কার্গো জাহাজে হুতিদের হামলায় নিহত ৩

কার্গো জাহাজে হুতিদের হামলায় নিহত ৩

ছবি: সংগৃহীত

এডেন উপসাগরে একটি বাণিজ্যিক জাহাজে ইয়েমেনের সশস্ত্র হুতি বিদ্রোহীদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তিনজন ক্রু নিহত হয়েছেন। গত অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে ইরানপন্থি ইয়েমেনি এই গোষ্ঠীর আক্রমণ শুরু করার পর এই প্রথম প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।

হামলার পর বার্বাডোজের পতাকাবাহী ট্রু কনফিডেন্স নামের জাহাজটি খালি করা হয়েছে এবং আগুন নিয়েই জাহাজটি ভেসে চলেছে। মার্কিন সামরিক বাহিনী বলছে, গ্রিনিচ মান সময় সাড়ে ১১টায় এডেন উপসাগরে এই হামলা চালানো হয়।

হুতিরা বলেছে, গাজায় চলমান ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে পরিচালিত অভিযানগুলোর বিষয়ে নজরদারি করা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) বলেছে, জাহাজের তিন ক্রু নিহত হয়েছেন এবং আরো চারজন আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করা এক পোস্টে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ‘হুতিদের এ ধরনের বেপরোয়া হামলা বৈশ্বিক বাণিজ্যকে ব্যাহত করেছে এবং আন্তর্জাতিক নাবিকদের জীবন কেড়ে নিয়েছে।’ এক বিবৃতিতে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীটি বলেছে, ট্রু কনফিডেন্স নামের ওই জাহাজটির নাবিকরা হুতি নৌবাহিনীর দেওয়া সংকেত উপেক্ষা করেছে।

ইয়েমেনে থাকা ব্রিটিশ দূতাবাস বলেছে, নাবিকদের মৃত্যু ‘দুঃখজনক, কিন্তু আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের ওপর হুতিদের বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলার এমন পরিণতি হওয়ারই কথা ছিল।’ এই ধরনের হামলা বন্ধ হওয়া উচিত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। জাহাজটিতে ২০ জন ক্রু ছিলেন। এর মধ্যে একজন ভারতীয়, ভিয়েতনামের চারজন এবং ১৫ জন ফিলিপাইনের নাগরিক।

এ ছাড়া জাহাজে তিনজন সশস্ত্র প্রহরী ছিলেন, যাদের মধ্যে শ্রীলংকার দুইজন এবং নেপালের একজন নাগরিক রয়েছেন। এক বিবৃতিতে জাহাজের মালিক ও ব্যবস্থাপকদের মুখপাত্র বলেন, ইয়েমেনি শহর এডেন থেকে ৫০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এই হামলা হয়।

এই হামলার পর হুতিদের পরিচালিত আল-মাসিরাহ টিভি বুধবার সন্ধ্যায় তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, হুতিদের নিয়ন্ত্রিত লোহিত সাগরের বন্দর নগরী হুদায়দাহর একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র দুটি বিমান হামলা চালিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন সংস্থা ইউকেএমটিওর তথ্য অনুযায়ী, ট্রু কনফিডেন্স জাহাজটিকে ভিএইচএফ রেডিওর মাধ্যমে একটি গোষ্ঠী পথ পরিবর্তন করতে বলেছিল। ওই গোষ্ঠীটি নিজেদেরকে ‘ইয়েমেনি নৌবাহিনী’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল।

পরে কাছাকাছি থাকা আরেকটি জাহাজ থেকে প্রচণ্ড জোরে শব্দ শুনতে পাওয়ার পর ধোঁয়া দেখা গেছে বলে জানায় তারা।

ইউকেএমটিও জানায়, ট্রু কনফিডেন্সে হামলা হয়েছে এবং বেশ ক্ষতি সাধিত হয়েছে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক নৌচলাচল বিষয়ক যৌথ বাহিনী ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম কোয়ালিশন তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে।

হর্ন অব আফ্রিকা নামে ইইউর নৌ চলাচল সুরক্ষা কেন্দ্র জানায়, উদ্ধার অভিযান চলছে।

হুতিরা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ট্রু কনফিডেন্স একটি মার্কিন জাহাজ। তবে মুখপাত্র বলেছেন, জাহাজটির ‘বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সংস্থার সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’

এর আগে গত রোববার রুবিমার নামে বেলিজের পতাকাবাহী একটি কার্গো জাহাজ লোহিত সাগরে ডুবে গেছে। দুই সপ্তাহ আগে এই জাহাজটিকে হুতিদের একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছিল। গত নভেম্বরে হুথিদের হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ডুবে যাওয়া এটাই প্রথম জাহাজ।

হামলা চালানোর সময় রুবিমার জাহাজটি এডেন উপসাগরকে লোহিত সাগরের সঙ্গে সংযোগকারী বাব এল-মান্দেব প্রণালির কাছে ছিল। ক্রুদের সবাইকে উদ্ধার করা হয় এবং জাহাজটি ধীরে ধীরে পানিতে তলিয়ে যেতে থাকে। জাহাজটিতে প্রায় ২১ হাজার মেট্রিক টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সার ছিল। সূত্র: বিবিসি