রামমন্দিরের উদ্বোধনের দিনে সংহতির বার্তা দিতে রাজপথে মমতা

রামমন্দিরের উদ্বোধনের দিনে সংহতির বার্তা দিতে রাজপথে মমতা

রামমন্দিরের উদ্বোধনের দিনে সংহতির বার্তা দিতে রাজপথে মমতা

সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা নিয়ে আজ পথে নামছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সোমবার কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিয়ে হাজরা থেকে এই সংহতি মিছিল শুরু করবেন তৃণমূলনেত্রী। যার পুরোভাগে কোনো রাজনৈতিক নেতা নয়, থাকবেন সমস্ত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। পুরোহিত, মোয়াজ্জেম, শিখ গুরু, গির্জার ফাদার প্রত্যেকে সামনে থেকে এই মিছিলকে নেতৃত্ব দেবেন। মিছিল শেষ হবে পার্ক সার্কাসে।

কয়েক হাজার মানুষ এই মিছিলে অংশ নিতে চেয়েছিলেন। তাদের বড় অংশকে মমতা প্রথমেই পার্ক সার্কাস ময়দানে পৌঁছে যেতে বলেছেন। সেখানে যে মঞ্চ তৈরি হয়েছে তাকেও সর্বধর্ম সমন্বয়ের রূপ দেয়া হয়েছে। সেখানে যে জনসভায় বক্তব‌্য রাখবেন মমতা ব্যানার্জি, সেই মঞ্চেও কোনো রাজনৈতিক নেতা থাকবেন না।

এই সংহতি মিছিলের প্রাক্কালে রোববার নিজের এক্স হ‌্যান্ডলে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়ে পোস্ট করেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি।

অভিষেক লিখেছেন, ‘মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গুরুদ্বার যা-ই হোক, ঘৃণা, হিংসা ও নিরীহ মানুষের লাশের উপর তৈরি কোনো উপাসনাস্থল মেনে নিতে আমার ধর্ম আমায় শেখায়নি।’ রামমন্দিরকে সামনে রেখে যেভাবে দেশজুড়ে প্রচারে নেমেছে বিজেপি, তার সামনে সোশ‌্যাল মিডিয়ায় অভিষেকের এই বার্তা অত‌্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

আজ সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা কিভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরবেন মমতা? অযোধ‌্যায় আজ রামমন্দির প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি। সেই কর্মসূচির জন‌্য দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দেশজুড়ে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা হয়েছে। সেই ক্ষণ শেষ হওয়ার আগে কোনো কর্মসূচি নয়। দুপুর তিনটা থেকে নিজের কর্মসূচি শুরু করছেন তৃণমূলনেত্রী।

নিজেই ইতোপূর্বে সে কথা জানাতে গিয়ে বলেছিলেন, রামমন্দিরের উদ্বোধন নিয়ে তিনি কিছু বলবেন না। বলেছিলেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আমি সর্বধর্ম সমন্বয়ের মিছিল করছি। সেখানে থাকবেন সমস্ত ধর্মের মানুষ। তাদের প্রত্যেককে শ্রদ্ধা জানিয়ে হবে আমাদের কর্মসূচি।’ এই কর্মসূচিতে ইতোমধ্যে বাউল, মুরশিদি ও ফকিরি গানের একাধিক গোষ্ঠী ও শিল্পীরাও অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন। থাকবেন পশ্চিমবঙ্গ সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্টের সদস‌্যরা।

কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিয়ে হাজরা মোড় থেকে সংহতি মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন মুখ‌্যমন্ত্রী। কালীঘাটের পর তিনি বালিগঞ্জের গড়চায় গুরুদ্বারে শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন। ফিরে আবার মিছিলে অংশ নিয়ে বালিগঞ্জ ফাঁড়ির রাস্তা ধরে সোজা আসবেন পার্ক সার্কাস। সেখানে কাছাকাছির মধ্যে একটি গির্জা ও মসজিদে শ্রদ্ধা জানাবেন। এছাড়া ওইদিন রাজ্যের সমস্ত মসজিদ, গির্জা এবং গুরুদ্বারে যাতে প্রার্থনা হয় তারও ব‌্যবস্থা করা হচ্ছে। নিজে বেশ কিছু জায়গায় পুজো পাঠাচ্ছেন মমতা। কলকাতায় মহামিছিলের পাশাপাশি জেলায় ও ব্লকে একইভাবে সর্বধর্ম সমন্বয়ের মিছিল হবে। স্থানীয় সেইসব মিছিলেও সেখানকার সর্বধর্মের প্রতিনিধিরা পা মেলাবেন।

মমতা ব্যানার্জি দীর্ঘদিন বাদে কলকাতার রাস্তায়। অসংখ‌্য সাধারণ মানুষ সেই মিছিলে পা মেলাবেন। তবে তার দলের কর্মীরাও অনেক দিন পর তাকে সামনে পাবেন। ফলে তারাও সর্বশক্তি দিয়ে নামবেন। তবে এর সাথেই নেত্রী মনে করিয়ে দিয়েছেন, কোথাও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে না হয় সেদিকে সর্বস্তরের নেতৃত্বকে নজর রাখতে হবে। নজর রাখবেন তিনি নিজেও। রামমন্দিরকে সামনে রেখে যেভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মীয় রাজনীতির অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা, তার সামনে তৃণমূলনেত্রীর এই সংহতি মিছিল থেকে যে অন‌্য তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা উঠে আসবে তা স্পষ্ট।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন