রূপপুরের পরমানু চুল্লিপাত্র রাশিয়া থেকে পাকশীর পদ্মায়

রূপপুরের পরমানু চুল্লিপাত্র রাশিয়া থেকে পাকশীর পদ্মায়

রাশিয়া থেকে আগাত রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লিপত্র

রাশিয়া থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের মূল যন্ত্র রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল (চুল্লিপাত্র) রূপপুর প্রকল্প এলাকার পদ্মার পাকশীতে এসে পৌঁছেছে। একটি স্টিম জেনারেটরও নিয়ে আসা হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) প্রকল্প এলাকার নবনির্মিত জেটিতে নোঙ্গর করেছে চুল্লিপাত্র এবং জেনারেটরবাহী বিশেষায়িত বার্জ। রূপপুর প্রকল্পের জন্য নির্মিত নদী বন্দরের জেটিতে এই যন্ত্র নামানেরা সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। সরেজমিনে চুল্লিপাত্র এবং জেনারেটরবাহী বিশেষায়িত বার্জ প্রকল্পের নবনির্মিত জেটিতে নোঙর করা অবস্থায় দেখা গেছে।

নৌবাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় এটি মংলা বন্দর থেকে রূপপুরে আনা হয়। যন্ত্র দু’টি নির্মাণ করা হয়েছে রাশিয়ার বৃহত্তম নিউক্লিয়ার শিল্প এলাকা ভোলগাদোনস্কে। চুল্লিপাত্রটির ওজন ৩৩৩ দশমিক ৬ টন এবং স্টিম জেনারেটরের ওজন ৩৪০ টন। এর আগে আগষ্টের শেষ দিকে রাশিয়ার পেট্রোজাবাদ বন্দর থেকে যন্ত্র দু’টি নিয়ে বিশেষ জাহাজ বাংলাদেশে রওনা দেয়। ১৪ হাজার কিলোমিটার আন্তর্জাতিক নৌ-পথ পাড়ি দিয়ে সেগুলো ২০ অক্টোবর মংলা বন্দরে পৌঁছায়।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এআরবি’কে (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরমাণু বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন) বলেন, ‘রাশিয়া থেকে এতপথ পাড়ি দিয়ে যন্ত্রগুলো রূপপুরে পৌঁছানোর বিষয়টিতে প্রকল্পটি নিয়ে জনগণ আরও আস্থা পাবে। এটি রাশিয়ায় বিখ্যাত নদী ভোলগা থেকে বাংলার আরেক নদী পদ্মায় আসতে বেশ সময় লেগেছে।’ তিনি আরও জানান, ‘রাশিয়ায় কয়েকটি শহরে রূপপুরের সব ধরণের যন্ত্রপাতি সময়ের সাথে তাল মিলিয়েই তৈরি হচ্ছে। এর মাধ্যমে পরমাণু প্রযুক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আরো একধাপ এগিয়ে গেল দেশ।’

চুক্তি অনুযায়ী দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২২ এবং দ্বিতীয়টি ২০২৩ সালে নির্মাণ শেষ করবে রাশিয়ান ঠিকাদার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট। যথাক্রমে পরের বছর থেকেই পরমাণু জ্বালানি ইউরোনিয়াম লোড করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করবে। ইতিমধ্যে রূপপুরে প্রথম ইউনিটের ভৌত কাঠামোর কাজ প্রায় শেষ হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক ও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মো. শৌকত আকবর এআরবি’কে বলেন, ‘নতুন বছরের শুরুতেই এগুলোকে রূপপুরের ভৌত কাঠামোর মধ্য স্থাপন করা হবে। সব ঠিক থাকলে, আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল ওই ভৌত কাঠামোর ভেতর স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর কাঠামোর উপরিভাগে ছাদ (বিশেষ ডোমের) নির্মাণ কাজ শুরু হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসরণ করে নির্ধারিত সময়সূচি ঠিক রেখেই কাজ চলছে রূপপুরে। করোনা মহামারিতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুরোদমে কাজ চলছে রূপপুরে।’ রাশিয়ার ঋণ ও দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ব পরমাণু সংস্থা-রোসাটমের কারিগরি সহায়তায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে দেশের প্রথম এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। জনবল প্রশিক্ষণসহ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা; যার ৯০ ভাগ ঋণ সহায়তা দিচ্ছে রাশিয়া।