টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল পাস যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে

টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল পাস যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে

ছবি: সংগৃহীত

টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে আনা একটি বিতর্কিত বিল অনুমোদন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট। এর ফলে টিকটকের চীনা মালিকানা প্রতিষ্ঠান ‘বাইটড্যান্স’কে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের শেয়ার ছয় মাসের মধ্যে বিক্রি করে দিতে হবে। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্রে এই অ্যাপটি ব্লক করে দেওয়া হবে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিলটিতে স্বাক্ষরের পর এটি আইনে পরিণত হবে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে চারটি বিলের একটি প্যাকেজের সাথে এ বিলটি পাস হয়েছিল, যার সাথে আরও ছিল ইউক্রেন, ইসরায়েল, তাইওয়ান ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারদের জন্য সামরিক সহায়তা সংক্রান্ত বিষয়ও।

সিনেটে এ বিল বড় ধরনের সমর্থন পেয়েছে। সেখানে ৭৯ জন সিনেটর টিকটক নিষিদ্ধ করার পক্ষে আর ১৮ জন এর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।

কেন টিকটক বন্ধ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্রে

বিবিসির প্রযুক্তি বিষয়ক রিপোর্টার লিভ ম্যাকমোহন লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বড় দুটি দলের আইন প্রণেতারা আইনে পরিণত করার জন্য যে বিলটি পাশ করেছেন তাতে একটি নন-চীনা কোম্পানির কাছে অ্যাপটি বিক্রি না হলে যুক্তরাষ্ট্রে এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হবে।

তাদের ভয় যে চীনা সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এক কোটি সত্তর লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য-উপাত্ত তাদের কাছে হস্তান্তরের জন্য টিকটককে বাধ্য করতে পারে।

টিকটক অবশ্য বলেছে যে বিদেশি ব্যবহারকারীদের তথ্য তারা চীনা সরকারকে দেবে না।

গত ২১ এপ্রিল কংগ্রেস ৯৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সহায়তা বিল পাশ করেছিল যাতে টিকটকের বাধ্যতামূলক বিক্রির বিষয়টিও আছে।

তবে টিকটকের বিষয়ে আমেরিকান কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগ এবারই নতুন নয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ২০২০ সালে হোয়াইট হাউজে থাকার সময়ে এই অ্যাপটি বন্ধ করতে চেয়েছিলেন।

ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী। তিনি অবশ্য নতুন আইনের সমালোচনা করে বলেছেন, টিকটক সীমিত করা হলে সেটি ফেসবুককে লাভবান করবে।

কখন টিকটক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে পারে

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বাক্ষর করার পর তাৎক্ষণিকভাবেই টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।

আমেরিকানরা এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারছেন না— এটি নিশ্চিত করতে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

কারণ বাইটড্যান্স অ্যাপটির জোরপূর্বক বিক্রি ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্টেও যেতে পারে।

এছাড়া পাশ হওয়া বিলে বাইটড্যান্সকে ৯ মাস সময় দেওয়া হয়েছে কোনো আমেরিকান ক্রেতার কাছে টিকটক বিক্রির জন্য। সেটি না হলে এরপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার জন্য গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে আরও তিন মাস সময় পাবে বাইটড্যান্স।

ফলে ২০২৫ সালের কোনো এক সময় বিক্রির সময়সীমা উত্তীর্ণ হবে। ততদিনে যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে তিনি এই নিষেধাজ্ঞাকে আটকে দিতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে সহজ পথ হলো অ্যাপল ও অ্যান্ড্রয়েড বিভিন্ন অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপটি সরিয়ে ফেলা। স্মার্ট ফোন ও ট্যাবলেট ব্যবহারকারীরা অ্যাপ স্টোর থেকেই তাদের পছন্দনীয় অ্যাপগুলো ডাউনলোড করে থাকেন। ফলে অ্যাপ স্টোর থেকে সরিয়ে ফেললে টিকটক নতুন ব্যবহারকারী আর পাবে না।

আবার এখন যারা ব্যবহার করছেন অ্যাপ স্টোরে না থাকলেও তারা ভবিষ্যতে অ্যাপটি আপডেট করতে পারবেন না।

টিকটক প্রস্তাবিত আইনটির সমালোচনা করে বলেছে এটি যুক্তরাষ্ট্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি একটি অসম্মান। এর প্রধান নির্বাহী সো জি চিউ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এ বিল ‘অন্য সামাজিক মাধ্যমগুলোকে অধিকতর শক্তিশালী করবে’ এবং অনেক আমেরিকানের চাকরি হুমকির মুখে ফেলবে।

বাইটড্যান্সকে টিকটক বিক্রির জন্য চীনা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। বেইজিং আগেই এ ধরনের উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে।

অন্য কোন দেশে টিকটক বন্ধ আছে?

ভারত ইতিমধ্যেই টিকটকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ২০২০ সালের জুনে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের আগে দেশটি এই অ্যাপের একটি বড় বাজার ছিল।

এছাড়া ইরান, নেপাল, আফগানিস্তান ও সোমালিয়াতেও টিকটক বন্ধ আছে।

২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যের সরকার ও সংসদে তাদের কর্মীদের ডিভাইসে টিকটক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ইউরোপিয়ান কমিশনও তাই করেছে।

নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ের কারণে বিবিসিও তাদের কর্মীদের কর্পোরেট ফোন থেকে এই অ্যাপটি ডিলিট করার পরামর্শ দিয়েছে।