প্রাথমিক শিক্ষা বেহাল দশা : ঈশ্বরদীর ৬৫ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট, শিক্ষা অফিসে সব পদই শূন্য

প্রাথমিক শিক্ষা বেহাল দশা  : ঈশ্বরদীর ৬৫ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট, শিক্ষা অফিসে সব পদই শূন্য

প্রাথমিক শিক্ষা বেহাল দশা : ঈশ্বরদীর ৬৫ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট, শিক্ষা অফিসে সব পদই শূন্য

পাবনার ঈশ্বরদীর ৬৫ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট, শিক্ষা অফিসে সব পদই শূন্য থাকায় বেহাল দশায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। ৩৩টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক এবং ৩২টিতে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য। শিক্ষকের পাশাপাশি উপজেলা শিক্ষা অফিসে একজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, হিসাবরক্ষক, উচ্চমান সহকারী, হিসাব সহকারী, অফিস সহায়কের পদগুলোও শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।

দীর্ঘদিনেও শিক্ষক নিয়োগ না দেয়ায় বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান ও দাপ্তরিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। একজন শিক্ষক ছুটিতে গেলে বা অসুস্থ হলে পাঠদান বন্ধ রাখার উপক্রম হয়।

প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈশ্বরদীতে ১০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এস প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৯ হাজার। বিদ্যালয়ে ৬৮৭টি পদের বিপরীতে শিক্ষক ৬৫৫ জন। শিক্ষার্থী সংখ্যা অনেক  বেশি। কিন্তু প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেই। অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পালাক্রমে পাঠদান করাতে হচ্ছে। এতে শিক্ষকদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। ফলে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান ব্যাহত ও মূল্যায়ন কাজ করতে সংকটে পড়তে হয়।

উপজেলার চরগড়গড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, ২০১৬ সাল  থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এখনও পদোন্নতি হয়নি। ৪৩২ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক মাত্র চারজন। একজন শিক্ষককে দিয়ে ৪০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করানোর কথা; কিন্তু তাদের ১০৮ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাতে হচ্ছে। ফলে পাঠদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শিক্ষার্থী মূল্যায়নও সঠিক হয় না।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে শিক্ষকদের অবসরে যাওয়া ও কয়েক বছর নিয়োগ না হওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। চলতি বছর আরও কিছু শিক্ষক অবসরে যাবেন। এতে সংকট আরও বাড়বে। এদিকে দীর্ঘদিন বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।

রূপপুর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, আমার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬৭ জন। শিক্ষক সংকটের কারণে দুই শিফটে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করানো হচ্ছে। প্রশাসনিক কাজ সময় মত করা যায় না।

দাশুড়িয়ার মানিকৈড় গ্রামে ২০১৪ সালে স্থাপন করা হয় জবেদা খাতুন সাবান আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার কাল থেকেই এখানে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। চারজন শিক্ষক ১২০ শিক্ষার্থীকে পাঠ দান করাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

একই অবস্থা কদিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও। এ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল হক বলেন, নিজেকেই প্রশাসনিক কাজ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে হচ্ছে। শূন্য পদের বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে জানানো হয়েছে।

শিক্ষক আমিরুল ইসলাম জানান, পাঁচ-ছয় বছর ধরে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি বন্ধ। নতুনভাবে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় পর্যায়ক্রমে ঈশ্বরদীতে শিক্ষক সংকট বেড়েই চলেছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদের তালিকা কওে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়েও পাঠানো হয়েছে। শিগগির সংকটগুলো সমাধান হয়ে যাবে।