হাঁটুর লিগামেন্ট ইনজুরিতে ফিজিওথেরাপি

হাঁটুর লিগামেন্ট ইনজুরিতে ফিজিওথেরাপি

আনিছুর রহমান

হাঁটু শরীরের বড় ও ওজন বহনকারী জয়েন্টগুলোর মধ্যে অন্যতম। হাঁটুর জয়েন্ট উপরের দিক থেকে উরুর হাড় (ফিমার) ও প্যাটলা বা নি-ক্যাপ এবং নিচের দিক থেকে পায়ের হাড় (টিবিয়া)- এই তিন হাড়ের সমন্বয়ে গঠিত। হাঁটুতে চারটি প্রধান লিগামেন্ট থাকে। লিগামেন্ট হলো ইলাসটিক টিস্যু যা এক হাড়কে অন্য হাড়ের সাথে যুক্ত করে, জয়েন্টের শক্তি প্রদান এবং জয়েন্টের স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। হাঁটুর লিগামেন্টগুলো নিম্নরূপ: ১. এনটেরিওর ক্রুসিয়ের লিগামেন্ট: হাঁটুর মাঝখানের সামনের দিকে এবং পোসটেরিওর লিগামেন্টের সাথে ক্রস করে থাকে বলেই একে এনটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট বলে। এই লিগামেন্ট লেগের রোটেশনাল ও সামনের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে। ২. পোসটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট: এই লিগামেন্ট হাঁটুর মাঝখানের পিছনে থাকে এবং লেগের পিছনের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে। ৩. মিডিয়াল কোল্যাটারাল লিগামেন্ট: এই লিগামেন্ট হাঁটুর ভিতর পার্শ্বের স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। ৪. ল্যাটারাল কোল্যাটারাল লিগামেন্ট: এই লিগামেন্ট হাঁটুর বাহির পার্শ্বের স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।

 

লিগামেন্ট ইনজুরির কারণসমূহ: ১. হঠাৎ মোচড়ানো গতি দ্বারা এনটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট সবচেয়ে বেশি ইনজুরি হয়। ২. আঘাত, রিকশা থেকে পড়ে গেলে, গাড়ি বা মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় এনটেরিওর ও পোসটেরিওর ক্রসিয়েট লিগামেন্ট ইনজুরি হয়। ৩. ফুটবল, বাস্কেটবল, কাবাডি ও হা-ডু-ডু খেলোয়ারদের মাঝে এনটেরিওর ক্রুসিয়েট ইনজুরি বেশি হয়। ৪. মই থেকে পড়ে গেলে। ৫. উপর থেকে লাফ দিয়ে পড়লে। ৬. গর্তে পড়ে আঘাত পেলে। ৭. সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় এক স্টেপ ভুল করলে। ৮. প্যাটারাল কোল্যাটারাল লিগামেন্ট অপেক্ষা মিডিয়াল কোল্যাটরাল লিগামেন্ট বেশি ইনজুরি হয় হাঁটুর বাহির পার্শ্বে সরাসরি আঘাতের জন্য। ৯. ফুটবল ও হকি খেলোয়াড়দের মাঝে মিডিয়াল কোল্যাটারাল লিগামেন্ট ইনজুরি হয়। ১০. অধিকাংশ ব্যক্তির এনটেরিডর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট ইনজুরির সাথে মেনিসকাস ইনজুরি থাকে।

ইনজুরির লক্ষণসমূহঃ ১. প্রথমে তীব্র ব্যথা পরে আস্তে আস্তে ব্যথা কমে আসে। ২. ব্যথা হাঁটুর বাহির পার্শ্বে এবং পিছনে অনুভূতি হবে। ৩. হাঁটু ভাঁজ বা সোজা করতে গেলে ব্যথা বেড়ে যাবে। ৪. আঘাতের প্রথম দশ মিনিটের মধ্যেই হাঁটু ফুলে যায়। ৫. ফোলা ও ব্যথার জন্য হাঁটু নড়াচড়া করা যায় না। ৬. দাঁড়াতে বা হাঁটতে চেষ্টা করলে মনে হবে হাঁটু ছুটে যাচ্ছে বা বেঁকে যাচ্ছে। ৭. আঘাতের সাথে সাথে ব্যক্তি 'পপ' বা 'ক্র্যাক' শব্দ শুনতে বা বুঝতে পারবে। ৮. সাথে মেনিসকাস ইনজুরি থাকলে, রোগী বেশিক্ষণ বসলে হাঁটু সোজা করতে কষ্ট হয়। ৯. অনেক সময় হাঁটু আটকিয়ে যায়, রোগী হাঁটুতে নড়াচড়া করিয়ে সোজা করে। ১০, দীর্ঘদিন যাবৎ লিগামেন্ট ইনজুরি থাকলে হাঁটুর পেশী শুকিয়ে যায় এবং হাঁটুতে শক্তি কমে যায়। ১১. উঁচু নিচু জায়গায় হাঁটা যায় না, সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করতে এবং বসলে উঠতে কষ্ট হয়। ১২ হাঁটু ইনসিকিউর বা অস্থিতিশীল মনে হবে।

 

চিকিৎসা বা করণীয়: প্রাথমিক অবস্থায় হাঁটুকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে এবং বরফের টুকরা টাওয়ালে বা ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি প্লাস্টিকের ব্যাগে নিয়ে লাগালে ব্যাথা বা ফুলা কমে আসবে। প্রতি দুই ঘন্টা পর পর ১৫-২০ মিনিট লাগাতে হবে।

 

ফিজিওদেরাপির ভূমিকা: একজন কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিস্ট খুব সহজেই স্পেসিফিক ফাংশনাল মুভমেন্ট টেস্টের মাধ্যমে কোন লিগামেন্ট ইনজুরি হয়েছে তা নির্ণয় করতে পারে। যদি লিগামেন্টের পারশিয়াল ইনজুরি হয় তাহলে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়া সম্ভব। একজন ফিজিওথেরাপিস্টই পারে অপারেশন ছাড়া লিগামেন্ট ইনজুরির রোগিকে আগের মত স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে।

লেখক: আনিছুর রহমান

ফিজিওথেরাপি এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন স্পেশালিস্ট

আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মাগবাজার, ঢাকা।