মিয়ানমার ইস্যুর সঙ্গে হাসিনা সরকারের সম্পর্ক আছে কি না, প্রশ্ন বিএনপি-র

মিয়ানমার ইস্যুর সঙ্গে হাসিনা সরকারের সম্পর্ক আছে কি না, প্রশ্ন বিএনপি-র

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন

বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি আজ (বুধবার) একটি সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতির সাথে ঢাকার শেখ হাসিনা সরকারের কোনও সম্পর্ক আছে কি না, এমন প্রশ্ন তুলেছে।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “কী ঘটতে যাচ্ছে, এর অন্তরালে কী আছে? এর সাথে যারা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে, তার সাথে সরকারের কোনও গোপন সম্পর্ক আছে কি?""যদি না থাকে তবে নিশ্চয়ই সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং জনগণের কাছে দৃশ্যমান করবে। কারন মিয়ানমারের মতো দেশ এই শক্তি ও সাহস ইতিপূর্বে কোনও দিন পায় নাই, আজকে কেন পায়?”

বুধবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমার ইস্যুতে সরকারের পদক্ষেপ যথাযথ কি না, এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে।তিনি বলেন, “এক দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে আরম্ভ করে প্রতিনিয়ত বিজিবি সদস্য, দেশের জনগণকে হত্যা করছে, অন্যদিকে পূর্ব দিক থেকে মিয়ানমারের গুলি, কয়েকজন আহত ও নিহত হয়েছে।"

"ঝাঁকে ঝাঁকে সেনা পলায়ন ও বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ, এটা নিয়ে আমাদের শুধু নয় আপনাদেরকেও ভাবতে হবে”, মন্তব্য করেন মি. রায়।এর আগে মঙ্গলবার, মিয়ানমার ইস্যুতে সরকারের 'নতজানু নীতি'র কারনে সীমান্ত অরক্ষিত রয়েছে - বিএনপি নেতাদের এমন মন্তব্যকে 'হাস্যকর' বলে দাবি করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।তিনি বলেছিলেন, "বাংলাদেশ সরকারের নীতির কারনে আরাকান আর্মি আর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যুদ্ধ হচ্ছে এগুলো পাগলের প্রলাপ ছাড়া কিছু নয়।"

এদিকে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে চলমান সংঘর্ষে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ বা বিজিপির এখনও পর্যন্ত দুইশ’র বেশি সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে।সে দেশের চলমান সংঘর্ষে মর্টার শেল ছোঁড়ার ঘটনায় বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় দুইজন মানুষ নিহত হয়েছে। কয়েকজন আহতও হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে যা বলেছে বিএনপি

গত ৭ই জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচন বর্জন করেছিলো বিএনপি।তবে, নির্বাচনের একমাস পর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির দাবি, রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ সরকার।বিএনপি নেতাদের কথায়, "বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ মুক্তি চায়।"

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “এ নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা বা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ছিলো না। এটি ছিলো জাতির সঙ্গে সহিংস প্রতারণা।""যার উদ্দেশ্য অবৈধভাবে, অনৈতিকভাবে ও অসাংবিধানিকভাবে শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখা।”২০১৪ ও ২০১৮ সালের আলোকে এবারের নির্বাচনও 'ডামি নির্বাচন' হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।

জনগণের ভোটাধিকার পুন:প্রতিষ্ঠা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিশ্চিত করে শান্তিপূর্ণ ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি আবারও একটি নির্বাচিত ও জবাবদিহিতামূলক সরকার স্থাপন করবে”।তবে বিএনপির বর্তমান আন্দোলন কোথায়, এমন প্রশ্নে মি. রায় বলেন, “আমরা চলমান আন্দোলনে আছি, আন্দোলনের গতিবিধি একেক সময়ে একেক দিকে রূপ নেয়। নিশ্চয়ই দেখতে পাবেন ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা কি!”মিয়ানমার ইস্যুতে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিএনপির এই নেতা দেশের মানুষকে প্রতিবাদী হওয়ার আহবান জানান।

তিনি বলেন, “দেশের মানুষকে প্রতিবাদী হতে হবে, যদি কোন ষড়যন্ত্র থাকে অথবা যদি নাও থাকে আমরা যেভাবে চারিদিক থেকে অ্যাটাক হচ্ছি, এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।”“এই ব্যর্থ সরকার নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি অন্যত্র সরানোর জন্য সরকার ইতিপূর্বেও একের পর এক ইস্যু তৈরি করেছে।"

"এই ইস্যু এককভাবে করছে, নাকি যৌথভাবে করছে? যেভাবে সরকারে আসছে ...” বলে মন্তব্য করেন মি. রায়।

এসব ঘটনার সাথে সরকারের কোন সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, এমনও প্রশ্ন তোলেন মি. রায়। নতুবা সরকারকে 'যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনগণের কাছে দৃশ্যমান করার' আহবান জানান।মিয়ানমার ইস্যুতে বিএনপি নেতাদের করা মন্তব্য 'আবোল তাবোল উক্তি' ছাড়া কিছু নয় বলে মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, "বিএনপির নির্বাচনে না আসা, আন্দোলনে ব্যর্থতা সব মিলিয়ে তাদের মধ্যে অনেক হতাশা। এসব হতাশা থেকে তারা আবোল তাবোল উক্তি দিচ্ছে।"‘সরকারের বিরোধিতা করে কিছু না কিছু বলতে হবে। সেক্ষেত্রে সরকারের খারাপটাই বলতে হবে। এগুলোর কোনও বাস্তবতা নেই, এগুলো নিয়ে কোন মাথাব্যথাও নেই", জানিয়েছিলেন মি. কাদের।

এরই মধ্যে মঙ্গলবারই বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশী এক নারী-সহ দুইজন নিহত হওয়ার ঘটনায় ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে ডেকে প্রতিবাদ জানায়।সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতার অভিযোগ, "আওয়ামী লীগ সরকার নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় অবৈধ অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক সুবিধা দিয়ে ভারত, চীন ও রাশিয়ার সমর্থন আদায় করেছে।"

এদিকে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ২৫ হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং কারাগারে ১১ জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় বিএনপির এই সংবাদ সম্মেলনে।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, "ক্ষমতার মোহে অন্ধ আওয়ামী লীগ দানবীয় অপশক্তিতে পরিণত হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনকে ঘৃণ্য রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ধারণ করেছে।"নির্বাচনের আগে একটানা আন্দোলন করেছে বিএনপি। টানা কর্মসূচির শুরুটা ছিল ২০২৩ সালের অগাস্টে।শুরুতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, বিভাগীয় সমাবেশ। তারপর এলো রোডমার্চ। নির্বাচনের আগের দুই মাসে কখনো হরতাল, কখনো অবরোধ। কখনো হরতাল-অবরোধ দুটোই।নির্বাচনের আগে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচিও আহবান করেছিলো।

সে সময় জনগণকে সরকারকে কর-খাজনা না দেওয়া, দলীয় কর্মীদের আদালত বর্জনের আহবান জানানো হয়েছিল। বিএনপি-পন্থী আইনজীবীরা আদালত বর্জন কর্মসূচিও পালন করেছিলেন।যদিও ঘোষিত এসব কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির মধ্যেই ছিল বিস্ময়। ২৮শে অক্টোবর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরের মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর-সহ শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতা এখনো জামিন পাননি।কিন্তু নির্বাচনের পরে নতুন করে আর বড় কোনও কর্মসূচি নেই দলটির।

 

সূত্র : বিবিসি