রংপুরে করোনা হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কট

রংপুরে করোনা হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কট

রংপুরে করোনা হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কট

রংপুর বিভাগের একামাত্র করোনা হাসপাতালটিতে আর কোনো বেড (শয্যা) খালি নেই। এদিকে শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টা অক্সিজেন সঙ্কট ছিল। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন রোগীর স্বজনসহ খোদ স্বাস্থ্য বিভাগ।

হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকায় উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে শনিবার দুপুরে এক জরুরি বৈঠকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডটি করোনা ডেডেকিটেড ওয়ার্ড হিসেবে চালুর ঘোষণা দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ।

রংপুর বিভাগের করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। শনিবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় রংপুরে করোনা বা কোভিড আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছে ১৪ জন। একই সময় নতুন আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫৩২ জন।

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, প্রতি মুহূর্তে করোনায় আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। অনেকের অবস্থা গুরুতর। শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে নিবির পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউতে রোগীর চাপ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে রংপুর বিভাগের একমাত্র করোনা হাসপাতালটিতে কোনো বেড খালি নেই। তাছাড়া অক্সিজেন সাপোর্ট বেড খালি নেউ একটিও। আইসিইউ আগেই শেষ হয়ে গেছে। ফলে নতুন আসা রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।এর মধ্যে শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার পর হাসপাতালটিতে অক্সিজেন সঙ্কট শুরু হয়। ভোরে চট্টগাম থেকে সিলিন্ডার আসার কথা থাকলেও সময় মতো তা পাওয়া যায়নি।

সকালে অক্সিজেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কসহ কর্তৃপক্ষকে উদ্বিগ্ন অবস্থায় দেখা যায় ফটকে। এরই মধ্যে বাইরে থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড় করে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হাসপাতালে ঢুকে পড়েন মাহবুব নামের এক রোগীর বড় ভাই। কর্তৃপক্ষ তাকে বুঝিয়ে বের করে দেন।

মাহবুব নামের ওই রোগীর বড় ভাই জানান, রাত থেকে অক্সিজেন সঙ্কট। সেটা আমাদের আগে জানানো হয়নি। সকালে জানতে পেরে আমি একটা অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেছি। তিনি বলেন, আমিও করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখানে গত বছর ভর্তি ছিলাম। অক্সিজেনের মজুদ সম্পর্কে এনাদের কাছে কোনো তথ্য না থাকায় মাঝে মধ্যেই অক্সিজেন সঙ্কট দেখা দেয়। এটা দেখা দরকার।

কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালটিতে মাত্র ১০টি আইসিইউ বেড। তার মধ্যে দু’টিতে ভেন্টিলেটর নেই। বাকি আটটি অনেক আগেই রোগী পূর্ণ হয়ে আছে।এদিকে বেড না পাওয়া ও অক্সিজেন সঙ্কটে উদ্বিগ্ন রোগীর স্বজনরা। তারা হাসপাতালের প্রধানফটকে অবস্থান করছেন। তবে সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালে দু’টি ট্রাকে করে রিজার্ভ অক্সিজেন সিলিন্ডার আনার ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। এতে স্বস্তি ফিরে পান ভর্তি রোগীর স্বজনরা।

আইসিইউতে বেড না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে রোগী
তবে গুরুতর অসুস্থরা আইসিইউতে বেড না পাওয়ায় হাসপাতাল ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। এর মধ্যে ইসলামপুর এলাকার খলিল নামের এক রোগীর ছেলে রিয়াজ বলেন, আমি তিন দিন আগে আমার বাবাকে ভর্তি করিয়েছিলাম। কিন্তু আইসিইউ পাইনি। আমার বাবার অবস্থা খুব খারাপ। এখানে জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউ বেড বাড়ানো দরকার।

এসব ব্যাপারে হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডা: নুরুননবী জানান, এখানে ১০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও মূলত অক্সিজেন সাপোর্ট আছে ৯১টিতে। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯৫ জন রোগী ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজনকে আমরা অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে পারছি না। পান্টাপাল্টি করে দেয়ার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, ভোর ৪টায় আমাদেরে অক্সিজেনবাহী গাড়ি আসার কথা ছিল। কিন্তু গাড়ি যথাসময়ে না আসায় আমরা খুব দ্রুত রিজার্ভ অক্সিজেন দিয়ে সরবরাহ স্বাভাবিক করেছি। এতে কিছুক্ষণের মধ্যে অনেক রোগী অক্সিজেন বঞ্ছিত ছিলেন। তবে আল্লাহর রহমতে কোনো অসুবিধা হয়নি। এখন অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক আছে।

ডা: নুরুননবী বলেন, আমরা সীমিত জনবল দিয়েই সেবা নিশ্চিত করছি। গত বছর ২০ এপ্রিল করোনা ইউনিট প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে এক হাজার ৪৮৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। এরমধ্যে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছে এক হাজার ২৪১ জন। মারা গেছে ১৫৮ জন।

জরুরি বৈঠক
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে শনিবার দুপুরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষে জরুরি বৈঠকে বসেন অধ্যক্ষ ডা: নুর-উন নবী, হাসপাতাল পরিচালক রেজাউল ইসলাম, বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিচালক আবু মো: জাকিরুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডা: হিরম্ব কুমার রায়সহ হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদ। প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন তারা। সেখানে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডটিকে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড ঘোষণাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ ডা: নুর-উন নবী স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালকের সাথে জুম মিটিং করেন।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা: আবু মো: জাকিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে এই বিভাগের করোনা পরিস্থিতি। শনিবার বিকেল পর্যন্ত এই বিভাগের আট জেলায় এক লাখ ৬১ হাজার ৬০১ জনের করোনা পরীক্ষা করে ২৭ হাজার ৬৯৮ জনের কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৫৫১ জন।