ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের করণীয়

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের করণীয়

প্রতিকী ছবি

প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার বান্দার পরীক্ষা নেন। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদের আস্বাদন করান, যাতে তারা (আল্লাহর পথে) ফিরে আসে। (সুরা রুম, আয়াত-৪১)। 

পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, খরা, অনাবৃষ্টি, সুনামি এগুলো হলো মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা। যেন মানুষ তওবা করে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে। আল্লাহর পথে ফিরে আসে। 

পৃথিবীতে প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ, মানুষের অপকর্ম। এগুলোর পথ ধরেই মানুষ কিয়ামতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। 

এ প্রসঙ্গে সতর্ক করে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে। কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে, কিন্তু তা আত্মসাৎ করা হবে (অর্থাৎ যার সম্পদ সে আর ফেরত পাবে না)। জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে। ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর বাধ্যগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে। বন্ধুকে কাছে টেনে নেবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে। মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে শোরগোল (কথাবার্তা) হবে। যখন সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসক রূপে আবির্ভূত হবে। সে সময় তোমরা অপেক্ষা কর- রক্তিম বর্ণের ঝড়ের (অ্যাসিড বৃষ্টি), ভূকম্পনের, ভূমিধসের, রূপ বিকৃতির (লিঙ্গ পরিবর্তন), পাথর বৃষ্টির এবং সুতো ছেঁড়া (তাসবিহ) দানার ন্যায় একটির পর একটি নিদর্শনগুলোর জন্য।’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ১৪৪৭)। 

এ পৃথিবীতে আগেকার যুগে যখন ভূমিকম্প হতো, তখন সঠিক পথে পরিচালিত সৎকর্মশীল লোকেরা বলত, ‘মহান আল্লাহ আমাদের সতর্ক করেছেন।’ ভূমিকম্প বিষয়ে পবিত্র কোরআনের ‘যিলযাল’ নামে স্বতন্ত্র একটি সুরা নাজিল করা হয়েছে। মানুষ শুধু কোনো ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয় এবং ভূতত্ত্ববিজ্ঞানও এই কার্যকারণ সম্পর্কেই আলোচনা করে থাকে। 

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আজাবের) নিদর্শনগুলো পাঠাই।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত নম্বর : ৫৯)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, “বলে দাও, ‘আল্লাহ তোমাদের ওপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম।’ (সুরা আনআম, আয়াত নম্বর : ৬৫)। 

বুখারি শরিফে আছে, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম’ আয়াতটি নাজিল হলো, তখন রসুল (সা.) বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (বুখারি)। 

প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে আল্লাহর জিকির করা, প্রত্যেক মুসলমানের খুবই আন্তরিকভাবে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা উচিত। 

আল্লাহ বলেন, ‘যদি জনপদের মানুষগুলো ইমান আনত এবং (আল্লাহকে) ভয় করত, তাহলে আমি তাদের ওপর আসমান-জমিনের যাবতীয় বরকতের দরজা খুলে দিতাম, কিন্তু তারা (আমার নবীকেই) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য আমি তাদের পাকড়াও করলাম।’ (সুরা আরাফ : ৯৬)। 

তাই যখন কোথাও ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প অনাবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস হয় তখন সবার উচিত আল্লাহর কাছে তওবা করা। তার কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা। আল্লাহতায়ালাকে বেশি পরিমাণে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা।

লেখক : খতিব, মনিপুর বায়তুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মীরপুর, ঢাকা