আধুনিক বিদ্যুৎ সরবরাহে বিশ্বব্যাংকের ৫০ কোটি ডলার ঋণ

আধুনিক বিদ্যুৎ সরবরাহে বিশ্বব্যাংকের ৫০ কোটি ডলার ঋণ

আধুনিক বিদ্যুৎ সরবরাহে বিশ্বব্যাংকের ৫০ কোটি ডলার ঋণ

বাংলাদেশে আধুনিক, নির্ভরযোগ্য এবং টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী সংস্থা বিশ্বব্যাংক ৫০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। ইলেকট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন মডার্নাইজেশন কর্মসূচির আওতায় এই ঋণ অনুমোদন দিয়েছে সংস্থাটির ওয়াশিংটন সদর দফতর। প্রতি ডলার সমান ৮৫ টাকা ধরে বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ সোয়া ৪ হাজার কোটি টাকা।বিশ্বব্যাংকের ওয়াশিংটন অফিস এই ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বলে সংস্থাটির ঢাকাস্থ অফিস থেকে বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিস বলছে, বিদ্যুৎ বিতরণ আধুনিকীকরণ কর্মসূচি ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রায় চার কোটি মানুষের কাছে উন্নত বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দেবে। এটি বাংলাদেশ গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ২৫টি গ্রামীণ বৈদ্যুতিক সমবায়ে (পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি) নেটওয়ার্ক অবকাঠামো উন্নয়নে বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের আওতায় ৩১ হাজার কিলোমিটারের বেশি ডিস্ট্রিবিউশন লাইন, ১৫৭টি ডিস্ট্রিবিউশন সাবস্টেশন এবং সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং রূপান্তর করতে নেটওয়ার্কগুলোকে নতুন এবং উন্নত প্রযুক্তির সাথে যুক্ত করা হবে।

বিশ্বব্যাংকের অঙ্গভুক্ত প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) নমনীয় শর্তে এ ঋণ দিচ্ছে বাংলাদেশকে। এখানে পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরের মেয়াদ রয়েছে। এছাড়াও, প্রোগ্রামটিতে ক্লিন টেকনোলজি ফান্ড হিসেবে ১৫ মিলিয়ন অনুদান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যান ড্যান চেন এ প্রসঙ্গে বলেন, গত দশকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা চারগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৯৯ শতাংশেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিতরণ নেটওয়ার্ক উৎপাদনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি। এই প্রোগ্রামটি বিতরণ নেটওয়ার্কের আধুনিকীকরণ এবং টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। যা একটি নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য পাওয়ার সিস্টেমের মেরুদণ্ড।

বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রোগ্রামটি একটি আধুনিক গ্রিড সিস্টেম চালু করবে। যা বিদ্যুৎ এবং তথ্যের দ্বিমুখী প্রবাহকে সমর্থন করতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং চরম আবহাওয়ার ঘটনাসহ জলবায়ু এবং সাইবার ঝুঁকি থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করবে প্রকল্পটি। এটি সুপারভাইজরি কন্ট্রোল এবং ডেটা অধিগ্রহণ সিস্টেমের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি চালু করবে এবং উন্নত মিটারিং অবকাঠামো চালু করবে। এটি বিদ্যুৎ বিতরণ নেটওয়ার্কে নবায়ন শক্তি এবং ব্যাটারি শক্তি স্টোরেজ সিস্টেমের একীকরণের সুবিধার মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন করবে। এই সবই বিদ্যুৎ ব্যবস্থার টেকসই রূপান্তর ঘটাবে।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র এনার্জি স্পেশালিস্ট এবং প্রোগ্রামের টিম লিডার বিপুল সিং বলেন, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বিশ্বের বৃহত্তম গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। ৯ কোটির বেশি লোকের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। এই প্রোগ্রামটি নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করবে।

এই কর্মসূচিসহ, নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণের জন্য বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বিশ্বব্যাংকের ১৮০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চলমান সহায়তা রয়েছে। ১৯৮১ সাল থেকে বিশ্বব্যাংক পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিদ্যুতায়ন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে কাজ করছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে ১৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা চলমান রেখে আইডিএ। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। স্বাধীনতার পর থেকে সংস্থাটি বাংলাদেশে ৩৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ, ঋণ এবং শহজ শর্তে ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।