ভাইকে বিজয়ী করতে সরকারি কলেজে শিক্ষকদের সঙ্গে এমপি টুকু পুত্রের বৈঠক !

ভাইকে বিজয়ী করতে সরকারি কলেজে শিক্ষকদের সঙ্গে এমপি টুকু পুত্রের বৈঠক !

ভাইকে বিজয়ী করতে সরকারি কলেজে শিক্ষকদের সঙ্গে এমপি টুকু পুত্রের বৈঠক !

অগামী ২৮ নভেম্বর পাবনা জেলার বেড়া পৌরসভা নির্বাচন। প্রচারণার শুরুতেই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে নির্বাচন কশিশনকে। আওয়ামীলীগ প্রার্থী আসিফ শামস রঞ্জন ও তার পিতা শামসুল হক টুকু এমপির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অভিযোগ এনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এই অভিযোগ করেছেন লিখিত আকারে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর কনিষ্ঠ ছেলে নাসিফ শামস রনি সম্প্রতি বেড়া সরকারি কলেজে অধ্যক্ষের কক্ষে কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে পৌর নির্বাচনে বড় ভাই রঞ্জনকে বিজয়ী করতে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণী  গোপন বৈঠক করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বৈঠকের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বেড়া সরকারী কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর ছোট ছেলে নাসিফ শামস রনি বেড়া সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক, ইছামতি কমার্শিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক, মনজুর কাদের মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মুস্তাফিজুর রহমান, জামায়াত নিয়ন্ত্রিত আলহেরা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হাকিমুল কবিরসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সাথে বৈঠক করছেন। 

নাসিফ শামস রনির অনুসারী জহির রায়হান সজল পুরো বৈঠক ফেসবুকে লাইভ করেন। ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগেও বিষয়টি জানিয়েছেন। পরে গণমাধ্যম কর্মীরা বিষয়টি জানতে চাইলে ভিডিও সরিয়ে ফেলা হয়।

বেড়া পৌর মেয়র পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফজলুর রহমান মাসুদ বলেন, স্থানীয় এমপি নিজ সন্তানকে বিজয়ী করতে এখতিয়ার বহির্ভূত ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তাদের প্রভাব খাটিয়ে তার  ছেলের পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করছেন। চাকরি বাঁচাতে ও মান সম্মানের ভয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা নৌকার প্রচারণায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বেড়া পৌরসভার বর্তমান মেয়র শামসুল হক টুকুর ভাই আব্দুল বাতেন বলেন,‘নির্বাচনী সভায় সংসদ সদস্যের উপস্থিতির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও স্থানীয় এমপি তা মানছেন না। তার উপস্থিতিতে চিহ্নিত সন্ত্রাসী  ময়ছের, হাকিম বস, রমজান, হান্নান বিভিন্ন সমাবেশে নৌকায় ভোট না দিলে এলাকা ছাড়া করার প্রকাশ্য হুমকি দিচ্ছে। আমার উপর সন্ত্রাসীদের দিয়ে হামলা করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ জানালেও মামলা নিতে বাধা  দেয়া হয়েছে।’স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিয়া আলমও একই ধরণের অভিযোগ করে বলেন,‘স্থানীয় এমপি এলাকায় উপস্থিত থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমি নির্বাচনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিতে প্রশাসনের নিকট দাবি জানাচ্ছি।’

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বেড়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নির্বাচনী বৈঠক নয়; আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে নাসিফ শামস রনির সাথে বৈঠক করেছি। নির্বাচনের বিষয়ে কোন আলাপ হয়নি। ভিডিও র বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুললে তিনি জানেন না বলে চুপ হয়ে যান। বৈঠকের ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা বিষয়ে আলাপ করার বক্তব্য দিলেও বিষয়টি অস্বীকার করেন অন্যান্য শিক্ষকরাও।নাসিফ শামস রনিও জলবায়ু বিষয়ে বৈঠক হয়েছে বলে দাবি করেন। ভিডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘ আমার বক্তব্য আমি বলেছি, কারো সাথে তর্কে জড়াতে চাইনা।’স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করে সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু বলেন, আমি কাওকে ভয়ভীতি প্রদর্শন কিংবা চাপ দেইনি। মিথ্যা অপপ্রচার করে নৌকার বিজয় আটকে রাখা যাবেনা।’

জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও বেড়া পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন,‘নির্বাচনী কাজে সরকারি অফিস ব্যবহার ও চাকরিজীবীদের নির্বাচনী কাজে জড়ানোর সুযোগ নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ করতে সবধরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।’