শাহনাজ রহমতুল্লাহর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

শাহনাজ রহমতুল্লাহর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ছবি: সংগৃহীত

কিংবদন্তি শিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৯ সালের (২৩ মার্চ) পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে অনন্তলোকে পাড়ি জমান তিনি। ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’সহ অসংখ্য কালজয়ী গানের শিল্পী তিনি।

এই শিল্পী ১৯৫২ সালের ২ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম এম ফজলুল হক ও মাতার নাম আসিয়া হক। শাহনাজের ভাই আনোয়ার পারভেজ দেশবরেণ্য সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক এবং আরেক ভাই জাফর ইকবাল ছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা ও গায়ক।

শাহনাজ রহমতুল্লাহ অল্প বয়সেই গায়িকা হিসেবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা করেন পাকিস্তান রেডিও ও টিভিতে। তখন তিনি শাহনাজ বেগম নামে পরিচিতি পান। দীর্ঘ ৫ দশকেরও অধিক সময়ের ক্যারিয়ারে তার কণ্ঠে রয়েছে অসংখ্য কালজয়ী গান।
 
দেশাত্মবোধক গানের জন্য তিনি ছিলেন ব্যাপক সমাদৃত। তার গাওয়া দেশাত্মবোধক গান এখনো সর্বস্তরের বাঙালির প্রাণ স্পন্দিত করে।

বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় শাহনাজ রহমতুল্লাহ’র গাওয়া চারটি গান স্থান পায়। যা আমাদের সঙ্গীতকে করেছে অনন্য উজ্জ্বল ও শোভামণ্ডিত। পাশাপাশি শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া অসংখ্য রোমান্টিক গানের মধ্যে ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘হারানো দিনের মতো হারিয়ে গেছো তুমি’ ইত্যাদি আজও মানুষের মুখে মুখে ফিরে।
 
বাবার অনুপ্রেরণা আর মায়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে একেবারে ছোটবেলায় শাহনাজের গানে হাতেখড়ি। বরেণ্য এ শিল্পী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম নেন ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদের কাছে। এরপর তিনি ওস্তাদ মনির হোসেন, শহীদ আলতাফ মাহমুদের কাছেও গানে তালিম নেন। তিনি গজল শিখেছেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি গজলসম্রাট মেহেদী হাসানের কাছে।
 
শাহনাজ রহমতুল্লাহ মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। এরপর বহু চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ১৯৬৪ সাল থেকে টেলিভিশনে গাইতে শুরু করেন। তিনি গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আলাউদ্দিন আলী, খান আতা প্রমুখের সুরে গান গেয়েছেন।  

পাকিস্তানে থাকার সুবাদে করাচি টিভিসহ উর্দু সিনেমাতেও গান করেছেন। সত্তরের দশকে অনেক উর্দু গীত ও গজল গেয়ে সঙ্গীতপিপাসুদের মাতিয়েছেন শাহনাজ। সেসব গানে এখনও মানুষ মুগ্ধতায় ভাসেন।  

শাহনাজ রহমতুল্লাহ ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৭৩ সালে সেনা কর্মকর্তা আবুল বাশার রহমতুল্লাহর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির এক কন্যা নাহিদ রহমতুল্লাহ ও এক পুত্র এ কে এম সায়েফ রহমতুল্লাহ রয়েছে।

সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিসরূপ ১৯৯২ সালে রাষ্ট্র শাহনাজ রহমতুল্লাহকে একুশে পদকে ভূষিত করে। এর আগে ১৯৯০ সালে ছুটির ফাঁদে চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। এছাড়াও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার-সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন কিংবদন্তি এই সঙ্গীতশিল্পী।