ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক চুরি!

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক চুরি!

ফাইল ফটো

করোনাকালীন বন্ধে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটেই চলেছে। এসব ঘটনায় নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আবাসিক কক্ষের তালা ভেঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার্য সামগ্রীর ছাড়াও  বিভিন্ন ভবন থেকে নির্মাণ সামগ্রী চুরি হয়েছে। এসব চুরির ঘটনায় জড়িত কয়েকজন চিহ্নিত হলেও কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় চুরির ঘটনা ঘটেই চলেছে। ফলে কক্ষে থাকা মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা। বারবার চুরির ঘটনায় কর্তৃপক্ষের অবহেলাকেই দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের কয়েকটি কক্ষে তালা ভেঙ্গে চুরির ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার সাদ্দাম হোসেন হলের ২১৭ নম্বর কক্ষে চুরির ঘটনা ঘটে। নাহিদ নুর নামের ওই কক্ষের ভূক্তভোগী আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, হল থেকে তাঁর মালপত্র আনতে গেলে কক্ষের তালা ভাঙ্গা অবস্থায় দেখতে পান। কক্ষে ভিতরে আলমারী, ট্রাঙ্কের তালা ভেঙ্গে তাঁর বই, জামা কাপড়, অন্যান্য ব্যবহার্য সামগ্রী চুরি হয়েছে বলে জানান তিনি। পরে এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী হল প্রভোস্ট ও প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়াও একই হলের আরোও কয়েকটি কক্ষের তালা ভেঙ্গে শিক্ষার্থীদের মালপত্র চুরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার পর হলে গিয়ে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের কক্ষ ছাড়াও হলের কয়েকটি গোসলখানা থেকে পানির ট্যাপ ও বিভিন্ন লোহার অংশ চুরি হয়েছে।

জানা যায়, এরআগে গত ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হল থেকে লক্ষাধিক টাকা মূল্যের সাবমারসিবল পাম্প চুরির ঘটনা ঘটে। এর কিছু দিন পর শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১২০ নম্বর কক্ষ থেকে বৈদ্যুতিক পাখা, ব্যাগ, পোশাকসহ নিত্য ব্যাবহার্য সামগ্রী চুরি হয়। এ ছাড়াও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল থেকে ছাত্রীদের অলঙ্কার ও পোশাক চুরি এবং রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের পাশ থেকে দুই ভ্যান টাইলস ও আট কার্টন বৈদ্যুতিক তার চুরিসহ বিভিন্ন ভবন থেকে নির্মাণ সামগ্রী চুরির ঘটনা ঘটে।

এ দিকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে চুরি করতে এলে এক কিশোরকে আটক করে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা। ওই কিশোর প্রক্টরিয়াল বডির কাছে পাম্প ও টাইলস চুরির সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে এবং চুরির ঘটনায় জড়িত অন্যদের নাম প্রকাশ করে। পরে ওই কিশোরকে ইবি থানায় সোপর্দ করা হলেও সকালেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের দাবি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিদের অবহেলা ও সঠিকভাবে দায়িত্বপালন না করার কারণেই এসব চুরির ঘটনা ঘটছে। জানা যায়, বন্ধ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে জোরালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও হলের প্রাচীরগুলো একদমই অরক্ষিত থাকে। ফলে যে কেউ প্রাচীর টপকে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে। এ ছাড়াও প্রতিদিন দুই শিফটে একজন করে আনসার হলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। রাতের শিফটে থাকা আনসার সদস্য নির্দিষ্ট সময় পর ঘুমিয়ে পড়েন।  তখন হল পুরোপুরি অরক্ষিত হয়ে পড়ে।

চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, সাদ্দাম হলের চুরির ঘটনায় আমি এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। আগের ঘটনাগুলোয় অভিযুক্তরা কেন ছাড় পেয়ে যাচ্ছে তা জানতে গতকালও থানায় কথা বলেছি। চুরি বন্ধে হলের নিরাপত্তা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. তপন কুমার জেয়ার্দার বলেন, হলগুলোতে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ঘটনা ঘটেছে। ক্যাম্পাসের পকেট গেটগুলোসহ বিভিন্নভাবে ভেতরে ঢোকার ব্যবস্থা থাকায় এটা বন্ধ করা মুশকিল। আর পুরো হল এলাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনাও কঠিন। হলগুলোতে নিজস্ব গার্ড নেই। আনসারদের উপর ভরসা করতে হয়। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় হলের ফান্ডিংয়ে সমস্যা হচ্ছে। এজন্য ইচ্ছে থাকলেও বেশী আনসার নিতে পারছিনা।