ত্রিপুরায় রাজনৈতিক উত্তেজনা, বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ

ত্রিপুরায় রাজনৈতিক উত্তেজনা, বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ

প্রতীকী ছবি।

তৃণমূল বনাম বিজেপি-র লড়াইয়ে আবার উত্তাল ভারতের ত্রিপুরা। ঘটনার সূত্রপাত শনিবার রাত থেকে, সোমবারও উত্তেজনা ছিল পুরোমাত্রায়। ত্রিপুরায় পুরসভা নির্বাচন আসন্ন। আগরতলায় তাই তৃণমূলের নেতা ও নেত্রীরা নিয়মিত যাচ্ছেন। প্রচার করছেন। যেমন, শনিবার পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম,  গায়ক-অভিনেতা ও সাবেক সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় ও অভিনেত্রী ও যুব তৃণমূলের সভাপতি সায়নী ঘোষের সভা ছিল পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে। ফিরহাদ হাকিমের অভিযোগ, সভার জায়গায় বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়া হয়। বিজেপি কর্মীরা হামলা চালায়।

সেখান থেকে সায়নী একটি আসামের নম্বরপ্লেটের গাড়ি করে হোটেলে ফিরছিলেন। সঙ্গে ছিলেন সুস্মিতা দেব। গাড়ির সামনে বিজেপি কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সেই বিক্ষোভ এড়িয়ে গাড়ি বেরোবার চেষ্টা করে। রাত এগারোটা নাগাদ পুলিশ তাদের হোটেলে যায়। সুস্মিতার সঙ্গে হোটেলের রিসেপশন থেকে পুলিশের কথা হয়। সুস্মিতা নীচে নামেননি।

রোববার সকাল পৌনে এগারোটা নাগাদ পুলিশ আবার হোটেলে আসে। এবার সায়নীর বিরুদ্ধে হিট অ্যান্ড রানের অভিযোগ নিয়ে। তার বিরুদ্ধে হত্যার চেষ্টার অভিযোগও আনা হয়েছে। পুলিশ সায়নীকে আগরতলা পূর্ব থানায় নিয়ে যায়। থানায় যান কুণাল ঘোষ, সুস্মিতা দেব, অর্পিতা ঘোষেরা। জেরার পর পুলিশ সায়নীকে গ্রেপ্তার করে।

রোববার থানার সামনেই বার দুয়েক সংঘর্ষ হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি কর্মীরা তৃণমূলের কর্মীদের উপর হামলা করেছে। গাড়ি ভাঙচুর করেছে। অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি। তারা বলেছে, তৃণমূলের কর্মীরাই হাঙ্গামা করেছে। তৃণমূল নেত্রী জয়া দত্ত ডয়চে ভেলের ফেসবুক লাইভে বলেছেন, ''সায়নীকে তার এক অনুগামী বলেছিলেন, 'খেলা হবে', তার জবাবে সায়নীও বলেছিলেন, 'খেলা হবে'। তাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও তো পশ্চিমবঙ্গে বলেছিলেন 'খেলা হবে'। সেটা বলা তো অপরাধ হতে পারে না।''

অভিষেক ত্রিপুরায়

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো ও বিধায়ক অভিযেক বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার আগরতলায় পৌঁছেছেন। এসেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও। অভিষেক আগরতলায় পদযাত্রা করতে চেয়েছিলেন। পুলিশ তার অনুমতি দেয়নি। তাকে ওরিয়েন্ট চৌমহনীতে প্রতীকী সভা করার অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। প্রতীকী সভা, কারণ, পুলিশ বলে দিয়েছে, সভা হতে পারে, কিন্তু ভিড় করা যাবে না। অভিষেক প্রতীকী সভা না করে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। 

সায়নীর সঙ্গে কথা বলতে ব্রাত্য বসু, অর্পিতা ঘোষেরা থানায় যান। কিন্তু পুলিশ জানায়, একমাত্র আইনজীবীদের সঙ্গেই সায়নী কথা বলতে পারবেন। কোনো নেতার সঙ্গে নয়। পরে তারা আদালতেও গেছেন সায়নীর জামিনের আবেদনের শুননির সময় উপস্থিত থাকতে।

