কতটা ভয়ংকর হতে পারে মোখা, জানালেন আবহাওয়াবিদরা

কতটা ভয়ংকর হতে পারে মোখা, জানালেন আবহাওয়াবিদরা

সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের মানুষও কম আতঙ্কে নেই। দেশের আবহাওয়া অফিস যেমন প্রতিমুহূর্তে মোখার সর্বশেষ তথ্য দিচ্ছে, তেমনি ভারতের আবহাওয়াবিদরাও পূর্বাভাসে ঝড়ের গতিবেগ এবং ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করছেন।

বুধবার (১০ মে) রাতে পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়াবিদরা জানান, সকালের তুলনায় আন্দামান ও নিকোবর উল্লেখযোগ্য শহর পোর্ট ব্লেয়ারের থেকে দূরত্ব কমিয়েছে অতি গভীর নিম্নচাপটি। বর্তমানে এই অতি গভীর নিম্নচাপ পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৫১০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। 

আবহবিদরা বলছেন, দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করছে ‘মোখা’। আর সেই জন্যই একদিনের মধ্যেই তা পরিণত হতে চলেছে গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে। এভাবে শক্তি সঞ্চয় করলে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার পর তা দুদিনের মাথাতেই অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। 

এদিকে বাংলাদেশের আবহাওয়ার সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (৪ নম্বর) বলা হয়েছে, বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগরে অবস্থান করছে অতি গভীর নিম্নচাপটি। তবে ক্রমেই তা সরে যাচ্ছে আরও পশ্চিমে এবং উত্তরপশ্চিমে। সেখানেই সরে গিয়ে সৃষ্টি হবে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ে। অতি গভীর এ নিম্নচাপটি বর্তমানে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪২০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার থেকে ১৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা থেকে ১৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে অবস্থান করছে। মিয়ানমারের সিতওয়ে থেকে দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে ১৩৬০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। বৃহস্পতিবার এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে ক্রমেই উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।

এ ছাড়া রাতে আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ সময় সংবাদকে জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে মোখা গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। আগামী রোববার (১৪ মে) বিকেল নাগাদ স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি এখনও কক্সবাজার থেকে প্রায় ১৩৪০ কিলোমিটার দূরে আছে।

বজলুর রশীদ আরও বলেন, সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হলে সেটি হয় সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়। বাতাসের গতিবেগ ৮৮ থেকে ১১৭ হলে তাকে বলা হয় তীব্র ঘূর্ণিঝড়। আর বাতাস যদি ১১৭ থেকে ২২০ কিলোমিটার বেগে বয়, তবে তা হয় অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়। আর ২২০ কিলোমিটারের ওপরে বাতাসের গতিবেগ উঠলে তাকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়। সুতরাং মোখা সুপার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারে। 

তবে পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়াবিদরা জানান, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে দাপট কমাবে না মোখা। বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে মোখা। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরি‌ণত হওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর থেকে একটু একটু করে উত্তর-উত্তরপূর্বে সরে যেতে পারে মোখা। 

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর মোখার গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটা। সমুদ্রে বাধা না পেয়ে তা হুহু করে এগিয়ে আসবে উপকূলের দিকে। তবে উপকূলে আছড়ে পরার আগেই শক্তিক্ষয় করতে শুরু করবে মোখা। শনিবার থেকে ধীরে ধীরে শক্তি কমতে শুরু করবে মোখার। এরপর রোববার দুপুরের দিকে কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের কাউকপুর ওপর আছড়ে পড়তে পারে মোখা। তারপর মোখা দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ এবং উত্তর মিয়ানমারের দিকে এগিয়ে যাবে।

পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া অফিসের বরাতে আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূলে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিবেগে আছড়ে পড়তে পারে ভয়ংকর এ ঘূর্ণিঝড়টি। 

এ ছাড়া মোখার তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেতে শুক্রবার থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূলের মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। যে সব মৎস্যজীবী ইতোমধ্যেই উত্তর বঙ্গোপসাগরের গভীরে রয়েছেন, তাদেরও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলে ফিরে আসার পরামর্শ দিয়েছে হাওয়া অফিস। মোখার তাণ্ডবে কক্সবাজারের টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অধিকাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তবে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় মোখার পূর্বাভাস থাকলেও তার প্রভাব খুব বেশি পড়বে না কলকাতায়। রোববার উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে টুকটাক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও শুকনোই থাকবে বেশির ভাগ জেলা। এমনকি, আগামী দুদিন দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে তাপপ্রবাহের সতর্কতাও জারি করেছে আবহাওয়া অফিস।

মোখা নাম যেভাবে এলো
ইয়েমেন সম্ভাব্য এ ঘূর্ণিঝড়টির নাম দিয়েছে ‘মোখা’। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের নাম কেন দেয়া হয়েছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এক কফির নামে? তা নিয়ে অনেকের মাঝে কৌতূহলের শেষ নেই।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে বিভিন্ন দেশ। যেমন এর আগে উপকূলে আঘাত হানা ‘সিত্রাং’ ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছিল থাইল্যান্ড। তেমনই ‘মোখা’ নামটি দিয়েছে ইয়েমেন।

যদিও ‘মোখা’ শব্দের আক্ষরিক কোনো অর্থ নেই। ইয়েমেনের বন্দর শহর ‘মোখা’র নামে ঘূর্ণিঝড়ের এ নামকরণ করা হয়েছে।

১৯ শতক পর্যন্ত মোখা ছিল ইয়েমেনের রাজধানী সানার প্রধান বন্দর। এ শহর থেকেই সারা বিশ্বে বিখ্যাত কফি ‘মোখা’ রফতানি করা হতো। কফির নামকরণও হয়েছে শহরের নামেই। বহু বছর ধরে মোখা বন্দর দিয়ে দেশ-বিদেশে ‘মোখা’ কফি রফতানি করা হতো।