকা দেখার উপায়, ভোট কেন্দ্র জানার উপায়-সহ নানা বিষয়। দেখে নেয়া যাক এমন কিছু প্রশ্ন ও সেগুলোর উত্তর কী।

১. ভোটার তালিকা দেখার উপায় কী?
গুগল ট্রেন্ডে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি করা হচ্ছে সেটি হলো- ভোটার তালিকা দেখার কোনো উপায় আছে কিনা।

এমন প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, অনলাইন বা কোনো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভোটার তালিকা দেখার কোনো সুযোগ নেই।

কারণ বাংলাদেশের ভোটারের সংখ্যা অনেক বলে এতো মানুষের তালিকা অনলাইনে প্রকাশ একটা দুরূহ কাজ।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘১২ কোটি লোকের ভোটার তালিকা প্রকাশ করা কি সম্ভব?’

এছাড়া ভোটারদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তারও একটি বিষয় রয়েছে বলে জানান তিনি।

তবে অনলাইনে পাওয়া না গেলেও ভোট দেয়ার আগেই ভোটার তালিকার তথ্য জানার ব্যবস্থা রয়েছে।

ইসি সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভোটারদের তালিকা প্রতিটি থানা এবং উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন অফিসে রয়েছে।

সেখানে ভোটারদের তালিকা নির্বাচনের আগেই পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে এলাকা ভিত্তিক ভোটাররা তাদের তালিকা সম্পর্কে জানতে পারবেন।

সেটা যদি সম্ভব না হয় তাহলে নির্বাচনের আগেই সাধারণত স্থানীয় প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়িতে তাদের তালিকার নম্বর লিখে পাঠিয়ে দেয়।

আর নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রের বাইরে যেসব প্রার্থী থাকবেন, তাদের কাছে ভোটার তালিকার কপি থাকে। তারাও ভোটারদের তালিকা সম্পর্কে জানিয়ে থাকে বলে জানান আলম।

২. ভোট কেন্দ্র জানার উপায় কী?
ভোটার হিসেবে আপনি কোন ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক কেন্দ্রে না গেলে আপনি ভোট দিতে পারবেন না।

কারণ ভোট দিতে হলে আপনার ভোট কেন্দ্রের নাম এবং ভোটার হিসেবে আপনার ভোট দেয়ার সিরিয়াল নম্বর জানতে হবে।

আপনি কোন ভোট কেন্দ্রে যাবেন তা জেনে নেয়া যাবে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে।

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রতিটি নির্বাচনী আসন ধরে ধরে ভোট কেন্দ্রের তথ্য উল্লেখ করা আছে।

তবে এখান থেকে আপনার কেন্দ্র কোনটি সেটি জানতে হলে আগে জানতে হবে, আপনি কোন আসনের ভোটার এবং ওই আসনের কত নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার।

এটি জানা থাকলে ওই আসনের ভোটকেন্দ্রের তালিকায় আপনার ওয়ার্ডের ভোট কোন কেন্দ্রে হবে সেটি আপনি দেখে নিতে পারবেন।

ভোটকেন্দ্র হিসেবে সাধারণত স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেই ব্যবহার করা হয়।

গত নির্বাচনের সময় এসএমএস এর মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র সম্পর্কে জানার ব্যবস্থা থাকলেও সেই সুযোগটি এই নির্বাচনে নেই।

তবে এবার ভোটকেন্দ্র সম্পর্কিত সব তথ্য আপনি জানতে পারবেন স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট ডট বিডি (smartelectionmanagement.BD) নামে একটি অ্যাপ থেকে।

এই অ্যাপটি চালু করেছে নির্বাচন কমিশন। অ্যাপল-স্টোর বা প্লে-স্টোর থেকে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করে ইন্সটল করা যাবে।

একবার ইন্সটল করার পর জন্মতারিখ এবং ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর দিলে যাবতীয় তথ্য জানা যাবে।

এসব তথ্যের মধ্যে, বর্তমানে কততম পার্লামেন্ট নির্বাচন হচ্ছে, আপনার ভোটার আইডি নম্বর, আপনি কোন ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে পারবেন তার নাম, ভোট কেন্দ্রের ঠিকানা, আপনার ভোট দেয়ার সিরিয়াল নম্বর বা ভোটিং সিরিয়াল নম্বর-সহ বিভিন্ন তথ্য থাকে।

এমনকি আপনি কোন আসনের ভোটার এবং ওই আসনে কোন কোন প্রার্থী কী কী প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন- সে সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যও জেনে নিতে পারবেন এই অ্যাপ থেকে।

৩. বিজিবি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের পাশাপাশি কাজ করবে বিজিবি ও সেনাবাহিনী।

সাধারণ ভোটাররা অনেকেই নেটে সার্চ করে জানতে চাইছেন বিজিবি ও সেনাবাহিনী কবে কোথায় নামানো হবে। নির্বাচনের সময় তাদের ভূমিকা ঠিক কী হবে, সেটাও অনেকেরই প্রশ্ন।

এরই মধ্যে সারা দেশে গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ১১ শ’ ৫১ প্লাটুন বিজিবি নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে বলে বিজিবির সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আরো তিন দিন, অর্থাৎ ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত বিজিবি সারা দেশে মোতায়েন থাকবে।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিজিবির সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায়, মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে বিজিবির সদস্যরা।

এদিকে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আগামী ৩রা জানুয়ারি থেকে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এরপর পরবর্তী সাত দিন অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করবে তারা।

মূলত নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার কাজ করবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ বিষয়ে এরইমধ্যে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে সশস্ত্র বাহিনী।

নির্বাচনে বিজিবি ও সামরিক বাহিনী কেন মোতায়েন করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ভোট যাতে সুষ্ঠু হয় এই জন্য। রাষ্ট্র জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়, এই জন্য মোতায়েন করেছে।’

‘সবাই জানে যে নির্বাচনের সময় বিজিবি, র‍্যাব, সেনাবাহিনী ভোট কেন্দ্রে থাকে। সশস্ত্র বাহিনী থাকে বাহিরে যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে।’

অবশ্য বিজিবি ও সেনাবাহিনী মোতায়েনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় ৩৮৮টি উপজেলায় ৩৫ হাজারের বেশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছি।

আর সীমান্তবর্তী ৮৭টি উপজেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছিল। তখন ছয় দিন মাঠে দায়িত্ব পালন করেছে সেনাবাহিনী।

এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় ১৫ দিনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।

৪. নির্বাচনী আসন সীমানা
দেশের ভোটাররা অনেকেই জানতে আগ্রহী তাদের সংসদীয় কেন্দ্রের সীমানা ঠিক কতটুকু - কিংবা কোন কোন এলাকা তাদের নির্বাচনী আসনের ভেতরে পড়ছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করা হয় ২০২৩ সালের পহেলা জুন তারিখে।

বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশ করা হয় নির্বাচনী আসনগুলোর তালিকা।

এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে একটি খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল।

সেসময় এই তালিকা সম্পর্কে আপত্তি থাকলে তা ১৯ মার্চের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছিল।

৩৮টি আসনের সীমানা নিয়ে আপত্তি আসলে সেগুলোর শুনানির পর সাতটি আসনে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়। বাকিগুলোর সীমানা অপরিবর্তিত রাখা হয়।

এই সিদ্ধান্তের পর জুন মাসের শুরুতেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।

বাংলাদেশ সরকারের প্রেস বা বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট প্রেস এর ওয়েবসাইটে গিয়ে এই সংসদ নির্বাচনের আসনগুলোর সীমানা সম্পর্কে জানা যাবে।
সূত্র : বিবিসি