করোনা টিকায় স্নায়ুতে দেখা দিতে পারে জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া!

করোনা টিকায় স্নায়ুতে দেখা দিতে পারে জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া!

ফাইল ছবি

মানুষের স্নায়ুতে করোনা টিকার জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রমাণ মিলেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। যদিও টিকার এ প্রভাব খুব বিরল বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। বিশ্বজুড়ে বহুল ব্যবহৃত ফাইজার, মডার্না ও অ্যাস্ট্রোজেনেকা ভ্যাকসিনের ওপর চালানো হয়েছে এ গবেষণা।

সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শনাক্ত করতে অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের ৯ কোটি ৯ লাখের বেশি মানুষের ওপর সমীক্ষা চালিয়েছেন গবেষকরা। করোনার টিকা নিয়ে এখন পর্যন্ত করা সবচেয়ে বড় গবেষণা এটি।

গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা টিকার প্রভাবে জটিল স্নায়বিক রোগ এবং মেরুদণ্ডের প্রদাহের মতো বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। গবেষকদের দাবি, গবেষণায় এমআরএনএ ভ্যাকসিন (ফাইজার ও মডার্না) গ্রহণের ক্ষেত্রে মায়োকার্ডাইটিস (হৃৎপিণ্ডের পেশির প্রদাহ) এবং পেরিকার্ডাইটিস (হৃৎপিণ্ডের পাতলা থলির ফুলে যাওয়া) -এর বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো উচ্চস্তরের নির্ভুলতার সঙ্গে নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের প্রভাবে গুইলেন-বারে সিনড্রোম (যেখানে ইমিউন সিস্টেম স্নায়ু আক্রমণ করে) এবং সেরিব্রাল ভেনাস সাইনাস থ্রম্বোসিস (মস্তিষ্কে এক ধরনের রক্ত জমাট বাঁধা) মতো বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।

গ্লোবাল ভ্যাকসিন ডেটা নেটওয়ার্কের সহপরিচালক অধ্যপক জিম বাটারি বলেন, এই অনুসন্ধান গবেষকদের স্বাধীনভাবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এবার প্রায় ৬৮ লাখ অস্ট্রেলিয়ান, যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের একটি পৃথক ডেটাসেট বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়েছে। যেখানে মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে প্রদাহ এবং ফুলে যাওয়ার মতো বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গবেষকরা অবশ্য বলছেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলেও করোনা টিকা গ্রহণের ফলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হাওয়ার ঝুঁকি অনেক কমেছে। তাদের গবেষণা অনুযায়ী প্রতি ১০ লাখ ডোজে মাত্র ০ দশমিক ৭৮টি ক্ষেত্রে স্নায়ুবিক জটিলতা এবং ১ দশমিক ৮২টি ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডে প্রদাহজনিত সমস্যার ঝুঁকি রয়েছে।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জুলি লিস্ক বলেন, একটি শক্তিশালী টিকাদান কর্মসূচির জন্য এসব সমস্যা শনাক্ত করা এবং সমাধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে দেশে আবারও বাড়তে শুরু করে করোনা সংক্রমণ। শনিবার ৩৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। এ সময়ে ৩৬২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। চলতি বছরে দেড় মাসের ব্যবধানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সামনের কয়েক মাসে এই সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এ জন্য দ্রুত টিকা নেওয়াসহ সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।