পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট

পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান ব্যাপক উত্তেজনার মধ্যেই এবার প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) পাকিস্তান ঘোষণা করেছে যে, ইরানের প্রেসিডেন্ট আগামী সোমবার (২২ এপ্রিল) থেকে তিন দিনের সরকারি সফরে ইসলামাবাদে যাচ্ছেন। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইরানের প্রেসিডেন্ট এবং প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত পাকিস্তানের সরকার।

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, ‘তিনি আসছেন। আমরা তাদের স্বাগত জানাই। এই সফর হবে ২২,২৩ ও ২৪ এপ্রিল। আমরা স্বভাবতই এর জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছি এবং পাকিস্তানের সরকার ইরানের সম্মানিত প্রেসিডেন্ট ও প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।’

দার এই ধারণা নাকচ করে দেন যে ইসরাইলের সঙ্গে ইরানের সাম্প্রতিক সামরিক অচলাবস্থার কারণে ইসলামাবাদ ও তেহরান রাইসির সফর বাতিল করতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন বলেন, ‘এই ঘটনার অনেক মাস, অনেক সপ্তাহ আগে এই সফরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।’

এই ঘোষণার একদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রসহ জাতিসংঘের প্রায় ৫০ টি দেশের প্রতিনিধিরা সম্মিলিত ভাবে গত সপ্তাহান্তে ইসরাাইলের বিরুদ্ধে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার নিন্দা করেছে।

ঐ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা দেখছি যে ইরানের এই আক্রমণ হচ্ছে ইরান ও তার জঙ্গি সহযোগীদের বিপজ্জনক ও অস্থিতিশীল কর্মকান্ডের একটি দিক যা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি মারাত্মক হুমকি’।

ওয়াশিংটন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর সমন্বয়ে গঠিত জি-সেভেন গোষ্ঠী তেহরানের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এই কর্মতৎপরতা লক্ষ্য হচ্ছে ইসরাইলকে সমর্থন দান এবং যাতে পরিস্থিতির আরও অবনতি না ঘটে সে জন্য রাজি করানো।

গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে বোমা হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এতে নিহত হন ১৩ জন। নিহতদের মধ্যে ইরানের সামরিক বাহিনীর এলিট শাখা ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) দুই জ্যেষ্ঠ কমান্ডার মোহাম্মদ রেজা জাহেদী এবং মোহাম্মদ হাদি হাজি রাহিমিও ছিলেন।

হামলার দায় এখন পর্যন্ত ইসরায়েল স্বীকার করেনি। তবে সাক্ষ্য-প্রমাণ যা পাওয়া গেছে, তাতে হামলাটি যে আইডিএফ করেছিল— তা পরিষ্কার।

গত সপ্তাহে ইরানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছিলেন— এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।

তারপর শনিবার রাত ও রোববার ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ৩ শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরানের সামরিক বাহিনী। হামলায় হতাহতের কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র, জর্ডান ও আঞ্চলিক মিত্রদের সহায়তায় বেশিরভাগ ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে ইসরায়েলের ৯টি স্থাপনায় ইরানি ড্রোন আঘাত হানতে সফল হয়েছে ইরান।

আকস্মিক এই হামলার পর ইরানকে পাল্টা জবাব দেওয় হবে বলে ঘোষণা করেছিল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। রাষ্ট্রটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও দ্ব্যর্থহীনভাবে আইডিএফের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে।

তারপর শুক্রবার গ্রিনিচ মান সময় দুপুর সাড়ে ১২ টার (বাংলাদেশের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৬ টা) দিকে ইরানের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী ইসফাহানে ড্রোন হামলা চালায় আইডিএফ। তবে হামলায় ব্যবহৃত ৩টি ড্রোনই ধ্বংস করে দিয়েছে ইরানের আকাশ সুরক্ষা ব্যবস্থা।

গত মঙ্গলবার দার ইসলামাবাদে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফায়সাল বিন ফারহান আল সৌদের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। সেখানে তারা উভয়ই গাজায় অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানান তবে ইসরাইলে আক্রমণ করার জন্য ইরানকে কিছু বলা থেকে বিরত থাকেন।

পাকিস্তান ও ইরানের ৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অভিন্ন সীমান্ত রয়েছে । নিজ নিজ দেশে জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়া এবং সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসী আক্রমণ চালানো থেকে বিরত রাখতে তারা যথেষ্ট কিছু করছে না বলে দেশ দুটি পরস্পরকে দোষারোপ করে।

জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তান প্রদেশে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী এই দাবি করে ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ চালায় যে সেখানে ইরান বিরোধী জঙ্গিরা লুকিয়ে আছে। ইসলামাবাদ তার আঞ্চলিক অখন্ডতা লংঘন করার জন্য ইরানের নিন্দা করে এবং ইরানের এলাকা থেকে পাকিস্তান বিরোধী জঙ্গিদের ঘাঁটিতে পাল্টা আক্রমণ চালায় ।

এই সব আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের কারণে এই দুটি মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে বড় রকমের সংঘাতের এবং ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলে সন্ত্রাসী আক্রমণ চালানোর পর ব্যাপক আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়।

দ্বিপাক্ষিক উত্তেজেনা হ্রাসের জন্য তেহরান ও ইসলামাবাদ দ্রুত কুটনৈতিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করে এবং পরস্পরের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখন্ডতার প্রতি সম্মান জানানোর সংকল্প ব্যক্ত করে।

পাকিস্তান ও ইরান দু দেশকে সংযোগকারী বহু কোটি ডলারের পাইপলাইন নির্মাণের বহু দিনের পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি সম্প্রতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। ঐ পাইপ লাইনের মাধ্যমে ইরান থেকে পাকিস্তান প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করতে পারবে।

ইরান যদিও বলছে যে সীমান্তে তার দিকে ৯০০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ তারা সম্পন্ন করেছে, পাকিস্তানের দিকে নির্মাণ কাজ শুরুই হয়নি কারণ ইসলামাবাদ ভয় পায় যে ইরান থেকে জ্বালানি শক্তি আমদানি করলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হবে।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা, দ্য ট্রিবিউন