মৃত্যুশয্যায় ব্যক্তির জন্য স্বজনদের করণীয়

মৃত্যুশয্যায় ব্যক্তির জন্য স্বজনদের করণীয়

ছবি: সংগৃহীত

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, كُلُّ نَفْسٍ ذَآىِٕقَةُ الْمَوْتِ ؕ  উচ্চারণ: ‘কুল্লু নাফসিন জাইকাতুল মাউত’। অর্থ: ‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে’। অর্থাৎ, মৃত্যু অনিবার্য একটি বিষয়। যারাই জন্মগ্রহণ করবে, তাদেরই মৃত্যুবরণ করতে হবে। আর তাই নিম্নে মৃত্যুশয্যায় এবং মৃত ব্যক্তির জন্য স্বজনদের করণীয় ও দোয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুশয্যায় এবং মৃত ব্যক্তির জন্য স্বজনদের করণীয় ও দোয়া দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন-

মৃত্যুশয্যায় শায়িত ব্যক্তির চেহারা কিবলামুখী করে দেওয়া এবং তার সামনে বসে তাকে শুনিয়ে কালিমা পড়তে থাকা। তবে তাকে কালিমা পড়ার হুকুম দেবে না এবং তার পাশে বসে সূরা ইয়াসিন পড়া। কালিমা একবার পড়ে নিলে তারপর যদি দুনিয়াবী কোনো কথা না বলে তাহলে দ্বিতীয় বার কালিমার তালকিন না করা। (মুস্তাদরাক১৩০৫, মুসলিম ৯১৬, আবু দাউদ ৩১২১)

নিজের মৃত্যু নিকটবর্তী মনে হলে এই দোয়া পড়তে থাকা- اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاَ لْحِقْنِيْ بِالرَّفِيْقِ الْاَعْلٰى উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়ার হামনি ওয়াল হিকনি বির রফিকিল আলা’। (তিরমিজি ৩৪৯৬, আবু দাউদ ৩১২১)

যখন রূহ বের হচ্ছে বলে অনুভব হতে থাকে, তখন এই দোয়া পড়া- اَللّٰهُمَّ اَعِنِّيْ عَلٰى غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَ سَكَرَاتِ الْمَوْتِ  উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আয়িন্নি আলা গমারাতিল মাওতি ওয়া সাকরাতিল মাওত’। (তিরমিজি ৯৭৮)

কোন মুসলমানের মৃত্যু সংবাদ শ্রবণে এই দোয়া পড়া- إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ اللهُمْ أَجْرْنِي فِي مُصِيبَتِي، وَأَخْلِفَ لِي خَيْرًا مِنْهَا উচ্চারণ: ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফলি খাইরামমিনহা। অর্থ: ‘নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য। এবং আমরা তারই দিকে ফিরে যাব। হে আল্লাহ! আমাকে আমার এ বিপদে সাওয়াব দান করুন। এবং এর চেয়ে উত্তম বস্তু বিনিময়ে দান করুন’। (মুসলিম ৯১৮)

মৃত ব্যক্তির চক্ষুদ্বয় ও মুখ খোলা থাকলে বন্ধ করে দেওয়া। প্রয়োজন বোধে মাথার ওপর ও থুতনীর নীচ দিয়ে কাপড় বেঁধে দেওয়া। চেহারা দেখা, আত্মীয়-স্বজনদের আসা, জানাজায় লোক কম হবে এসব কথা বলে দাফনে বিলম্ব করা নিষেধ। (মুসলিম ৯২০)

মৃত ব্যক্তিকে খাটে রাখার সময় বা মৃত ব্যক্তির লাশবাহী খাট কাঁধে উঠানোর সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলা। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ ১২০৬২) যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি মৃত ব্যক্তিকে গোসল, কাফন ও জানাজার নামাজ সম্পন্ন করে নিকটস্থ গোরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করা। দাফনের জন্য বিনা অপারগতায় দূরের গোরস্থানে বা এক শহর থেকে অন্য শহরে নেওয়া মাকরূহ। (আবু দাউদ ৩১৮, ৩১৬৫)

মৃত ব্যক্তির লাশ কবরে রাখার সময় এই দোয়া পড়া- باسْمِ اللَّهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللَّهِ (আবু দাউদ ১০৪৬, মুসনাদে আহমাদ ৪৯৮) কবরে লাশ পুরোপুরি ডান কাতে শোয়ানো অর্থাৎ তার চেহারা ও সীনা কিবলামুখী করে দেওয়া। এর জন্য কবরের তলদেশে পশ্চিম পার্শ্বে উত্তর দক্ষিণে লম্বাভাবে এক হাত পরিমাণ গর্ত করতে হবে অথবা পিঠের পেছনে ও মাথার নীচে মাটির চাকা দিয়ে ডান কাতে শোয়াতে হবে। মৃত ব্যক্তিকে কবরে চিত করে শুইয়ে শুধু তার চেহারা কিবলামুখী করে দিলেই সুন্নাতের অনুসরণ হবে না। (মুস্তাদরাক ১৯৭)

আত্মীয়-স্বজনদের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তির পরিবার পরিজনের জন্য প্রথম দিন খানার ব্যবস্থা করা উচিত। মৃত ব্যক্তির ওপর যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব ছিল, শুধু তারাই এ খানা খাবে। আগন্তুক মেহমানগণ উক্ত খানায় শরিক হবে না। বরং তারা সান্ত্বনা দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যাবে। মৃত ব্যক্তির লোকদের ওপর বোঝা সৃষ্টি করবে না। (বুখারি ৫৪১৭, মুসনাদে আহমাদ ৯০৫)

কবর খুব বেশি উঁচু না করা এবং পাকা না করা। (মুসলিম ৯৬৯, ৯৭০)। কবরের ওপর পানি ছিটিয়ে দেওয়া। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৬৪৮১) মৃত ব্যক্তির দাফনকার্য সম্পন্ন করার পর রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করতেন এবং অন্যদেরকেও মাগফিরাতের দোয়া করতে বলতেন। বিশেষত মুনকার নাকীর ফিরিশতাদ্বয়ের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে সে যেন দৃঢ়পদ ও অবিচল থাকতে পারে, সে জন্য দোয়া করতে বলতেন। (আবু দাউদ ৩২২১)

কবরের মাথার দিকে এক ব্যক্তি সূরা বাকারার শুরু থেকে مُفۡلِحُوۡنَ পর্যন্ত এবং পায়ের দিকে অপর ব্যক্তি آمَنَ الرَّسُولُ থেকে শেষ পর্যন্ত তেলাওয়াত করবে। কবরের চার কোণায় খুঁটি গাড়া এবং চার কোণায় চার কুল পড়ার কোনো ভিত্তি পাওয়া যায় না। (শুআবুল ঈমান ৮৮৫৪)