জয়পুরহাটে ডায়রিয়ার প্রকোপ, একদিনেই হাসপাতালে ভর্তি ১৮৩

জয়পুরহাটে ডায়রিয়ার প্রকোপ, একদিনেই হাসপাতালে ভর্তি ১৮৩

সংগৃহীত

জয়পুরহাটে হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন নতুন রোগী। রমজানের শুরু থেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৫৫ রোগী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছিলেন। তবে মঙ্গলবার এক দিনেই এ রোগে ১৮৩ জন ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে শিশু ও বয়স্ক। শয্যা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝে ও করিডোরে শুয়েই তাদের সেবা নিতে হচ্ছে।

বুধবার (২১ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ডায়রিয়া জনিত ১৬ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, শুষ্ক মৌসুম, রমজানে ভাজাপোড়া ও অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং পৌরসভার সরবরাহ করা পানির কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, শুধু জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালেই রমজানের শুরু থেকে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে এসেছেন ৫০ থেকে ৫৫ জন ডায়রিয়ার রোগী। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও কনসালটেশন সেন্টারেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রমজানের শুরু থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। তবে মঙ্গলবার একদিনে (২৪ ঘণ্টায়) ১৮৩ জন রোগী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এদিকে ডায়রিয়ার প্রকোপের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবারই জয়পুরহাট পৌরসভা একটি ঘোষণায় জানায়, পৌরসভার রাস্তা সম্প্রসারণ কাজের কারণে পানির লাইনের পাইপ কেটে বা ফেটে যাওয়ায় সরবরাহ করা পানি দূষিত হতে পারে। এ জন্য গ্রাহকদের সাময়িকভাবে পানি ফুটিয়ে পান করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বুধবার সকালে সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে ডায়রিয়াজনিত রোগে হাসপাতালে রোগীরা আসছেন। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের শয্যা, মেঝে ও বারান্দায় শুয়ে রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। তাদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রয়েছে। তারা প্রচন্ড জ্বর, শরীর ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা ও পেটের ব্যথায় ভুগছেন।

জয়পুরহাটের হাউজিং এস্টেট এলাকায় বসবাস করেন জাকির হোসেন ও নাজমা বেগম দম্পতি। দুই দিন ধরে ডায়রিয়া জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের ভর্তি রয়েছেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে এসে দেখি আমার মতো অনেকে ডায়রিয়া জনিত রোগে ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালে বেড না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা পৌরসভার সরবরাহ করা সাপ্লাই পানি খেয়ে থাকি। আর এ পানি পান করার কারণে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছি।

জয়পুরহাট পৌর শহরের পশ্চিম জানিয়ার বাগান এলাকার মুক্তামহল ছাত্রাবাসে থাকেন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন। তিনি ডায়রিয়া জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে আজ বুধবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, পৌরসভার সরবরাহ করা সাপ্লাই পানি খেয়ে আমি ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছি। অন্য কোন কারণে নয়।

কালাই উপজেলার এলতা গ্রামের রকি হোসেন ডায়রিয়া জনিত রোগে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে এসেছেন। তিনি গত চার দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। তাদের এলাকার অনেক শিশুও এখানে রয়েছে। আজ আরও কয়েকজন ভর্তি হয়েছেন। অবস্থার অবনতি হলে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্স থেকে তাকে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন।

জয়পুরহাট পৌরশহরের নতুনহাট এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার ইফতারের পর হঠাৎ তার স্ত্রী কোহিনূর বেগমের পেটে ব্যথার পাশাপাশি বমি শুরু হয়। এরপর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এখানে আসার পর তিনিও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। হাসপাতালের পরিবেশ খুবই খারাপ। রোগীর চাপে মেঝেতে পা রাখার জায়গা নেই।

পৌরশহর এলাকার আরাফাত নগরের বাসিন্দা সালমা বেগম বলেন, তিন দিন ধরে ডায়রিয়ায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। প্রথমে পেটে ব্যথা, এরপর পাতলা পায়খানা শুরু। সেহরিতে খাওয়ার সময় পানি ঘোলা দেখেছি। আমার ধারণা, পৌরসভার সরবরাহ করা পানির কারণেই আমার ডায়রিয়া হয়েছে।

জায়গার অভাবে মেঝেতে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক বলেন, শুষ্ক মৌসুম, রমজানে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ ও পৌরসভার পানির কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছি। শহরে রাস্তার কাজ চলছে, পানির লাইন লিকেজ হওয়ার কারণে সরবরাহ করা পানি দূষিত হয়ে এ সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের মাত্রাটা বেশি। গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া আক্রান্ত প্রায় ৩০০ নারী-পুরুষ ও শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

জয়পুরহাট জেলা সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. তুলশী চন্দ্র রায় বলেন, হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার কারণটা জানি না। হতে পারে, রমজান মাসে বাহিরের অনিরাপদ ভাজাপোড়া খাবার খাচ্ছে সেটাও একটা কারণ হতে পারে। অথবা পৌরসভার ভেতরে চারলেনের রাস্তার কাজ চলছে। এতে পৌরসভার সরবরাহ করা সাপ্লাই পানির লাইন লিকেজ হওয়ার কারণেও ডায়েরিয়ার প্রকোপ বাড়তে পারে। তবে আমাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া পৌরসভার সরবারহ করা সাপ্লাই পানির স্যাম্পল পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।