অনলাইনে পণ্য প্রতারণায় উপার্জন

অনলাইনে পণ্য প্রতারণায় উপার্জন

অনলাইনে পণ্য প্রতারণায় উপার্জন

আজকাল অনেক ভাইবোনকে দেখা যায়, ছোট-বড় অনেক ধরনের ব্যবসা অনলাইনে করছেন। ব্যবসায় পণ্যের প্রচার-প্রচারণার ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোসাল মিডিয়াতে করে থাকেন। এই প্রচার-প্রচারণা ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টি থেকে নিষিদ্ধ নয়। মৌলিকভাবে এটি অনুমোদিত। আপনার যেকোনো পণ্যে প্রচার আপনি করতেই পারেন কিন্তু সে ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়তের মৌলিক কোনো নীতিমালা যেন লঙ্ঘন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে একটি অন্যায় আমাদের চোখে পড়েছে, যা হয়তো অনেকে না জেনে করে যাচ্ছি। যার ফলে আমরা হারাম এবং কবিরা-গোনায় লিপ্ত হয়ে যাচ্ছি। সেটি হলো আপনি কোনো পণ্যের প্রচারণা চালানোর সময় যে ধরনের মান, ক্যাটাগরি, কার্যক্ষমতা ইত্যাদি উল্লেøখ করেছেন পণ্য ডেলিভারি দেয়ার সময় সে রকম না দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামি বা নিচু মানের পণ্য ডেলিভারি দিলেন। সে ক্ষেত্রে আপনি স্পষ্ট প্রতারণার গুনাহে গুনাহগার হলেন।

ধরুন, কেউ একজন আমের ব্যবসা করছেন। আমগাছ থেকে নামিয়ে কিছু ভালো আম বাছাই করে নিয়ে সেগুলোর ছবি তুলে ফেসবুকে (অনলাইনে) পোস্ট করলেন এবং বললেন, ‘আমগুলো মাত্র নামানো হয়েছে। এত টাকা কেজিতে বিক্রি করা হবে।’ এই ছবি মূলত ক্রেতার কাছে একটা বার্তা যায় যে, আপনি যেই আমগুলো নেবেন সেই আমগুলো এ রকমই হবে। অথচ আপনি ডেলিভারি করার সময় ক্রেতাকে ভালো-মন্দ মিশিল করে গণহারে দিচ্ছেন।

তাহলে আপনি দেখাচ্ছেন একটা কিন্তু বাস্তবে দিচ্ছেন ভিন্নটা। এটা কিন্তু প্রতারণা। আর এভাবে ব্যবসা করাকে নবী করিম সা: নিষিদ্ধ করেছেন। রাসূল সা: একবার বাজারে গেলেন। কোনো ব্যক্তি খাদ্যশস্য বিক্রি করছিলেন। এ সময় ওই ব্যক্তি খাদ্যশস্যের স্তূপের ওপর অংশে কিছু ভালো খাদ্যশস্য রেখে দিয়েছিলেন। রাসূল সা: তার স্তূপের ভেতরে হাত প্রবেশ করালেন এবং দেখলে ভেতরে ভেজা। তখন রাসূল সা: ওই ব্যক্তিকে বললেন, তুমি ভালো কিছু উপরে রেখেছ কিন্তু ভেতরে ভেজা। এর কারণ কী? তখন ওই লোকটি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ; বৃষ্টিতে ভিজে গেছে তাই আমি ওপর দিয়ে কিছু শুকনো খাদ্যশস্য দিয়েছি। তখন রাসূল সা: বললেন, ‘তুমি কেন তোমার ভেজা অংশ উপরে রাখোনি? ক্রেতা পছন্দ না হলে ক্রয় করতেন না।’ তারপর রাসূল সা: বললেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করে সে আমার উম্মত হতে পারে না।’

প্রিয় পাঠক, এ হাদিস থেকে আমরা বলতে পারি, সোসাল মিডিয়ায় যারা একটা দেখাচ্ছেন কিন্তু ডেলিভারি দিচ্ছেন অন্যটা কিংবা দেখাচ্ছেন যে মানের পণ্য কিন্তু ডেলিভারি দিচ্ছেন তার চেয়ে কম মানের পণ্য তাহলে আপনি প্রতারণা করছেন।
তবে অনলাইনে পোস্ট করা পণ্যের সেই ছবি যদি প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করা হয় তবে সেটা আলাদা কথা। ধরুন, আপনি আমের ব্যবসা করছেন, একটা আমের ছবি আপলোড করছেন। সেখানে লিখেছেন ফাইল ফটো বা সংগৃহীত বা সবাই জানে যে এই আমটা ডেলিভারি করা হবে না। দর্শকরা সবাই জানেন যে, ছবিতে দেখানো আমটি মূলত প্রতীকী ছবি। তাহলে তা প্রতারণার মধ্যে পড়বে না।

এ ছাড়া আপনি যেভাবেই পণ্যটিকে উপস্থাপন করেন আর যদি তার মাধ্যমে ক্রেতার কাছে এমন বার্তা পৌঁছায় যে, পণ্যটি কিনলে আমি এ রকমই পাবো তাহলে তা প্রতারণা হবে। এভাবে আরো নানা রকম অপরাধের সাথে আমরা জড়িয়ে যাচ্ছি প্রচার-প্রচারণা করতে গিয়ে।তাই অনলাইনে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে যে, আমার কোনো আচরণ ক্রেতার সাথে প্রতারণার শামিল হচ্ছে কি না? আমি মিথ্যাবাদিতার কাতারে শামিল হচ্ছি কি না?

রাসূল সা: বলেছেন, ‘যদি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই সত্যবাদিতার পরিচয় দেয় এবং ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়ে কোনো কিছু গোপন না করে সব কিছু প্রকাশ করে দেয় তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা বরকত দেন। আর যদি ক্রেতা-বিক্রেতা কোনো কিছু লুকায় তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের কল্যাণকে ধ্বংস করে দেয়া হয়।’

রাসূল সা: বলেন, ‘নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া যেরকম জায়েজ নেই তেমন অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জায়েজ নেই।’ সুতরাং আমরা এমন ব্যবসা করব না যাতে ক্রেতার সাথে অন্যায় বা মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিতে হয়।