স্বাবলম্বী হওয়ার আশা বগুড়ার ২০ নারীর

স্বাবলম্বী হওয়ার আশা বগুড়ার ২০ নারীর

সংগৃহীত

প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছিল তিন মাস আগে। সে সময় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল প্রশিক্ষণ শেষে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে পাবেন সেলাই মেশিন। নানা সময়ে নানাজনের অনেক প্রতিশ্রুতিই শুনেছেন এই নারীরা, কিন্তু সেসব আর বাস্তবায়িত হতে দেখেননি। এ কারণে আদৌ সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হবে কি না, তা নিয়ে দোলাচলে ছিলেন বগুড়ার ২০ অসহায় নারী।

দুই মাস পেরিয়ে তিন মাস শেষ না হতেই বসুন্ধরা শুভসংঘের দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হতে দেখে আপ্লুত হন তাঁরা। নিজেদের স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নপূরণে বসুন্ধরা গ্রুপ এভাবে এগিয়ে আসবে, সেটি যেন কল্পনাও করতে পারেননি প্রান্তিক এসব নারী।

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন যখন তাঁদের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দিলেন, তখন তাঁরা যেমন আনন্দে আত্মহারা, কারো আবার চোখ ছলছল অবস্থা। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া ইউনিয়নের বড়কুমিড়া হাপুনিয়াপাড়ায় বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন পান ২০ দরিদ্র অসচ্ছল নারী।

সেলাই মেশিন হাতে পেয়ে উচ্ছ্বাস যেন ধরে রাখতে পারলেন না বিউটি বেগম। দুই সন্তানের জননী বিউটি বেগম বলেন, ‘আপনিকরোক দোয়া করমো। আপনিরা যিংকা করে গরিব মানুষের পাশে অ্যাসে খাড়া হলেন, ইডে লিজের মানুষও করে না। হামার এক বাচ্চা এটি (বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলে) অ্যাসে পড়ছে, আর হামি সিলেই শিখছি।

তিন মাস পরে মেশিন হাতোত পায়া জানডা ভরে গেলো। অ্যাকন কিছু করে খাবার পারমো।’ আরেক প্রশিক্ষণার্থী সাথী বেগম বলেন, ‘হামরা সগলি দোয়া করি, তারা (বসুন্ধরা গ্রুপ) যেন আরো ভালো থাকে। তারা ইংকে করে দ্যাশের গরিব মানুষের যেন উপুকার করবের পারে।’

প্রশিক্ষণ পাওয়া ২০ নারীর হাতে সেলাই মেশিন তুলে দিয়ে কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, হাপুনিয়াপাড়ায় আগে থেকেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সন্তানদের জন্য বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল চালু করা হয়েছে।

গত বছরের শুরুতে স্কুলটি পরিদর্শনে এলে স্থানীয় নারীরা তাঁদের আর্থিক অসচ্ছলতার কথা বলেন। ওই সব নারীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়। সেখানে যে ২০ নারী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই সংগ্রামী জীবন অতিবাহিত করছেন। কারো স্বামী নিরুদ্দেশ, কারো মা-বাবা কেউ নেই, কারো স্বামীর উপার্জনে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করা দুষ্কর। এসব নারীকে বাছাই করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতেই বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমদ আকবর সোবহানের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ প্রদান শেষে বিনা মূল্যে সেলাই মেশিন প্রদান করা হলো। তাঁরা এই মেশিনের মাধ্যমে কাপড় সেলাই করে যা উপার্জন করবেন, সেটা কিছুটা হলেও সংসারের চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে। বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমন প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সেসব কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে শত শত নারী বাড়তি আয়ের সুযোগ পেয়েছেন। শুধু যে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে তা নয়, প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেকে সেলাই মেশিন পাচ্ছেন। এর ফলে কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই তাঁরা অর্থ উপার্জন করে পরিবারে চাহিদার একাংশ পূরণে সক্ষম হচ্ছেন।

বগুড়ার বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল ঘিরে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি আরো বলেন, সেখানে বিদ্যালয়ের পাশাপাশি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পাঠাগার ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও থাকবে। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে এর সবই করা হবে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করার জন্য।

সেলাই মেশিন বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আতিক, জেলা শুভসংঘের উপদেষ্টা মোস্তফা মাহমুদ শাওন, সভাপতি ডা. সিরাজুল হক ফাইনসহ শুভসংঘ কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা কমিটির সদস্যরা। পরে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য জায়গাও পরিদর্শন করেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন