ইবিতে ফের গণরুমে নবীন শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ

ইবিতে ফের গণরুমে নবীন শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ

ইবিতে ফের গণরুমে নবীন শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আবারো নবীন শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের সময় বিবস্ত্র করে অঙ্গভঙ্গি করানোসহ বিভিন্ন শারীরিক নির্যাতন করা হয়। গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ গণরুমে (১৩৬ নম্বর কক্ষ) এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী জানান, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুদাচ্ছির খান কাফি ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাগরসহ কয়েকজন তাকে নির্যাতন করে। অভিযুক্তরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী।

ভুক্তভোগী ও তার সহপাঠীদের সূত্রে জানা যায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে অভিযুক্তরা পরিচয়পর্বের নামে ভুক্তভোগীকে ওই কক্ষে ডেকে নেয়। একপর্যায়ে বাবা মা তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এসময় তারা ভুক্তভোগীকে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করে। এসব করতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে রড দিয়ে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক উলঙ্গ করে টেবিলের উপর দাঁড় করিয়ে রাখে। উলঙ্গ অবস্থায় সিনিয়ররা তাকে পর্নোগ্রাফি দেখতে বাধ্য করে বলে জানা গেছে।

এছাড়াও এসময় তাকে নাকে খত দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন করে অভিযুক্তরা। রাত ১২টা থেকে প্রায় ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে এ নির্যাতন। এসময় তাকে ভয় দেখিয়ে তার বিছানাপত্র বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। অভিযুক্তরা নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানালে আরো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখী হতে হবে হুমকি দেন।

এদিকে ঘটনার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের ডেকে কথা বলে। এছাড়া গণরুমে সবাইকে ডেকে বিশেষ নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোহাম্মদ সাগর বলেন, ‘এ রকম কোন ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’ আরেক অভিযুক্ত কাফিকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, ‘হলে যারা থাকে সবাই ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে যায়। কিন্তু কারো ব্যক্তিগত কাজের দায় সংগঠন নেবে না। ঘটনা শোনার পর আমি ইতোমধ্যেই ভুক্তভোগীর জন্য হলে একটি সিটের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা সবসময় ভুক্তভোগীর পাশে আছি।’

এ বিষয়ে লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। এ বিষয়ে হলের ছাত্রলীগেরে নেতারা আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। অভিযোগ সত্য হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘বিষয়টি শোনার পর একজন সহকারী প্রক্টরকে খোঁজ নিতে বলেছি। এছাড়া এটা যেহেতু হলের বিষয় তাই হল প্রভোস্টকেও খোঁজ-খবর নিতে বলেছি। তিনি আমাদের কিছু জানালে অথবা ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। হাইকোর্টের নির্দেশের পর আমরা র‌্যাগিং নিয়ে শক্ত অবস্থানে আছি।’

প্রসঙ্গত, এর আগেও গত বছরের জুনে শাখা ছাত্রলীগের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে লালন শাহ হলের নবীন এক ছাত্রকে ‘বিবস্ত্র করে’ র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। পরে শাখা ছাত্রলীগ সম্পাদকসহ ছাত্রলীগ নেতারা ডেকে কথা বলার পর ভুক্তভোগী অভিযোগ তুলে নেয়। বিষয়টি নিয়ে র‌্যাগিং প্রতিরোধ সেল থেকেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এছাড়া গত বছরের ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি ফুলপরী খাতুন নামের এক নবীন ছাত্রীকে র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় হয়। এঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের এ সহসভাপতি ও পাঁচ কর্মীকে বিশ^বিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়।