সৌদি আরবের জেদ্দায় হাউছি বিদ্রোহীদের রকেট হামলা

সৌদি আরবের জেদ্দায় হাউছি বিদ্রোহীদের রকেট হামলা

ছবি: সংগৃহীত

লোহিত সাগরের তীরে সৌদি আরবের বন্দর নগরী জেদ্দায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানি সৌদি আরামকোর এক তেল সংরক্ষণাগারে হামলা করেছে ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হাউছি বিদ্রোহীরা।

শুক্রবার জেদ্দার এই তেল সংরক্ষণাগারে রকেট হামলা চালায় হাউছি বিদ্রোহীরা।

হামলার ফলে জেদ্দায় প্রকাণ্ড আগুনের কুণ্ডলি উঠতে দেখা যায়।

সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হামলায় উত্তর জেদ্দার তেল সংরক্ষণাগারের দুইটি ট্যাঙ্কে আগুন লেগে যায়। তবে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।

হামলায় কেউ হতাহত হয়নি বলে জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

জোটের মুখপাত্র ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল তুরকি আল-মালিকি বলেন, ‘এই শত্রুতাপূর্ণ হামলা তেল স্থাপনা লক্ষ্য করে করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা ও বিশ্ব অর্থনীতির মেরুদণ্ডকে দুর্বল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।’

পরে শুক্রবার হাউছি বিদ্রোহীদের সামরিক মুখপাত্র বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইয়াহইয়া সারি সৌদি আরবের জেদ্দায় এই হামলা চালানোর কথা এক টুইট বার্তায় জানান।

একইসাথে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে গুরুত্পূর্ণ কিছু স্থান লক্ষ্য করেও হামলার কথা জানান তিনি।

ইয়াহইয়া সারি টুইট বার্তায় বলেন, ‘জেদ্দায় আরামকোর স্থাপনা ও সৌদি রাজধানী রিয়াদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা’ লক্ষ্য করে এই হামলা করা হয়।

তিনি আরো বলেন, জিজান, নাজরান, রাস তানুরা ও রাবেগে সৌদি আরামকোর স্থাপনায় ‘বেশ কিছু সংখ্যক ড্রোন’ দিয়ে হামলা করা হয়।

এদিকে সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব জোটের বরাত দিয়ে সৌদি সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়ায় জানানো হয়, সৌদি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নাজরানে দুইটি বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোন ধ্বংস করা হয়।

এদিকে হামলা স্বত্ত্বেও জেদ্দায় পূর্বনির্ধারিত ফর্মুলা ওয়ান মোটর রেসিং রোববার শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০১১ সালে আরব বসন্তের পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের বিক্ষোভের জেরে ইয়েমেনে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক আলী আবদুল্লাহ সালেহ সরকারের পতন ঘটে। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বু মানসুর হাদি দায়িত্ব নেন। নতুন সরকার গঠন হলেও ইয়েমেনের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকে।

বিবাদমান পক্ষগুলোর দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৪ সালের শেষে ইরান সমর্থিত উত্তর ইয়েমেনের হাউছি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখল করলে প্রেসিডেন্ট হাদি সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। ২০১৫ সালের মার্চে সৌদি নেতৃত্বের জোট হাউছিদের বিরুদ্ধে ইয়েমেনে আগ্রাসন করলে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের মুখে পড়ে আরব উপদ্বীপের দরিদ্রতম দেশটি।

সাত বছরের বেশি চলমান এই যুদ্ধে হাউছি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানাসহ উত্তর ইয়েমেন নিয়ন্ত্রণে রাখে। অপরদিকে সৌদি জোটের সহায়তায় আবদ রাব্বু মানসুর হাদি দক্ষিণের বন্দরনগরী এডেনকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ ইয়েমেনে সরকার প্রতিষ্ঠা করেন।

বিভিন্ন সময়ই দুই পক্ষের মধ্যে পরস্পরের এলাকা দখলের জন্য সংঘর্ষ হলেও কোনো পক্ষই যুদ্ধে এখনো পূর্ণ জয় লাভ করতে পারেনি।

যুদ্ধে দক্ষিণ ইয়েমেনের সরকারকে মদদ দেয়া সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের ইয়েমেনের হাউছি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিভিন্ন সময়েই বিমান হামলা করেছে। জবাবে বিদ্রোহীরা সৌদি আরব ও তার মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত লক্ষ্য করেও হামলা চালিয়ে আসছে।

ইয়েমেনে চলমান যুদ্ধ-সংঘাতে এক লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই বেসামরিক লোকজন। এছাড়া যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখো মানুষ।

সাত বছরের টানা যুদ্ধ ও অবরোধে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে ইয়েমেন। ইতোমধ্যে ক্ষুধায় ৫০ হাজারের বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে দেশটিতে। ইয়েমেনের চলমান পরিস্থিতিকে বিশ্বের নিকৃষ্টতম মানবসৃষ্ট মানবিক সংকট হিসেবে হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতিসঙ্ঘ।

সূত্র : আলজাজিরা ও আরব নিউজ