ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : পুরোনো গাছ কেটে নির্মিত হচ্ছে 'বৈশাখী মঞ্চ'

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : পুরোনো গাছ কেটে নির্মিত হচ্ছে 'বৈশাখী মঞ্চ'

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : পুরোনো গাছ কেটে নির্মিত হচ্ছে 'বৈশাখী মঞ্চ'

দুই যুগের পুরোনো একাধিক গাছ কেটে 'বৈশাখী মঞ্চ'  তৈরি করছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) কর্তৃপক্ষ। পাশেই ফাঁকা জায়গা থাকা সত্বেও প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। এছাড়া দুইটি একাডেমিক ভবনের মধ্যবর্তীস্থানে এ মঞ্চ নির্মাণ করায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা থাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গাছ কাটার ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবন এবং ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভবনের মাঝে ‘বৈশাখী মঞ্চ’ তৈরি করছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ওই মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ফলে তিনটি পুরোনো গাছ কাটা হচ্ছে। দুই যুগ আগে নিজস্ব অর্থায়নে সেই গাছগুলোসহ প্রায় ১১০০ গাছ লাগিয়েছিলেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুঈদ রহমান। তিনিও বিষয়টি নিয়ে বিব্রত বলে জানিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি, দুই একাডেমিক ভবনের মাঝে মঞ্চ হলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কারণে ক্লাস-পরীক্ষা ব্যহত হবে। কর্তৃপক্ষ চাইলে ভিন্ন কোনো জায়গায় এই মঞ্চ করতে পারতো। সদিচ্ছা থাকলে প্রশাসন গাছ না কেটেও মঞ্চ তৈরি করতে পারতো। এর আগেও উন্নয়নের নামে অনেক গাছ কর্তন করলেও পরবর্তীতে উল্লেখযোগ্য হারে নতুন গাছ লাগানো হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। 

এদিকে, পরিবেশবাদী সংগঠন 'অভয়ারণ্য'র পক্ষ থেকে গাছ না কাটার অনুরোধ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, প্রকৌশল অফিস ও প্রক্টরের কাছে লিখিত আবেদন করেও কাজ না হওয়ায় গাছ কাটার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় সংগঠনটি। সংগঠনটির সভাপতি ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমন বলেন, সর্বশেষ একটি গাছ কাটার বাকি ছিল। আমরা সেটা আটকানোর জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত আমাদের মর্মাহত করেছে। আমরা এ বিষয়ের তীব্র নিন্দা জানাই।

পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন ভয়েসের সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমন বলেন, আমরা প্রক্টর অফিসে কথা বলেছি। আমাদের বলেছে মৃতপ্রায় গাছ কাটা হচ্ছে। কিন্তু আমরা গিয়ে দেখলাম সবগুলো গাছ জীবিত। গাছ কেটে মঞ্চ তৈরি করা কোনোভাবে সুখকর নয়। অনেকস্থানে ফাঁকা জায়গা আছে সেখানেও মঞ্চ তৈরি করা যায়।

অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. মুঈদ রহমান বলেন, ২৪ বছর আগে নিজস্ব অর্থায়নে এই গাছগুলো লাগিয়েছিলাম। বিষয়টি শুনে আমার খুব কষ্ট লেগেছে। ব্যাপারটা আমার জন্য বিব্রতকরও। গাছ না কেটে ভিন্ন কোনো ফাঁকা স্থানে মঞ্চ করতে পারতো।

ধর্মতত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আমি নিরুৎসাহিত করছি না। তবে ক্লাস-পরীক্ষার সময়ে এসব জায়গায় অনুষ্ঠান করা উচিত না। এছাড়া একাডেমিক ভবনগুলোকে ঘিরে না করে অন্য স্থানে করা উচিত।

প্রধান প্রকৌলশী (ভারপ্রাপ্ত) কে এম শরীফ উদ্দীন বলেন, ওই জায়গায় মঞ্চ করলে গাঠ কাটা ছাড়া উপায় ছিল না। গাছগুলো মরা। যেকোনো সময় ডাল ভেঙ্গে পড়তে পারতো। এছাড়া গাছ জীবিত থাকলেও মঞ্চ করলে শিকড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ডিন, শিক্ষক সমিতির সভাপতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলেই গাছ কাটা হয়েছে। কোনো কাজের প্রয়োজন হলে গাছ কাটাই লাগে। প্রয়োজনে পরবর্তীতে সাড়ি সাড়ি করে গাছ লাগিয়ে দিব।