মুমিনের জীবনে সুন্নাহর গুরুত্ব

মুমিনের জীবনে সুন্নাহর গুরুত্ব

মুমিনের জীবনে সুন্নাহর গুরুত্ব

 

বিশ্বনবী সা: বিদায় হজের ভাষণে মুমিনদের জন্য সর্বশেষ নসিহত হিসেবে ঘোষণা করেন- ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ তোমরা এই দু’টিকে আঁকড়ে ধরে রাখবে ততক্ষণ তোমরা কেউ পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হলো আল্লাহ তায়ালার কিতাব ও আমার সুন্নাহ’ (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিস নম্বর-৩৩৩৮)।

আমাদের প্রথমে জানা দরকার সুন্নাহ শব্দের বিশ্লেষণ। সুন্নাহ শব্দটি আরবি, এর শাব্দিক অর্থ হলো- পথ, পদ্ধতি, নিয়মকানুন, রীতিনীতি (মিসবাহুল মুনির)। তবে আল মুফরাদাত গ্রন্থকার বলেন, সুন্নাতের অর্থ ব্যবহারভেদে ভিন্ন হতে পারে যেমন- রাসূল সা:-এর সুন্নাত বলতে প্রিয় নবী সা:-এর আদর্শকে বোঝায়। অর্থাৎ তাঁর সুমহান জীবনব্যবস্থাকে বোঝানো হয়। আবার আল্লাহর সুন্নাহ বলতে, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য যে নিয়ম পদ্ধতি দেয়া হয়েছে তা বোঝানো হয়। অর্থাৎ ওই পদ্ধতি যার মাধ্যমে মহান আল্লাহর আনুগত্য করা যায়। পবিত্র কুরআন-হাদিসে এ অর্থে বহু জায়গায় সুন্নাহর ব্যবহার লক্ষ করা যায়। (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৭৭)।

সুন্নাহ শব্দের পারিভাষিক অর্থ দাঁড়ায়, বিশ্বনবী সা:-এর কথা, কাজ ও সম্মতিসূচক সব কর্ম।সুন্নাহ হলো জীবন পরিচালনার পদ্ধতি : ভাবার বিষয় হলো, পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুর ক্ষেত্রে তার নির্মাতা যে নীতি নির্ধারণ করে দেয়, তাই হলো তা পরিচালনার সঠিক পদ্ধতি। কোনো ক্ষেত্রে নির্মাতা নিজে সে পদ্ধতি শিক্ষা দান করে থাকে, আবার কোনো ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিনিধিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সে নীতি বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বর্তমান উন্নত বিশে^র ‘মোবাইল ডিভাইস’ এটি তৈরি করার পর সঠিক নিয়মে ব্যবহারের জন্য কোম্পানি নিজেদের পক্ষ থেকে গাইডলাইন করতে প্রথমে এর সাথে লিখিত নীতিমালা দেয়।

তার পরও বোঝানোর জন্য রয়েছে কোম্পানির পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট ব্যক্তি (বিক্রেতা) যারা এ নীতিমালা বুঝিয়ে দেয়। এর পরও কোনো সমস্যা হলে রয়েছে সার্ভিসিং সেন্টার, সেখান থেকে পুনরায় সংস্কার করানো যায়। ঠিক তেমনি মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করার পর সঠিকভাবে জীবন পরিচালনার জন্য গাইডলাইন হিসেবে দান করেছেন পবিত্র কুরআন। আর এই গাইড বোঝানোর জন্য দিয়েছেন নবী-রাসূল সা: এবং বোঝানোর পরও আল্লাহর কোনো আদেশ-নিষেধ অমান্য করলে সংশোধনের জন্য রেখেছেন তওবার ব্যবস্থা।

সুন্নাহ পালনে মহান আল্লাহর নির্দেশ : পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে রাসূল সা: আপনি বলুন! যদি তোমরা আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাও, তবে তোমরা আমার অনুসরণ করো! তাহলে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অতীতের গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-৩১)। অন্য আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেন, রাসূল সা: তোমাদের যা আদেশ দেন তা তোমরা পালন করো, যা নিষেধ করেন তা থেকে তোমরা বিরত থাকো’ (সূরা হাশর, আয়াত-০৭)।

আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাসূল সা:-এর আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল’ (সূরা নিসা, আয়াত-৮০)। আমরা কেন অনুসরণ করব, কী আছে রাসূল সা:-এর আদর্শে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই রাসূল সা:-এর মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ’ (সূরা আহজাব, আয়াত-২১)। এ ছাড়া বিভিন্ন আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা সুন্নাহ পালনের প্রতি বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন। এর দ্বারা বোঝা যায়, মুমিন তার জীবনকে পূর্ণাঙ্গভাবে আল্লাহর হুকুম দ্বারা সাজাতে চাইলে সুন্নাহর কোনো বিকল্প নেই।


সুন্নাহ পালনে বিশ^নবী সা:-এর নির্দেশনা : বিশ্বনবী সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহকে জীবিত করবে/ভালোবাসবে (নিজের জীবনে ও সামাজিক জীবনে প্রতিষ্ঠিত করবে) সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে’ (কানজুল উম্মাল, হাদিস নং-৯৩৩, আল মুজামুল আউসাত, হাদিস নং-৯৪৩৯)। এর দ্বারা বোঝা যায়,  বিশ্বনবী সা:-এর অনুকরণের একমাত্র মাধ্যম হলো তাঁর রেখে যাওয়া সুন্নাহর অনুকরণ। সুন্নাহ ধরন ভেদে গুরুত্ব কমবেশি হতে পারে যেমন- ব্যক্তিজীবনে সুন্নাহ এবং পারিবারিক জীবনে ও সামাজিক জীবনে সুন্নাহ পালনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব সমান নয়, কিছু সুন্নাহ এমন আছে যার মাধ্যমে ইসলাম প্রসার হয় এবং ইসলামের সৌন্দর্য প্রকাশ পায় এমন সুন্নাহর গুরুত্ব নিশ্চয়ই ব্যক্তি জীবনের সুন্নাত ইবাদতের চেয়ে বহুগুণ বেশি।

যার কারণে আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি ফেতনার সময় আমার একটি সুন্নাহকে প্রতিষ্ঠিত করবে সে ১০০ শহীদের সওয়াব পাবে।’ অন্য হাদিসে বিশ্বনবী  সা: বলেন, ‘তোমাদের ওপর জরুরি হলো, তোমরা আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাহকে অনুসরণ করবে’ (ফাতহুল বারি)।

মুফতি জাকারিয়া মাসউদ : ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট