বৃহস্পতিবারে অনলাইনে ক্লাস চায় না কুবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

বৃহস্পতিবারে অনলাইনে ক্লাস চায় না কুবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

বৃহস্পতিবারে অনলাইনে ক্লাস চায় না কুবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ সাধন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে গত ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার সশরীরে ক্লাস বন্ধ রেখে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। এতে বিভাগগুলোতে কমেছে ক্লাসের সংখ্যা। অপরদিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই এমন সিদ্ধান্তে অনীহা প্রকাশ করে সশরীরে ক্লাস নেওয়ার দাবি করে আসছেন। ফলে ক্লাসের সংখ্যা কমায় সেশনজটে পড়েছে বিভিন্ন বিভাগ।

 বিভাগগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বৃহস্পতিবারে অনলাইন ক্লাসের ঘোষণা দিলেও নিয়মিত ক্লাস হয় না বিভাগগুলোতে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) কাজী এম. আনিছুল ইসলাম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমাদের বিভাগে অনলাইন ক্লাস হয় না, তা ঠিক। কিন্তু আমরা চেষ্টা করি অন্যান্য দিনগুলোতে শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত রেখে ক্লাস গুলো নিয়ে নিতে। করোনা মহামারি পরবর্তী অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্তকে শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো আবদুল হাকিম অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে বলেন, "অনলাইন ক্লাসের মধ্যে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত পাঠ গ্রহণ করতে পারে না। প্রযুক্তিগত সমস্যার কারনে শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসে আগ্রহ হারাচ্ছে। তাছাড়া অনলাইন ক্লাসের নামে বিশ্ববিদ্যালয় একদিন বন্ধ থাকার দরুন সৃষ্টি হতে পারে সেশনজট। আমি চাই স্বশরীরে ক্লাসে ফিরে যাওয়া হোক।"

 জানা যায়, গেল বছরের ২৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭২ তম একাডেমিক কাউন্সিলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ সাধন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে বৃহস্পতিবার কার্যক্রম অনলাইনে করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যদিও একাধিক গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য বৃহস্পতিবারে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া ও পরিবহন সেবা বন্ধ রাখা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে নতুন ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র (এসি) লাগানো হয়েছে।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, বিভাগীয় প্রধান, ডিন ও প্রাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের কক্ষে নতুন করে এসকল এসি স্থাপন করা হয়। অনলাইনে ক্লাসের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে নেওয়ার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে ও সরাসরি ক্লাস নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখালিখি করেন। একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ' সপ্তাহে মাত্র চারদিন ক্লাস। তাই পুরো সপ্তাহ জুড়ে থাকে অতিরিক্ত ক্লাস, প্রেজেন্টেশন ও এসাইনমেন্টের চাপ যা মানসিক ও শারীরিক চাপের কারণ হয়ে পড়ে। এছাড়া বৃহস্পতিবারে খুব কম সময়েই অনলাইন ক্লাস হয় ফলে ক্লাসের সংখ্যা কমে এসেছে।'

গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল  বলেন, ' শুক্র, শনি সরকারি ছুটির কারণে বন্ধ থাকে, বৃহস্পতিবার একদিন অনলাইনে ক্লাস হওয়ার কারণে আরো একদিন বন্ধ থাকে৷ মাঝে মাঝে দেখা যায় সরকারি ছুটির কারণে মাত্র তিনদিন ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। এতে আমাদের ক্লাসের সংখ্যা কমে আসে এবং পরীক্ষার তারিখ পিছিয়ে যায়। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দেরীতে ফলাফল প্রকাশের সংস্কৃতি রয়েছে। দীর্ঘ সময় এভাবে চললে শিক্ষার্থীরা ভয়ংকর সেশনজটে পড়বে।' সিএসই বিভাগের ১২ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সম্রাট বলেন, ''অনলাইন ক্লাস শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফলপ্রসূ কিছু সৃষ্টি করতে পারেনি বরং অনলাইনে ক্লাসের কারণে বৃহস্পতিবার বন্ধ হয়ে আছে এবং সেমিস্টার পরীক্ষা, ল্যাব ও ব্যবহারিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।আমরা বৃহস্পতিবার সশরীরে ক্লাসে ফিরে যেতে চাই।''

 উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড হুমায়ুন কবির বলেন,''সামনের বাজেটের উপর ভিত্তি করে আমাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে, অনলাইনে যাতে নিয়মিত ক্লাস হয় তার জন্য আমরা বিভাগ গুলোর সাথে কথা বলেছি।'' তবে অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে কথা বলতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এফ এম আবদুল মঈন। তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে আমি কোন কথা বলতে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের বিরুদ্ধে লিখালিখি নিয়ে বলেন, ' আমি এসব দেখিনি'।