ইসলামে ভাষা শহিদদের মর্যাদা ও সম্মান

ইসলামে ভাষা শহিদদের মর্যাদা ও সম্মান

ছবি: সংগৃহীত

‘শহিদ’ আরবি শব্দ, যা ‘শাহাদত’ শব্দমূল থেকে গৃহীত। আভিধানিক অর্থ সাক্ষী, প্রত্যক্ষকারী। ইসলামে শহিদদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।

শহিদ ২ প্রকার। (এক) ইসলামের জন্য আল্লাহর পথে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন যারা অথবা যাদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। (দুই) কোনো মহামারিতে, পানিতে ডুবে, অগ্নিদগ্ধ হয়ে অথবা কোনো ভবন বা স্থাপনা ধসে তার নিচে চাপা পড়ে যদি কোনো মুসলমান প্রাণ হারায়; ইসলামের দৃষ্টিতে শহিদ বলে বিবেচিত হবেন তারা। এমনিভাবে সন্তান প্রসবের সময় কোনো স্ত্রীলোক যদি মৃত্যুবরণ করেন সেও শহিদ বলে গণ্য হবেন।

বাংলাদেশের মুসলমানগণ ভাষার জন্য যে আত্মত্যাগ করেছেন পৃথিবীর ইতিহাসে তা বিরল। সালাম, জব্বার, রফিক, বরকতেরা মাতৃভাষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে আমাদেরকে ধন্য করেছেন। অন্যের হাতে অন্যায়ভাবে মৃত্যু বরণ করেছে তারা। ইসলামের আলোচনা অনুযায়ী ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন তারা শহিদ। সম্পদের জন্য, স্বাধীনতার জন্য এবং ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ দেশে দেশে লড়াই করে কিন্তু মাতৃভাষার জন্য লড়াইয়ের ইতিহাস শুধু বাংলাদেশীরাই তৈরি করেছে।

শহিদের মর্যাদা ও সম্মান সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসে ভিন্ন আলোচনা এসেছে। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘ঋণ ব্যতীত শহিদের সব গুণাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়’।

কেননা শাহাদাত তথা অন্যান্য নেক আমল দ্বারা কেবল আল্লাহর হক মাফ হয়। কিন্তু ঋণ তথা বান্দার হক আল্লাহ ক্ষমা করবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত হকদার ব্যক্তি ক্ষমা না করেন।

আল্লাহর রাস্তায় শহিদ এবং অন্যান্য শহিদের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। আল্লাহর রাস্তায় শহিদদের গোসল না দিয়ে যে পোশাক পরে ছিলেন, সেটিসহ জানাজা পড়িয়ে দাফন করতে হয়। আর অন্যান্য শহিদের গোসল-জানাজা হবে স্বাভাবিক নিয়মে। তাদের জন্য কান্নাকাটি ও আফসোস না করে তাদের শাহাদত কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। পরকালে তারা আল্লাহর রাস্তায় শহিদের ন্যায় সব প্রতিদান লাভ করবেন।

শহিদেরা আল্লাহর কাছে খুবই সম্মানিত। ইরশাদ আছে, ‘আর যে আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করবে, অতঃপর সে নিহত হোক কিংবা বিজয়ী হোক, অচিরেই আমি তাকে দেব মহাপুরস্কার’। (সূরা: নিসা, আয়াত: ৭৪)

শহিদদের মর্যাদা ও সম্মান মহানবী (সা.) এর হাদিসেও প্রতীয়মান হয়। তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করার পর আর দুনিয়ায় ফিরতে চাইবে না। যদি সে দুনিয়ার সবকিছু পায় তবুও না। কিন্তু শহিদের কথা আলাদা। সে চাইবে তাকে দুনিয়ায় ফিরিয়ে আনা হোক এবং ১০ বার তাকে আল্লাহর রাস্তায় হত্যা করা হোক। এ কারণে যে, সে তার মর্যাদা দেখতে পাবে’। (বুখারি ও মুসলিম) 

জামে তিরমিজি শরিফে বর্ণিত হয়েছে, ‘শহিদকে মহান আল্লাহ তাআলা প্রথমেই ক্ষমা করে দেন। এরপর জান্নাতে তার আবাসস্থল দেখানো হয়, কবরের ভয়াবহ আজাব থেকে হেফাজত রাখবেন। কেয়ামত দিবসের ভয়াবহতা থেকে নিরাপদে থাকবে। এবং তার মাথায় বিশেষ মুকুট পরিধান করানো হবে’।

মহান আল্লাহ তাআলা শহিদদের ব্যাপারে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তাদের (শহিদদের) মৃত বলো না। তারা আল্লাহর কাছে জীবিত এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষভাবে রিজিকপ্রাপ্ত হয়। সুতরাং ভাষা শহিদ কিংবা যেকোনো ধরনের শহিদ হোক না কেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে রয়েছে তার জন্য আলাদা মর্যাদা এবং ইসলাম তাকে প্রদান করেছে বিশেষ গুরুত্ব।

আর তাই একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত বাংলা ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছে তাদের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া-প্রার্থনা করা।

ইয়া আল্লাহ! আমাদের সবাইকে ভাষা শহিদদের প্রকৃত মর্যাদা ও সম্মান প্রদান করার তাওফিক দান করুন। আমিন।