ইউক্রেনে সৈন্য পাঠাবে না ন্যাটো

ইউক্রেনে সৈন্য পাঠাবে না ন্যাটো

ইউক্রেনে সৈন্য পাঠাবে না ন্যাটো

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) সেক্রেটারি জেনারেল জেন স্টোলেনবার্গ জানিয়েছেন, ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা নেই ন্যাটোর।বৃহস্পতিবার বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে সংস্থাটির প্রধান দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানান তিনি।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনে দেশটিতে সাহায্যের জন্য ন্যাটোর কোনো সৈন্য রয়েছে কি না বা কোনো সৈন্য পাঠানো হবে কি না জানতে চাইলে স্টোলেনবার্গ বরেন, ‘ন্যাটোর যুদ্ধে সক্ষম কোনো সৈন্য সেখানে নেই, ইউক্রেনে ন্যাটোর কোনো সৈন্য নেই। আমরা স্পষ্ট করতে চাই, ইউক্রেনে ন্যাটো সৈন্য মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনা বা ইচ্ছা আমাদের নেই।

তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করছি যে ন্যাটোভুক্ত দেশের পূর্বপ্রান্তে আমরা ইতোমধ্যে ন্যাটো সৈন্যের উপস্থিতি বাড়িয়েছি এবং বাড়াচ্ছি।’সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমাদের আকাশসীমা রক্ষায় আমরা এক শ’ যুদ্ধবিমানকে উচ্চ সতর্কতায় রেখেছি এবং উত্তর ভূমধ্যসাগরে ১২০টির বেশি জাহাজ প্রস্তুত রেখেছি।’

তিনি বলেন, ‘আগ্রাসন থেকে জোট রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই আমরা অব্যাহতভাবে করবো।’একইসাথে শুক্রবার ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের এক ভার্চুয়াল সম্মেলন তিনি আহ্বান করেন।ইউক্রেন ন্যাটোর ‘কৌশলগত অংশীদার’ হলেও এখনো জোটের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করেনি।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জেরে সোমবার বিদ্রোহীদের দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’কে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তি রক্ষায় রুশ সৈন্য পাঠানোর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

বৃহস্পতিবার পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তায় পূর্ণমাত্রায় অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

২০১৪ সালে ইউক্রেনে রুশপন্থী সরকারের পতনের পর রাশিয়া দেশটিতে আগ্রাসন চালিয়ে ক্রিমিয়া অঞ্চলটি দখল করে নেয়। পাশাপাশি মস্কোর পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্ব ইউক্রেনে বিপুল অঞ্চল দখল করে নেয় বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী গোষ্ঠী।

পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থী বিদ্রোহীরা দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা করে।রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে এই সংঘর্ষ বন্ধে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যস্থতায় ২০১৪ সালে বেলারুশের মিনস্কে ইউক্রেন ও রাশিয়া এক চুক্তি করে।

মিনস্ক চুক্তি অনুযায়ী এই অঞ্চলে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময় ও দোনবাস অঞ্চল থেকে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সরে যাওয়ার বিষয় যুক্ত ছিলো। দোনবাস অঞ্চল থেকে রুশপন্থী বিদ্রোহীরা সরে গেলে ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গণভোটের ব্যবস্থা করবে।কিন্তু পরস্পরের প্রতি সহিংসতার অভিযোগের জেরে এই চুক্তি আর বাস্তবায়িত হয়নি।

এরই মধ্যে ২০২০ সালে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের ন্যাটো সামরিক জোটের 'ইনহ্যান্সড অপারচুনিটি পার্টনার’ পদ পেলে রাশিয়া ক্ষুব্ধ হয়। নিজ দেশের সীমান্তে ন্যাটোর সম্প্রসারণের শঙ্কায় রাশিয়া ইউক্রেনের যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক জোটে যোগ দেয়ার বিরোধিতা করছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সৈন্য সমাবেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের পর উত্তেজনা নতুন করে বাড়ে।যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় এক লাখ সৈন্য ইউক্রেন সীমান্তে মোতায়েন করেছে মস্কো।

যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, ইউক্রেনে হামলার জন্যই রাশিয়া ওই সৈন্য সমাবেশ করেছে। কিন্তু রাশিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, সামরিক বাহিনীর মহড়ার অংশ হিসেবে ওই সৈন্য সমাবেশ করা হয়েছে।পরে কিছু সৈন্য সরিয়ে নেয়ারও ঘোষণা দেয় রাশিয়া।

কিন্তু তাতেও ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো আশ্বস্ত না হয়ে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সব সৈন্য সরিয়ে নেয়ার আহ্বান অব্যাহত রাখে।সৈন্য সমাবেশের জেরে ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে রাশিয়ার সম্পর্কে উত্তেজনা প্রশমনে বিভিন্ন পন্থায় কূটনেতিক সমাধানের চেষ্টা চলছিলো।

সূত্র : আলজাজিরা ও বিবিসি