ফিলিস্তিনি ভূমি দখলের বিষয়ে ইসরাইলের শুনানি শুরু জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে

ফিলিস্তিনি ভূমি দখলের বিষয়ে ইসরাইলের শুনানি শুরু জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে

ফিলিস্তিনি ভূমি দখলের বিষয়ে ইসরাইলের শুনানি শুরু জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে

৫৭ বছর ধরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভূমি ইসরায়েলের দখল করার বৈধতা নিয়ে সোমবার জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে ঐতিহাসিক শুনানি শুরু হয়েছে।জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অনুরোধে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে আইনি যুক্তিতর্ক ও শুনানি শুরু হওয়ার পর ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিরা প্রথম বক্তব্য রাখবেন।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আদালতের গ্রেট হল অব জাস্টিসে মামলাটি শুরু হলেও অধিকৃত পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা ও পূর্ব জেরুজালেমকে সংযুক্ত করে ইসরায়েলের অবাধ নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলোও উল্লেখ করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনি আইনি দল আন্তর্জাতিক বিচারক প্যানেলকে বলবে যে ইসরায়েল আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেছে। তারা দখলকৃত বিশাল ভূখণ্ড এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার হরণ করেছে এবং জাতিগত বৈষম্য ও বর্ণবাদী ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে।ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতিসংঘের সংগঠন বিভাগের প্রধান ওমর আওয়াদাল্লাহ বলেন, 'আমরা আদালতের কাছ থেকে নতুন কথা শুনতে চাই।’

সোমবার ফিলিস্তিনিদের আদালতে ভাষণ দেওয়ার পর নজিরবিহীন ৫১টি দেশ ও তিনটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বক্তব্য রাখবে। এ বিষয়ে মতামত জানাতে কয়েক মাস সময় নিতে পারে আদালত।শুনানির সময় ইসরায়েলের কথা বলার কথা নয়, তবে তারা লিখিত বিবৃতি জমা দিতে পারে।

হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক এবং ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো ইউভাল শানি বলেন, শান্তি চুক্তি না থাকায় ইসরায়েল নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে চলমান দখলদারিত্বকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করবে।

তারা হামাসের নেতৃত্বে ৭ অক্টোবরের হামলার দিকে ইঙ্গিত করতে পারে। দক্ষিণ ইসরায়েল জুড়ে ওই হামলায় ১২০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে ওই অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়।

তবে ফিলিস্তিনি ও নেতৃস্থানীয় মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর যুক্তি হলো, এই দখলদারিত্ব আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থার চেয়েও অনেক বেশি। তারা বলছেন, এটি একটি বর্ণবাদী ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়েছে। এর মাধ্যমে অধিকৃত ভূমিতে বসতি নির্মাণের মাধ্যমে উৎসাহিত করা হয়েছে, যা ফিলিস্তিনিদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেয় এবং জর্ডান নদী থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত ইহুদি আধিপত্য বজায় রাখতেই করা হয়েছে। এদিকে ইসরায়েল বর্ণবাদের যেকোনো অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকা দখল করে নেয় ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য তিনটি ভুখণ্ডই চায়। ইসরায়েল পশ্চিম তীরকে বিতর্কিত অঞ্চল বলে মনে করে, যার ভবিষ্যৎ আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হওয়া উচিত।

পর্যবেক্ষক গ্রুপ পিস নাউয়ের মতে, তারা পশ্চিম তীর জুড়ে ১৪৬টি বসতি নির্মাণ করেছে, যার মধ্যে অনেকগুলো পুরোপুরি উন্নত শহরতলি এবং ছোট শহরগুলোর অনুরূপ। এসব বসতিতে পাঁচ লাখেরও বেশি ইহুদি বসবাস করে এবং প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনি ওই অঞ্চলে বসবাস করে।

ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেমকে সংযুক্ত করে এবং পুরো জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে। পূর্ব জেরুজালেমে নির্মিত বসতিগুলোতে অতিরিক্ত দুই লাখ ইসরায়েলি বসবাস করে। যেগুলোকে ইসরায়েল তাদের রাজধানীর প্রতিবেশী হিসেবে বিবেচনা করে। শহরের ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা নানা বৈষম্যের মুখোমুখি হয়, যা তাদের পক্ষে নতুন বাড়ি তৈরি করা বা বিদ্যমান বাড়িগুলো সম্প্রসারণ করা কঠিন করে তোলে।

ইসরায়েল ২০০৫ সালে গাজা থেকে তার সমস্ত সৈন্য ও বসতি স্থাপনকারীদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। তবে অঞ্চলটির আকাশসীমা, উপকূলরেখা ও জনসংখ্যা নিবন্ধনের ক্ষেত্রে তাদের নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রেখেছিল। ২০০৭ সালে ফিলিস্তিনি শসস্ত্র গোষ্ঠী হামাস গাজার ক্ষমতা দখল করলে সেখানে অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল ও মিসর।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এসব বসতিকে অবৈধ বলে মনে করে। শহরের সবচেয়ে স্পর্শকাতর পবিত্র স্থান পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দেয়নি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।ইসরায়েলি নীতি নিয়ে আদালতকে পরামর্শমূলক মতামত দিতে বলার ঘটনা এটাই প্রথম নয়।

২০০৪ সালে তারা বলেছিল, পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরের কিছু অংশের মধ্য দিয়ে ইসরায়েল যে বিচ্ছিন্ন বেষ্টনী নির্মাণ করেছে তা 'আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী'। একই সঙ্গে ইসরাইলকে অবিলম্বে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা। ইসরায়েল এই রায় উপেক্ষা করেছে।

এ ছাড়া গত মাসের শেষের দিকে আদালত গাজায় তাদের অভিযানে মৃত্যু, ধ্বংসযজ্ঞ ও যেকোনো ধরনের গণহত্যা ঠেকাতে ইসরাইলকে সম্ভাব্য সব কিছু করার নির্দেশ দেয়। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলার প্রাথমিক পর্যায়ে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে, যে অভিযোগ ইসরায়েল অস্বীকার করেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরে গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের নীতিকে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু শাসনের বর্ণবাদী শাসনের সঙ্গে তুলনা করেছে, যা ১৯৯৪ সালে শেষ হওয়ার আগে বেশিরভাগ কৃষ্ণাঙ্গকে "স্বদেশে" আটকে রেখেছিল।

সূত্র : ইউএনবি