জমজমাট পাবনার বইমেলায় যেন প্রাণের স্পন্দন

জমজমাট পাবনার বইমেলায় যেন প্রাণের স্পন্দন

জমজমাট পাবনার বইমেলায় যেন প্রাণের স্পন্দন

শনিবার ছিল একুশে বই মেলার ১০ম দিন। সকাল থেকেই ঝকঝকে রোদ। বাড়ছিল বই প্রেমীদের আনাগোনা।শুরুটাই বলে দিচ্ছিল আজ জমবে। বেলা বড়ার সাথে মানুষ বাড়তে থাকে। নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষে জমজমাট হয়ে ওঠে পাবনা বইমেলা প্রাঙ্গণ।

জেলা শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মাসব্যাপী এ মেলার আয়োজন করেছে ১৩৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী গণগ্রন্থাগার অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরী। মেলায় বই কেনা- বেচার পাশাপাশি চলছে বই নিয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ফলে ছুটির দিনটা বেশ ভালোই কেটেছে শহরবাসীর। অন্যদিকে ভালো বিক্রিতে হাসি চওড়া হয়েছে বই ব্যবসায়ীদের।

আয়োকরা জানান, মেলায় ঢাকার প্রথমা প্রকাশন, পাবনার মহিয়সী প্রকাশনী, পাঠাক আড্ডা, পাঠশালা এবং বিকিকিনি মাটসহ বিভিন্ন প্রকাশনী ও পুস্তক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের ৩৫ টি স্টল রয়েছে। প্রতিদিন বেলা ১১ টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ বইপ্রেমীদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, প্রধান ফটক থেকে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ মানুষে ঠাঁসা। কেউ বই কিনছেন,কেউবা আড্ডায় মেতে আছেন। অনেকে আবার মেলা মে র সামনে বসে উপভোগ করছেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

ভীড় ঠেলে স্টলে স্টলে বই খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন শিক্ষক গোলাম হাসনায়েন। তিনি বলেন, ‘মানুষের ভিড়ে অতিষ্ঠ হলেও, প্রাণ ভরে যাচ্ছে। বইয়ের প্রতি মানুষের প্রেম বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে।’

 মেলায় নতুন বই এসেছে জেলা শহরের কবি ছিফাত রহমানের। একটি স্টলে দাঁড়িয়ে তিনি অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন। ছিফাত রহমান নিউ এজকে বলেন, বইমেলা যে প্রাণের মেলা এই ভিড়ই সেটা বলে দিচ্ছে। মানুষ বই কিনছে, বই পড়ছে। এ দৃশ্য দেখেই প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে।’প্রথমা প্রকাশনীর স্টল ব্যবস্থাপক লিও শাওন বলেন, এবার মেলায় নতুন বই বেশি এসেছে। তাই বিক্রিও ভালো। অন্যদিনের তুলনায় ছুটির দিনগুলিতে বেশি মানুষ মেলায় আসছে। বিক্রিও বেশি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বইমেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শিবজিত নাগ বলেন, জেলাবাসীকে বইয়ের প্রতি আগ্রহী করতেই প্রতি বছর মাসব্যাপী বই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। মানুষ এতে সাড়া দিচ্ছেন, বই কিনছেন। এতে আমাদের আয়োজন সার্থক বলে মনে করছি।

মাতৃভাষা দিবসের এ দিনে মেলায় বেশিরভাগ মানুষই এসেছিলেন ফতুয়া,পাঞ্জাবি ও শাড়ি পরে। অনেকের পোশাকে ছিল বর্ণমালার ছাপ। নতুন করে স্টলগুলোও সাঁজানো হয়েছিল বর্ণমালায়। আগতদের অনেকে আবার ভ্রাম্যমান আঁকিয়েদেও দিয়ে হাতে, মুখে শহীদ মিনার ও বর্ণমালা আঁকিয়ে নিচ্ছিলেন।

পাবনা জেলা শহরের ১২৯ বছরে গণগ্রন্থাগার অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরীর উদ্যোগে মাসব্যাপী এ বইমেলার আয়োজন করেছে বইমেলা উদযাপন পরিষদ। কথা হয় অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরীর মহাসচিব আব্দুল মতীন খানের সঙ্গে। তিনিও মানুষের উপস্থিতি দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। বলেন, জেলাবাসীকে বই প্রেমী করতেই আমাদের এ আয়োজন। দিনে দিনে মেলায় মানুষের উপস্থিতি বাড়ছে। সবাই বই কিনছে। এতে আমরা আনন্দিত।

মেলায় ২০ টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। আনন্দঘন পরিবেশে মোড়ক উন্মোচনের পরে তাদের অনুভুতি ব্যক্ত করেন লেখকেরা।

যাদের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয় তারা হলেন-সাবেক আইজিপি শফিকুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, ডা. মোখলেস মুকুল, শিক্ষক আদ্যনাথ ঘোষ, আসাদুর রহমান, রীতা রায়, ড. নির্মল বেরা, মঙ্গল প্রসাদ মাইতি, রহিমা খাতুন, কোহিনুর বেগম শেফালী, মধুসুধন মজুমদার, মানিক মজুমদার, পুলক রায়, তারেক খান, হাবিবুর রহমান, ডা. শতাব্দী ঘোষ, হামিদা বানু মৌসুমী ও সালেহা খাতুন।

 লেখক ও কবিবৃন্দ বলেন, প্রকৃতি পাঠ, জীবন পাঠ, বোধকে শানিত করা ও মুক্তচিন্তার বিষয়টি প্রতিটি লেখকের  ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজন। একজন লেখককে অনেক উদার ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন হতে হবে। পাঠকের  চোখে তার বইটি যেমন ভালো; তেমনি সে যেনো প্রকৃতপক্ষে একজন ভালো মানুষও হয়।

অনুষ্ঠান ও সভা পরিচালনা করেন পাবিপ্রবির শিক্ষক ড. মোঃ হাবিবুল্লাহ ও এড. মোশফেকা জাহান কনিকা। মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা শেষে সঙ্গীত ওস্তাদ শফিক উদ্দিন আহমেদের পরিচালনায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন সঙ্গীত বিদ্যাবীথির শিল্পীবৃন্দ। এর আগে বিকালে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রলয় চাকীর সার্বিক তত্বাবধায়নে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সমীর মজুমদার, জয়ন্তী সরকারসহ শিল্পীবৃন্দ। এছাড়াও সাবিয়া সুলতানা সোনিয়ার পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে ললিত কলা কেন্দ্র ইফার শিল্পীবৃন্দ। সঙ্গীত বিদ্যা বীথির সঙ্গীত শিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশনা ও ললিত কলা কেন্দ্র ইফার শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনা ছিল দর্শকমুগ্ধ। অসংখ্য দর্শক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।