হোয়াইটওয়াশ এড়ালো শ্রীলঙ্কা, ৯৭ রানের জয়

হোয়াইটওয়াশ এড়ালো শ্রীলঙ্কা, ৯৭ রানের জয়

হোয়াইটওয়াশ এড়ালো শ্রীলঙ্কা, ৯৭ রানের জয়- সংগৃহীত ছবি

শেষটা রাঙাতে পারলো না বাংলাদেশ। পূরণ হলো না লঙ্কানদের হোয়াইটওয়াশ করার ইচ্ছাও। বরং ওয়ানডে সিরিজের শেষটা হলো বাংলাদেশের খুবই বাজে। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে শুক্রবার বাংলাদেশকে ৯৭ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। প্রবল দাপটে এই জয়ে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ালো লঙ্কান শিবির।

মিরপুরে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে কুশল পেরেরার সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ২৮৬ রান করে শ্রীলঙ্কা। জবাবে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১৮৯ রানে, ৪২.৩ ওভার। টানা দুই ম্যাচ জেতায় ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় বাংলাদেশের।

বড় লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটাই বাজে বাংলাদেশের। দলীয় ৯ রানের মধ্যে নেই দুটি উইকেট। বিদায় নেন সাকিব ও তরুণ নাঈম শেখ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে দুশমন্থ বলটি ছিল অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে। নাঈম ড্রাইভ খেললেন শরীর থেকে অনেক দূরে, পা নড়েনি সামান্যও। ব্যাটের কানায় লেগে বল একমাত্র স্লিপের হাতের। গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হলেও সেই ম্যাচে ব্যাটিং পাননি নাঈম। এবার সেই সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি।

ইনিংসে তৃতীয় ওভারে বিদায় নেন সাকিব আল হাসান। তিনিও চামিরার বলেই ক্যাচ দেন স্লিপে। সাত বলে চার রান করেন তিনি। দলীয় ২৮ রানে নেই তামিমেরও উইকেট। তিনিও চামিরার শিকার। ২৯ বলে ১৭ রান করে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

২৮ রানে তিন উইকেট হারানো বাংলাদেশকে কক্ষে ফেরানোর চেষ্টা করেছেন মুশফিক, মোসাদ্দেক ও মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু তাদের লড়াই যথেষ্ট ছিল না জয়ের জন্য। চামিরা, হাসারাঙ্গা আর মেন্ডিজদের তোপে বাংলাদেশ অল আউট হয় ১৮৯ রানে।

এমন ম্যাচ জিততে দরকার ছিল বড় জুটি। সেটা হয়নি। সবচেয়ে বড় জুটি মুশফিক-মোসাদ্দেকের ৫৬ রান। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক এদিন ফেরেন ২৮ রানে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তৃতীয় ফিফটির দেখা পেয়ে নিজের নামের কিছুটা সুবিচার করেন মোসাদ্দেক। ৭২ বলে ৫১ রানের ইনিংসে মোসাদ্দেক হাকিয়েছেন তিনটি চার ও একটি ছক্কা।

আফিফ ১৬ রান করে সাজঘরে। তবে ফিফটি করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৬৩ বলে দুটি চার ও এক ছক্কায় ৫৩ রান করেন তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তার এটি ২৫তম ফিফটি। লোয়ার অর্ডারে মিরাজ, তাসকিন, শরিফুল ও মোস্তাফিজ ছুতে পারেননি দুই অঙ্কের রান।

বল হাতে শ্রীলঙ্কার হয়ে দুর্দান্ত করেন দুশমন্থ চামিরা। ৯ ওভারে এক মেডেনে দেন মাত্র ১৬ রান। উইকেট পান ৫টি। হাসারাঙ্গা ও মেন্ডিজ দুটি, অভিষিক্ত বিনুরা ফার্নান্দো এক উইকেট পান।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নামা লঙ্কানদের শুরুটা ছিল উড়ন্ত। অধিনায়ক কুশল পেরেরার সাথে গুনাথিলাকা। ১০ ওভারে দলটি তোলে ৭৭। লঙ্কান ওপেনিং জুটি ভাঙতেই পারছিল না কেউ। ১২তম ওভারে সফল আগের দুই ম্যাচে উইকেট না পাওয়া তাসকিন আহমেদ। বিদায় গুনাথিলাকা। ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে বল আঘাত হানে স্টাম্পে। ভাঙে ৬৮ বল স্থায়ী ৮২ রানের জুটি।

৩৩ বলে পাঁচ চার ও এক ছক্কায় ৩৯ রান করেন গুনাথিলাকা। একই ওভারের ষষ্ঠ বলে সাফল্য পান তাসকিন। পাথুন শানাকা ক্যাচ তুলে দেন উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসে। ৪ বল খেললেও রানের খাতা খুলতে পারেননি শানাকা।

এরপর লঙ্কানদের বড় স্কোরে বড় ভূমিকা রাখেন অধিনায়ক কুশল পেরেরা। মেন্ডিজের সাথে ৬৯ ও ডি সিলভার সঙ্গে ৬৫ রানের জুটি লঙ্কানদের দেয় বড় স্কোরের ভিত। এর মধ্যে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি পেয়ে যান লঙ্কান অধিনায়ক পেরেরা। যদিও কয়েকবার জীবন পান তিনি। প্রথম জীবন পান ব্যক্তিগত ৬৬ রানে। সাকিবের বলে কঠিন ক্যাচটা নিতে পারেননি মোস্তাফিজ।

ব্যক্তিগত ৭৯ রানের মাথায় সাকিবের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে উড়িয়ে মারেন পেরেরা। শর্ট মিড উইকেট থেকে আফিফ হোসেন লং অনের দিকে ছুটে ব্যর্থ হন লুফে নিতে। ব্যক্তিগত ৯৯ রানেও লাকি পেরেরা। মোস্তাফিজের স্লোয়ার বল লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ তুলে দেন। এবার ব্যর্থ মাহমুদউল্লাহ। পরের বলেই পেরেরা পূরণ করেন সেঞ্চুরি।

তিন দফায় জীবন পেয়ে অবশেষে আউট হন কুশল পেরেরা। লঙ্কান অধিনায়ককে ১২০ রানে থামান তরুণ পেসার শরিফুল। ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ। ততক্ষণে লঙ্কানদের স্কোর ২১৬, ওভার ৩৯.২। ১২২ বলের ইনিংসে ১১টি চার ও একটি ছক্কা হাকান তিনি। এর আগে ২২ রানে তাসকিনের বলে তামিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কুশল মেন্ডিজ।

এরপর নিরোশান ডিকভেলা ও হাসারাঙ্গা দ্রুত বিদায় নিলেও শ্রীলঙ্কার স্কোর থেমে থাকেনি। ধনাঞ্জয়ার ব্যাটে চ্যালেঞ্জং স্কোরে থামে সফরকারীরা। ৭০ বলে ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন ধনাঞ্জয়া।

বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে চারটি উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ। শরিফুল পান এক উইকেট। ১০ ওভার করে বল করলেও উইকেটের দেখা পাননি মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসান। সবাই রান দিয়েছেন পঞ্চাশের নিচে।