নর্থ ব্লকের সামনে বিক্ষোভ

দিল্লিতে তৃণমূলের সাংসদদের একটি প্রতিনিধিদল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করে ত্রিপুরা নিয়ে নালিশ জানাতে চেয়েছিলেন। তৃণমূলের অভিযোগ, অমিত শাহ সময় দেননি। তৃণমূল সাংসদরা সোমবা নর্থ ব্লকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। নর্থ ব্লক হাই সিকিউরিটি জোন। সচরাচর এখানে দাঁড়িয়ে কাউকে স্লোগান দিতে দেয়া হয় না।

স্লোগানপর্বের পর প্রবেশদ্বার থেকে একটু সরে মাটিতে বসে তৃণমূল সাংসদরা 'উই শ্যাল ওভারকাম' গাইতে থাকেন। দোলা সেন গাইতে থাকেন, 'লড়াই কর, যতদিন না বিজয়ী হও'। পুলিশ তাদের ঘিরে থাকে।ত্রিপুরা নিয়ে অভিযোগ জানাতে জাতীয়. মানবাধিকার কমিশনের প্রধানের কাছ থেকেও সময় চেয়েছে তৃণমূল।

পশ্চিমবঙ্গের সহিংসতা এবং ত্রিপুরা

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ও পরে বিজেপি-র অভিযোগ ছিল, তৃণমূল ব্যাপক সহিংসতা করছে। তারা বিজেপি-র কর্মীদের খুন করছে, মারছে। ভোটের আগে বিজেপি নেতাদের হেলিকপ্টার নামতে দেয়া হয়নি। এখন ত্রিপুরায় একই ধরনের অভিযোগ করছে তৃণমূল। জয়া দত্ত তা অস্বীকার করে বলেছেন, ''নির্বাচনের আগে দিল্লির বিজেপি নেতারা ডেলি প্যাসেঞ্জারের মতো পশ্চিমবঙ্গে প্রায় রোজ এসেছেন। তারা মিটিং, মিছিল করেছেন। আমরা তো বাধা দিইনি। ত্রিপুরায় বলা হচ্ছে, কলকাতা থেকে যারা এসেছ, বেরিয়ে যাও।''

বিজেপি অভিযোগ করেছে, পশ্চিমবঙ্গে তাদের প্রচুর কর্মীকে খুন করা হয়েছে। সিবিআই এখন ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে তদন্ত করছে। জয়ার দাবি, এ সবই ভিত্তিহীন অভিযোগ। ত্রিপুরায় বিজেপি-র সহিংসতা সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। 

বিজেপি-র বক্তব্য

তৃণমূলের মারমুখি কর্মীদের একাধিক ভিডিও শেয়ার করে বিজেপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, ''এরাই নাকি দিদির শান্তির দূত। এরা ত্রিপুরাকে অশান্ত করতে চাইছে।'' আগরতলা থানার সামনের ভিডিও শেয়ার করে বলা হয়েছে, ''দিদির শান্তির দূতেদের দেখুন। এরপর কি বলবেন যে, তারা থানার সামনে শান্তিপাঠ করছিল? ছবি কখনো ভুল কথা বলে না।''

দিল্লিতে মমতা

সোমবার দিল্লিতে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতায় তিনি বলেছেন, ''প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিএসএফ নিয়ে কথা বলতে দিল্লি যাচ্ছি।'' সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার বিএসএফের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকা বাড়িয়ে সীমান্ত থেকে দেশের ৫০ কিলোমিটার ভিতর পর্যন্ত করে দেয়। এর বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায়. প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। মমতা বলেছেন, ''গায়ের জোরে এলাকা দখল করতে দেব না। বিএসএফ আমাদের বন্ধু। বিএসএফ মানে বিজেপি নয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইব।''

সূত্র : ডয়েচে ভেলে