কংগ্রেস, শিবসেনা, এসপি, আপ... এক আলাপনে মমতার পাশে সব বিরোধী

কংগ্রেস, শিবসেনা, এসপি, আপ... এক আলাপনে মমতার পাশে সব বিরোধী

আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়-

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সদ্য সাবেক মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত ক্রমশ দেশটির জাতীয় স্তরের বিরোধী রাজনীতির অন্যতম অস্ত্র হয়ে উঠতে চলেছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আগেই এই প্রসঙ্গে মোদী সরকারের কড়া সমালোচনা করে বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল। আজ সরব হয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিরোধী নেতারা। এক সুরে তাঁদের অভিযোগ, দেশের সংবিধান এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার উপর বারবার আঘাত হানছে মোদী সরকার। তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের কথায়, “বিষয়টি আর শুধুমাত্র বাংলার নয়। এটি এখন দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত রাখার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব ঠিক থাকলে অগস্ট মাসে বসবে সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন। সেখানে আমরা আলাদা করে নয়, সব বিরোধী দলই এই নিয়ে স্বর তুলবে।”

তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দুরশেখর রায় এ দিন টুইট করেছেন, “তিন বছরের জন্য অবসরপ্রাপ্ত মুখ্যসচিবকে তাঁর মুখ্য উপদেষ্টা করার সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীর মাস্টার স্ট্রোক। মোদী সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে একজোট হতে সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে আহ্বান করা হচ্ছে।” তাঁর কথায়, “হাম লড়েঙ্গে, হাম জিতেঙ্গে, হাম জিয়েঙ্গে এখন যুদ্ধের ডাক। এই আবেগকে কুর্নিশ জানাই।” সুখেন্দুবাবুর এই গোটা টুইটটিকে তুলে ধরে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ রিটুইট করে লিখেছেন, “সুখেন্দুবাবুর প্রতি সহমর্মিতা রইল।”

সোমবারও আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নর্থ ব্লকে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠি এসেছিল নবান্নে। তার পরই সাংবাদিক বৈঠক করে আলাপনকে নিজের মুখ্য উপদেষ্টা পদে নিয়োগের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, কেন্দ্রের এই আচরণের প্রতিবাদে তিনি দেশের বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী নেতাদের একজোট হওয়ার ডাক দিয়েছেন। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, শুধু ডাক দেওয়াই নয়, তিনি জাতীয় স্তরে বিভিন্ন বিরোধী দলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথাও বলছেন।

তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়েছে শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে, এসপি-র অখিলেশ সিংহ যাদব, আপ-এর অরবিন্দ কেজরীবালের মতো নেতাদের। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দফায় দফায় নেতারা যোগাযোগ করছেন তৃণমূলের সঙ্গে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ নেতা কেজরীবাল এই ঘটনাকে ঘিরে তৈরি হওয়া কেন্দ্র-রাজ্য লড়াই প্রসঙ্গে টুইটারে বলেছেন, “এটি রাজ্য সরকারের সঙ্গে লড়াই করার সময় নয়। বরং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একযোগে করোনাভাইরাস মোকাবিলার করার কথা।” শিবসেনার রাজ্যসভার উপনেতা প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী টুইট করেছেন, “বাংলার বাঘিনী: ১, দিল্লির কাগুজে বাঘ: ০!”

পশ্চিমবঙ্গের ভোটের সময় থেকেই মমতার পাশে রয়েছেন এসপি নেতা অখিলেশ। এই ঘটনা নিয়েও তৃণমূল নেতৃত্বকে সমর্থন করছেন তিনি। দলের পক্ষ থেকে কিরণ্ময় নন্দ জানিয়েছেন “এটা প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি ছাড়া কিছুই নয়। আমরা সম্পূর্ণ ভাবে এই বিষয়টি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে রয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে মোদী-শাহের সরকার।”

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মমতা সরকারের সমালোচনা করে থাকেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তাঁকেও বিষয়টি নিয়ে বিজেপির সমালোচনা করতে দেখা যাচ্ছে। তৃণমূল প্রসঙ্গে তিনি সুর কিছুটা নরম করেছেন বলেই মনে করছেন রাজনীতির লোকজন। অধীর আজ বলেন, “এআইসিসি এ ব্যাপারে বিবৃতি দিয়ে দিয়েছে, ফলে আমার তো আলাদা করে বলার কিছু নেই। এটুকুই বলতে পারি, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত যোগ্য আমলা। পিএসি সংক্রান্ত বৈঠক করতে কলকাতা গিয়েছিলাম। তিনি দেখা করেছিলেন, কথা বলে আমার ভাল লেগেছে।” -আনন্দবাজার