জিলকদ মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত

জিলকদ মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত

জিলকদ মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত

আরবি ১২ মাসের মধ্যে একাদশ মাসটি হলো জিলকদ। যার আরবি নাম ‘জুল-আল-কাআদাহ’। ফারসিতে বলা হয় ‘জিলকাআদা’, উর্দুতে ‘জিলকাআদ’ বাংলায় ‘জিলকদ’। ‘জুলকাআদাহ’ শব্দের অর্থ হলো বসা, স্থির হওয়া বা বিশ্রাম নেয়া।আরবদের সমকালীন অবস্থার দিকে লক্ষ করেই প্রতিটি মাসের নামকরণ করা হতো। আর এ মাসটির নাম জিলকদ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, এই সময় আরবের লোকজন বাণিজ্য ও যুদ্ধ থেকে ফিরে আসত।

ঋতুর পরিবর্তনে এই সময়টায় স্থানীয় আরবের লোকজনের হাতে তেমন কোনো কাজ থাকত না। আরব সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা এই মাসে যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বিরত থাকত এবং অন্যায়-অপরাধ থেকেও নিবৃত্ত থাকত। এসব কারণেই এই মাসের নাম জিলকদ। (লিসানুল আরব, ইবনে মানজুর)

যদিও জিলকাদ মাস বিশ্রামের মাস, তথাপি এ মাসের রয়েছে স্মরণীয় ঘটনা, রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব, ফজিলত ও আমল। এটি হজের তিন মাসের, (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) মধ্য দ্বিতীয় মাস। আর, হারাম বা নিষিদ্ধ চার মাসের (মহররম, রজব, জিলকদ, জিলহজ) তৃতীয় মাস। তা ছাড়াও এ মাসটি ঈদুল ফিতর (শাওয়াল মাস) ও ঈদুল আজহার (জিলহজ মাস), এ গুরুত্বপূর্ণ দুটি উৎসব বা মাসের মাঝামাঝিতে অবস্থিত।

জিলকদ মাস আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মুসলমানদের জন্য বিশ্রামের মাস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। কেননা, এ মাসটির আগের চার মাস, আর পরবর্তী দুই মাস ইবাদতের ব্যস্ততম মাস। তথাপি আমাদের উচিত বিশ্রাম বা অবসরের এ মাসটিকে অবহেলা না করা, সময়ের মূল্য দেয়া ও যথাসম্ভব ইবাদতে রত থাকা।

কেননা, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টিই করেছেন শুধু তাঁর ইবাদত করার জন্য। আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি জিন এবং মানুষকে এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা (শুধু) আমারই ইবাদত করবে।’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত ৫১ : ৫৬)তাই মুমিন-মুসলমানরা অবসর সময় পেয়ে হেলায় সময় কাটিয়ে না দেবে না, সে সময়ও ইবাদত করবে। এ সম্পর্কে অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা অবসর সময়ে ইবাদতের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘যখনই অবসর পাও দাঁড়িয়ে যাও, তোমার রবের ইবাদতে মশগুল হও।’ (সূরা ইনশিরাহ, আয়াত : ৭-৮)

তবে, যদিও এ মাসটিতে আল্লাহর পক্ষ থেকে স্পেসিফিক কোনো আমল নির্ধারণ করা হয়নি, তারপরও আমরা ফরজ আমলগুলোর পাশাপাশি কিছু নফল আমল করতে পারি। আর তা হলো

১. প্রতি মাসের মতো এই মাসেও নফল রোজা (১, ১০, ২০, ২৯ ও ৩০) রাখতে পারি।
২. চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিজের সুন্নত রোজা রাখা।
৩. প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার সুন্নতে নববি রোজা পালন করা।
৪. প্রতি শুক্রবার নফল রোজা রাখা।
৫. সালাতুত তাসবিহ এবং প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নফল নামাজ (তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত বা দুহা, জাওয়াল ও আউওয়াবিন) পড়া।
৬. বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা।
৭. গরিব অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো, দান-সদকা করা। আর ইবাদত শুধু নামাজ, রোজা ইত্যাদি নয়। মুমিনের জীবনের প্রতিটি কাজই ইবাদত। তাই সকল কাজ ইসলামী পন্থায় করতে হবে।