কুবি শিক্ষক সমিতি নির্বাচন: একাংশের পাল্টা নির্বাচন কমিশন গঠন

কুবি শিক্ষক সমিতি নির্বাচন: একাংশের পাল্টা নির্বাচন কমিশন গঠন

ফাইল ছবি।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ-২০২১ এর নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন গঠন হওয়ার তিন দিন পর স্বেচ্ছাচারিতা ও গঠনতন্ত্র ভঙ্গের অভিযোগ তুলে পাল্টা নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন শিক্ষকদের একাংশ। 

বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে পৃথক দু'টি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা তিন সদস্যের এ কমিশন গঠনের বিষয়ে নিশ্চিত করেন।

এদিকে গত ৩০ নভেম্বর গঠিত নির্বাচন কমিশনকে একমাত্র বৈধ কমিশন দাবি করে কার্যনির্বাহী পরিষদ ২০২০-এর ১৫ জনের মধ্যে আটজন
স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবাদলিপি প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যনির্বাহী কমিটি সকল শর্ত মেনে সাধারণ সভার সকল শিক্ষকের মতামতের ভিত্তিতে ৩০ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন গঠন করে। এ বিজ্ঞপ্তিতে তারা ৩ ডিসেম্বরের নির্বাচন কমিশনকে অবৈধ ঘোষণা করে।

জানা যায়, গত ৩০ ডিসেম্বর শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে গত ১৩ ডিসেম্বর নির্বাচন করার জন্য রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. রায়হান উদ্দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নকীবুন নবী এবং ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সিদ্দিকুর রহমানকে নির্বাচন কমিশনার করে কমিশন গঠন করা হয়। সেই নির্বাচন কমিশন গত ২ ডিসেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে।

এরপর বৃহস্পতিবার সমিতির একাংশ গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল হককে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ফার্মেসী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. এনামুল হক এবং রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জুলহাস উদ্দিনকে সহকারী নির্বাচন কমিশনার করে পাল্টা একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে। শিক্ষক সমিতির একাংশের গঠিত এ নির্বাচন কমিশনও ১৩ ডিসেম্বর নির্বাচন করার ঘোষণা দেন।

শিক্ষক সমিতির একাংশের নেতৃত্ব দেওয়া বর্তমান পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. স্বপন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘আমরা ফেডারেশনের সভার জন্য অপেক্ষা করায় দেরি করেছি। উনারা মাত্র এক ঘন্টার ব্যবধানে সভা ডেকেছেন। এটা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। নির্ধারিত সময়ের পর নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে করোনাকালীন সংকটে ফেডারেশনের ১ তারিখের সভার সিদ্ধান্তের জন্যই আমাদেরকে এটা উপেক্ষা করতে হয়েছে।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি রশিদুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রের ১০-এ খ ধারা অনুযায়ী ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হয়। তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে ৩০ নভেম্বর গঠন হওয়া কমিশনকে উপেক্ষা করে অবৈধভাবে আরেকটি কমিশন গঠন করে। এছাড়া গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভা আহবানের ক্ষেত্রে সভাপতির পরামর্শ নিতে হয়। তাও তারা নেয়নি। এছাড়া আমার স্বাক্ষরকে তারা জালিয়াতি করেছে। এটা অপরাধ।

তিনি আরও বলেন, ‘বিজ্ঞপ্তির প্যাডটিরও অনুমোদন নেই। নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এসময় এক ঘণ্টার ব্যবধানে সভা ডাকা যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘৩০ তারিখের কার্যনির্বাহী সভার বিষয়ে আগের দিনের সভায়ই বলা হয়েছে যে, সাধারণ সভা শেষে ৩০ তারিখের মধ্যেই কমিশন গঠন করতে হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ওইদিনই কমিশন গঠনের শেষদিন ছিল।

এদিকে শিক্ষক সমিতির পাল্টাপাল্টি নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি শিক্ষকদের জন্য বিব্রতকর বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন শিক্ষক। একইদিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কে কোথায় ভোট দেবে এ নিয়েও সিদ্ধান্তহীনতায় তারা। এছাড়া একই স্থানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি কোনভাবেই কাম্য নয়। তাদের দুই পক্ষেরই উচিৎ সাধারণ সভা ডেকে সকল শিক্ষকের মতামতের ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। এটি সকলের জন্য শুভকর হবে।