রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে ভোট আজ

রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে ভোট আজ

সংগৃহীত

রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আজ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শেষ পরীক্ষা এই দুই সিটি নির্বাচন।

তিন ধাপের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রথম দফায় গত ২৫ মে গাজীপুর এবং দ্বিতীয় দফায় গত ১২ জুন বরিশাল ও খুলনা সিটি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। তবে এই সিটি নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে গাজীপুরে। ওই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী জায়েদা খাতুনের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন।

তবে দ্বিতীয় দফায় খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচন ছিল তুলনামূলক নিরুত্তাপ। এই নির্বাচনে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় রাজশাহী ও সিলেটে নির্বাচনী আমেজে অনেকটা ভাটা পড়েছে। তাছাড়া নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েও প্রচার চলাকালে প্রত্যাহার করে নিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ফলে সিলেট ও রাজশাহীতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তবে এই সিটিতে মূলত লড়াই হবে কাউন্সিলর পদে।

আজ সকাল সকাল ৮টা থেকে এই দুই সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হবে। একটানা ভোটগ্রহণ চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ দুই সিটিতেও ভোট হবে ইভিএমে। গতকাল ভোটগ্রহণের ইভিএমসহ কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে নির্বাচনি উপকরণ।

সিলেট ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকলেও ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে ভোটাররা। কারণ সিলেট ও রাজশাহীতে ২৮০টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যদিও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভোট চলাকালে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে এবারও সিসি ক্যামেরায় নজর রাখবে ইসি।

গতকাল সকাল থেকে সিলেট নগরীর উপশহরে আবুল মাল আব্দুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স থেকে কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বপাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে নির্বাচনি উপকরণ বুঝিয়ে দেওয়া শুরু হয়।

অপরদিকে রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ থেকে রিটার্নিং অফিসার দেলোয়ার হোসেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে কেন্দ্রগুলোতে ভোটগ্রহণের সরঞ্জাম পাঠানোর কার্যক্রম শুরু করেন।

দুই সিটির ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসার নির্বাচনি সরঞ্জাম বুঝে নেন। এরপর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়।

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সাল কাদির জানান, ভোট শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে; নির্বাচনে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

নির্বাচনের নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার এবং আর্মড পুলিশ নিয়োজিত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুরো নির্বাচনি এলাকায় সাতজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন।

অপরদিকে রাজশাহীর রিটার্নিং অফিসার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন ৩ হাজার ৬১৪ জন কর্মকর্তা। ভোট কেন্দ্রগুলোতে স্থাপন করা হয়েছে ১ হাজার ৫৬০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। ইভিএম মেশিন থাকছে এক হাজার ৭৩০টি।

নির্বাচন কার্যালয় থেকে জানা গেছে, সিলেট সিটির মেয়র পদে আটজন প্রার্থী রয়েছেন। ৪২টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৭৩ জন, ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই নগরীতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬৩ জন এবং নারী ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৪২ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৯০টি এবং ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩৬৪টি।

২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী বদর উদ্দিন কামরান, ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও কারাগার থেকে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৩ সাল থেকে মেয়র পদে আছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। তবে এবার তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না।

সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন করতে নগরীতে প্রায় ২৬০০ পুলিশ সদস্য মাঠে আছে বলে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন কমিশনার মো. ইলিয়াছ শরিফ। মঙ্গলবার সকালে পুলিশ লাইন্সে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, মাঠে রয়েছেন ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৪২টি ওয়ার্ডে ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচনে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেন।

নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে একজন পরিদর্শক, একজন উপ-পরিদর্শক ও পাঁচজন পুলিশ সদস্য এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডে একজন পরিদর্শক, একজন উপ-পরিদর্শক ও চারজন পুলিশ সদস্য এবং সাতজন নারী ও সাতজন পুরুষসহ মোট ১৪ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি জানান, নির্বাচন উপলক্ষে প্রতি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে পুলিশের ৪২টি মোবাইল টিম, প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে ১৪টি স্ট্রাইকিং টিম এবং প্রতি থানায় একটি করে ছয়টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং টিম থাকবে। পাশাপাশি থাকবে দুই ওয়ার্ডে একটি করে র‌্যাবের মোট ২২টি ও পাঁচ ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে মোট ১০ প্লাটুন বিজিবির টহল থাকবে।

অপরদিকে রাজশাহী সিটি নির্বাচনের নিরপত্তায় মাঠে রয়েছে সাড়ে ৫ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই সিটির ১৫৫ কেন্দ্রে তিন স্তর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সদস্যদের ব্রিফিং করেন পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে এবার রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করবে করা হবে না। ভোট অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করতে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও ব্যাটালিয়ান আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।

আনিসুর রহমান বলেন, নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন ২৫০ জন র‌্যাব ও বিজিবির ১০ প্লাটুন সদস্য। এ ছাড়া নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে তিন হাজার ৫১৪ জন পুলিশ, এক হাজার ৯৩৫ আনসার সদস্য। থাকবেন ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।

রাজশাহী র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার জানিয়েছেন, কেন্দ্রের বাহিরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে ২৫০ জন র‌্যাব সদস্য মাঠে থাকবে। এছাড়া ভোটের মাঠে থাকবে ৭ প্লাটুন বিজিবি।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুরশিদ আলম, জাকের পার্টির এ কে এম আনোয়ার হোসেন এবং জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম স্বপন। এ ছাড়া ৩০টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১১ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এই সিটিতে ভোটার আছেন তিন লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন এবং নারী এক লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন এবং ট্রান্সজেন্ডার ভোটার আছেন ৬ জন। এ ছাড়া নতুন ৩০ হাজার ১৫৭ জন ভোটার এবার প্রথমবারের মতো এই নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।