মেসির জন্য কি হতে চলেছে বার্সেলোনায়?

মেসির জন্য কি হতে চলেছে বার্সেলোনায়?

বার্সেলোনায় কি শেষ হতে চলেছে মেসি যুগ।

ফুটবল বিশ্বে তোলপাড় করে দিয়ে বার্সেলোনা ছেড়ে চলে যেতে চাইছেন লিওনেল মেসি। কিশোর বয়স থেকে যে ক্লাবের একাডেমি থেকে তাঁর ফুটবলার হিসেবে বেড়ে ওঠা এবং জীবনে যে ক্লাব ছেড়ে কখনও যাননি, তাদেরকে চলে যাবেন তিনি! 

বেশ কিছু দিন ধরেই মেসির বার্সা ছাড়া নিয়ে টক অব দ্যা ওয়াল্ড ছিল। শেষ পর্যন্ত বুধবার এক বুরোফ্যাক্সের (যা আইনি মহলে বেশি প্রসিদ্ধ এবং স্বাক্ষর-সহ গ্রহণ করতে হয়) মাধ্যমে তিনি ক্লাবকে জানান, তাঁকে অবিলম্বে ‘ফ্রি প্লেয়ার’ হিসেবে ছেড়ে দেওয়া হোক। মেসির চুক্তি সামনের বছর পর্যন্ত রয়েছে। সেই চুক্তিতে এটাও রয়েছে যে, প্রত্যেক বছর জুনে মৌসুম শেষে তিনি ‘ফ্রি’ ফুটবলার হিসেবে চলে যেতে পারেন। অন্য কোনও সময়ে তাঁকে নিতে হলে বার্সেলোনাকে ৭০০ মিলিয়ন ইউরো দিতে হবে ‘বাইআউট ক্লজ’ হিসেবে। অর্থাৎ, তাঁর ক্লাব বার্সেলোনার হাতে এই টাকাটা তুলে দিতে হবে।

কৈশোর থেকে কাটানো বার্সেলোনার সঙ্গে মেসির সম্পর্ক এখন এমনই অবস্থায় পৌঁছেছে যে, আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি লিখেছেন, এ বারে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে পরিস্থিতি ভিন্ন। অনেক দিন ধরে থেমে থাকার পরে ফুটবল মৌসুম মাত্র শেষ হয়েছে। তাই জুন নয়, এখনই মৌসুম শেষের সময় ধরতে হবে। সেই কারণে ‘ফ্রি প্লেয়ার’ হিসেবে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হোক। উল্টা মত হচ্ছে, মেসির চুক্তির এই ধারা কার্যকর করতে গেলে মেসিকে ১০ জুনের মধ্যে ক্লাব ছাড়ার কথা জানাতে হত। এতদিন মেসি আর বার্সেলোনা সমার্থক হয়ে গিয়েছিল। এখন যা পরিস্থিতি, মেসি বনাম বার্সেলোনা সংঘাত শুরু হয়ে গেছে। আইনি যুদ্ধ কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্ট পর্যন্ত গড়ালেও অবাক হওয়ার নেই। 

মেসির ক্লাব ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়ে মঙ্গলবার রাতেই জরুরি বৈঠকে বসেন ক্লাবের শীর্ষ কর্তারা। সেই সময়েই ক্লাবের সামনে ভিড় করে ভক্তরা বিক্ষোভ দেখান। ক্লাব প্রেসিডেন্ট জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউয়ের পদত্যাগ দাবি করেন তাঁরা। দু’টো কারণ শোনা যাচ্ছে মেসির ক্লাব ছাড়তে চাওয়ার পিছনে। বার্তোমেউয়ের সঙ্গে একেবারেই বনিবনা হচ্ছে না তাঁর। দ্বিতীয়ত, নতুন ম্যানেজার রোনাল্ড কোমান এসে মেসির প্রিয় সতীর্থ লুইস সুয়ারেস-সহ একাধিক ফুটবলারকে ক্লাব ছাড়তে বলেছেন। এর মধ্যে সুয়ারেসকে জানানো হয়েছে ফোন করে। মেসি যা নিয়ে ভীষণই ক্ষুব্ধ। তাঁর মনে হয়েছে, খেলোয়াড়দের অসম্মান করছে ক্লাব। কোমান নাকি মেসিকেও মুখোমুখি বৈঠকে বলেছেন, আলাদা কোনও সমাদর তাঁর আমলে আশা করে লাভ নেই।

সতীর্থরা মেসির পাশে দাঁড়িয়েছেন। কার্লেস পুয়োল টুইট করেছেন, ‘‘তোমার প্রতি শুধু সম্মান আর মুগ্ধতা রয়েছে, লিও’’ সুয়ারেজ স্মাইলি দিয়ে সেই টুইটকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিশ্ব জুড়ে চাঞ্চল্য পড়ে যাওয়ার মধ্যে ব্যাকফুটে বার্সেলোনা। 

বুধবার রাতের দিকে বার্সার স্পোর্টিং ডিরেক্টর রামন প্লেনস বলেছেন,‘‘যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। বিশ্বের সেরা ফুটবলারকে নেতৃত্বে রেখে আমরা আবার বিজয়ী দল গড়ে তুলতে চাই। বার্সা আর লিয়ো একটা বিয়ের মতো। বিচ্ছেদ কেউ চায় না।’’ শুধু তিনি একা নন, গোটা বার্সেলোনা জুড়ে তোলপাড় চলছে। শহরের মেয়র পর্যন্ত মন্তব্য করেছেন, ‘‘আমি আশা করব, ওরা যা যা করা দরকার সব করবে লিয়োকে ধরে রাখার জন্য। মেসিকে বার্সেলোনাতেই দেখতে চাই।’’ 

বুধবার রাতের দিকে স্পেনীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, মেসির বিস্ফোরক বুরোফ্যাক্সে নড়বড়ে স্বয়ং বার্তোমেউ। তিনি নিজে মেসির সঙ্গে একান্ত বৈঠকের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ২-৮ হারে বিপর্যস্ত মেসি ছুটি কাটাতে চলে গিয়েছিলেন। শোনা যায়, লজ্জাজনক ওই হারের পরে তিনি এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে, ড্রেসিংরমে সতীর্থদের সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থাতেও ছিলেন না। ছুটি কাটিয়ে তিনি বার্সেলোনায় ফিরেছেন এবং বার্তোমেউ চাইছেন, মেসির সঙ্গে সামনা-সামনি বসতে। তাঁকে মানানোর চেষ্টা করা ছাড়া উপায় নেই।