ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ার তাড়না দেয় সিয়াম

ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ার তাড়না দেয় সিয়াম

ফাইল ছবি

রোজার বড় একটি আনুষ্ঠানিকতা হচ্ছে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকা। যদিও না খেয়ে থাকা বা উপবাস করা আর সিয়াম সাধনা এক জিনিস নয়, তারপরও এই না খেয়ে থাকার মাঝেও রয়েছে অনেক বড় হেকমত। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো ক্ষুধার কষ্ট। এ ক্ষুধার জন্যই আমাদের এত পরিশ্রম, এত ছোটাছুটি। পেটপুরে দুটি খাওয়ার জন্য কী না করে মানুষ। কেউ সব ঘৃণা দূরে ঠেলে ম্যানহোলে ময়লা পানিতে ডুব দেয়, আবার কত নারী সতীত্ব বিকিয়ে দেয় শুধু এ পেটের দায়েই। এমনও শোনা যায়, পেটের জ্বালা নেভাতে পেটের সন্তানকেই বিক্রি করে মানুষ। ক্ষুধার জ্বালায় কখনো গলায় ফাঁস দেওয়ার খবরও মেলে সংবাদমাধ্যমে।

একজন মানুষ যতক্ষণ না নিজে ক্ষুধায় কষ্ট পাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে কোনোভাবেই ক্ষুধার জ্বালা কী, তা বোঝানো যাবে না। এজন্য প্রিন্সিপাল ইবরাহিম খাঁ এক আলোচনায় বলেন, মানুষের ক্ষুধার কষ্ট কী, তা বোঝার জন্যও নবিজি (সা.) অনেক সময় না খেয়ে থাকতেন। বেশির ভাগ সময় তিনি নিজের খাবার অন্যকে দিয়ে অনাহারে কাটাতেন। হাদিস শরিফে পাওয়া যায়, গরিব সাহাবিরা (রা.) ক্ষুধার কষ্ট সইতে না পেরে পেটে পাথর বাঁধত, নবিজি (সা.) তাদের কষ্ট অনুভব করার জন্য না খেয়ে পেটে পাথর বেঁধে দিনের পর দিন মাসের পর মাস কাটিয়ে দিতেন।

হে আমার রোজাদার ভাই, আমি আপনি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকি। দুপুরের পর থেকে ক্ষুধার মাত্রা বাড়তে থাকে। একসময় মনে হয় আর যেন পারছি না। মাঝেমধ্যে এমনও হয়, কাজকর্ম সব বাদ দিয়ে অপেক্ষা করতে হয় ইফতারের জন্য। তো ভাই আমাদের এ কষ্ট তখনই সার্থক হবে, যখন ভাবব, আমাদের আশপাশে যারা না খেয়ে আছে তাদেরও ঠিক এমনই কিংবা এর চেয়েও বেশি কষ্ট হয়।

তো এ ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে দুমুঠো খাবার নিশ্চিত করা একজন রোজাদারের কর্তব্য। আর এজন্যই সামর্থ্যবানদের ওপর জাকাত-সদকাতুল ফিতরসহ দান-খয়রাত ফরজ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বারবার বলেছেন, এতিম-অসহায়দের অধিকার দিয়ে দাও। আত্মীয়-অনাত্মীয় নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের পাশে দাঁড়াও।

আমরা যদি দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়তে না পারি, ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে না পারি, তাহলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে যত বড় মুত্তাকিই হই না কেন, জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারব না। সুরা দাহারে আল্লাহ বলেন, ‘ফেরেশতারা জাহান্নামিদের জিজ্ঞেস করবে, ‘কেন তোমরা জাহান্নামি হলে? জাহান্নামিরা বলবে, আমরা ধার্মিক ছিলাম না। আর ক্ষুধামুক্ত সমাজ গড়ার কর্মসূচি আমাদের অর্থব্যবস্থায় ছিল না।’ এর চেয়ে বড় ভয়ংকর কথা আর কী হতে পারে।

আমাদের সব ধর্মকর্ম বিফলে যাবে যদি ক্ষুধামুক্ত সমাজ গড়তে না পারি। সারা দিন না খেয়ে থাকা, সারা রাত নামাজ পড়া অনেক সহজ, নিজের কষ্টার্জিত একটি পয়সা খোদার রাহে অন্যের কল্যাণে বিলিয়ে দেওয়া সত্যিই বড় কষ্টের। তো এ কষ্ট সয়ে আমরা যদি দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়ার কর্মসূচি নিতে পারি, আশা করার যায়, এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার পরপরই অপরূপ জান্নাত আল্লাহ আমাদের দান করবেন। হে আল্লাহ, ইসলামি কল্যাণভিত্তিক অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার তৌফিক প্রতিটি রোজাদারকে দিন। পৃথিবী থেকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য-এ শব্দগুলো মুছে দেওয়ার শক্তি আমাদের দিন। আমিন।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি