রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২৫২জন
ছবি সংগৃহিত।
রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এ পর্যন্ত অন্তত ১৮ জেলায় আড়াইশ’র বেশি ডেঙ্গু রোগীর হাসপাতালে ভর্তির হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ-
যশোর: যশোরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে শনিবার বিকাল পর্যন্ত ২৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ১৯ জুলাই যশোর ইবনে সিনা হাসপাতালের আইসিইউ থেকে ঢাকা নেয়ার পথে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া রাণী (৫৩) নামে এক রোগী মারা যান। তিনি নড়াইল সদর উপজেলার কুড়িগ্রামের আবদুর রাজ্জাকের মেয়ে। এছাড়া অন্য যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বাড়ি যশোরসহ বিভিন্ন জেলায়। বর্তমানে তারা সবাই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. হারুন-অর-রশিদ বলেন, আমিও যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছি। সেখানে মশারির ব্যবস্থা নেই। এমন অভিযোগ রোগী ও তাদের স্বজনরা করেছে। তবে আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে মশারির ব্যবস্থা করবো।
চুয়াডাঙ্গা: জেলা সদর হাসপাতালে এক নারীসহ ৪ জন ডেঙ্গু রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তারা সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরআগে চিকিৎসা নিয়েছেন আরও এক নারী। শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত তারা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে সবাই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. শামীম কবীর বলেন, ‘ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের রক্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। আমরা আমাদের সাধ্যমত চিকিৎসা দিচ্ছি।’
শেরপুর: শেরপুর জেলা হাসপাতালে রবিবার দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এর আগে আরও তিনজন জেলা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এ নিয়ে ৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হলো।
এ ব্যাপারে জেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. খাইরুল কবির সুমন বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য মশারিসহ আলাদা বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছি।
চাঁদপুর: চাঁদপুরে নতুন করে পাঁচজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে ৩ নারীসহ ১৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চাঁদপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি হন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হক জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা চলছে।
খুলনা: খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও বাগেরহাটে চলতি মাসের ২২ দিনে ৭১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ জন, খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নয়জন ও গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজন ভর্তি হয়েছেন। এ পর্যন্ত দুজন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেলেও স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে তাদের মৃত্যু যে ডেঙ্গুর কারণেই হয়েছে তা নিশ্চিত না।
সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি নয়জনই ঢাকা থেকে আসার পর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন বলে স্বাস্থ্য বিভাগ নিশ্চিত করেছে।
খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. ফেরদৌসী আক্তার বলেন, ৩ জুলাই বিভাগীয় পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগের তথ্য সংরক্ষণের জন্য সেল খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭১ জন শনাক্ত হয়েছেন।
চট্টগ্রাম: বন্দরনগরীতে ১৫ দিনে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব মতে, প্রতিদিন গড়ে পাঁচজন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে নগরীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৪৯ জন রোগী শনাক্ত করেছে সিভিল সার্জন অফিস। তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জানান, সর্বশেষ শুক্রবার সাতজন রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র আটজন। কিন্তু ২০ থেকে ২৬ জুলাই আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮ জন। আর গত ছয়মাসে এ সংখ্যা ছিল মাত্র তিনজন।
ফেনী: সদর হাসপাতালে গত ১৫ দিনে ৪৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২১ জন এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং ছয়জনকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। আর ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন একজন রোগী। অন্য চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ জেলায় চিকিৎসা নেয়াদের বেশির ভাগই রাজধানীতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা আবু তাহের পাটোয়ারি জানান, শনিবার পর্যন্ত ২১ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। মোট চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৪ জন।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. নেয়াতুজ্জামান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ফেনীতে কোনো এডিস মশার জীবাণু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি। এখানে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম থেকে এ জীবাণু নিয়ে আসছেন।’
রংপুর: গত আট দিনে ২১ জন রোগী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তরা সবাই ঢাকায় থাকতেন। সেখানেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. সুলতান আহমেদ জানান, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে তারা আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন।
পিরোজপুর: স্বরূপকাঠি উপজেলায় একজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে শনিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন। আক্রান্ত নুর ইসলাম রাহুতকাঠী গ্রামের বাসিন্দা। তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
পাবনা: সদর হাসপাতালে চার দিনে ১২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের বেশির ভাগই ঢাকায় ছিলেন। তারা জানান, রাজধানী থেকে ফেরার পরই তারা জ্বরে আক্রান্ত হন এবং চিকিৎসকের কাছে গেলে রক্ত পরীক্ষা করে তাদের ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এসব রোগীর মধ্যে ছাত্র, ব্যবসায়ী এবং পরিবহন ও পোশাক শ্রমিক রয়েছেন।
সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, আক্রান্তদের মধ্যে ১০ জন ঢাকায় অবস্থানকালে ডেঙ্গুর শিকার হয়েছেন। ‘এর বাইরে স্থানীয় পর্যায়ে দুজন রোগীকে আমরা পেয়েছি।’
হাসপাতালের বহির্বিভাগেও কয়েকজন রোগী পাওয়া গেছে এবং তাদের ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
পাবনার সিভিল সার্জন মেহেদী ইকবাল বলেন, ‘আক্রান্তরা ঢাকা থেকে অসুস্থ হয়ে এসেছেন। যারা ভর্তি আছেন তাদের সঠিকভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অনেকের উন্নতি হওয়ায় বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আবার কেউ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।’
লক্ষ্মীপুর: সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, শনিবার বিকাল পর্যন্ত ছয়জন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় হোসেন আহমেদ নামে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
হোসেনের স্ত্রী ও স্বজনরা জানায়, তিনি চট্টগ্রামে ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন। গত ১০ দিন ধরে তার প্রচণ্ড জ্বর। বৃহস্পতিবার তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতচিহ্ন দেখা দিয়েছে।
কক্সবাজার: জেলার মেধাবী ছাত্রী উকিনো নুশাং (১৯)-এর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ডেঙ্গু। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।
শনিবার চিকিৎসকের পরামর্শে সদর হাসপাতাল থেকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে বিকালে তিনি মারা যান।
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. মহিউদ্দিন জানান, শুক্রবার রাতে পরীক্ষা করে উকিনোর মধ্যে ডেঙ্গুর জীবাণু পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত কক্সবাজারে বসবাসকারী কোনো ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়নি। যে কয়েকজন পাওয়া গেছে তারা সবাই ঢাকা থেকে জীবাণু নিয়ে এসেছেন।