হায় বিবেক! তুমি কখন জাগবে, নিজের ভালো নিজেই বুঝবে?

হায় বিবেক! তুমি কখন জাগবে, নিজের ভালো নিজেই বুঝবে?

ফাইল ছবি

‘মৃত্যুদূত করোনা’ যখন বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী,ধনী-গরীব,ক্ষমতাশালী-দুর্বল তথা আবাল-বৃদ্ধের জীবন দুয়ারে প্রতিনিয়ত কড়া নাড়ছে, মৃত্যুভয় ও তার মিছিল যখন প্রিয়জন থেকে পালাতে বাধ্য করছে,জানাজা বা কবরস্থ করার সাহসও কেড়ে নিয়েছে। ঠিক তখনই লকডাউনে ঘরে বসে সংবাদ মাধ্যম,সোশ্যালমিডিয়া এবং টেলিফোনিক যোগাযোগের মাধ্যমে যা দেখছি, তা আমাকে বিস্মিতই করছে। একটি প্রশ্ন বার বার নাড়া দিচ্ছে, কত উদাসীন হলে আমি এমন হতে পারি—

১. এখনও  আমাদের প্রচুর সময় কাজের অভাবে নষ্ট হচ্ছে। অথচ সেটা হারাম। জীবনতো সময়েরই যোগফল। অপ্রয়োজনীয় কথা লিখে যেমন পরীক্ষায় পাশ মিলে না, তেমনি উদ্দেশ্যহীনভাবে যাপিত জীবনের খাতায় আমার মহান রব কীভাবে পাশ করাবেন? আমরাইতো সময়ের অভাবে  বাবা-মা,আত্মীয়-স্বজন,প্রিয় বন্ধুদের খোঁজ নিতে পারি না,পাশের প্রতিবেশির নামটাও ভালো করে জানি না,ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার ভার শিক্ষকের উপরে ছেড়ে দেই,এমনকি ইবাদাত-বন্দেগী,কুরআন-হাদীস,জ্ঞানচর্চার সুযোগটা পর্যন্ত পাইনি-এরপরও কি সময়টাকে কাজে লাগাব না! অথচ আল্লাহ তা‘আলা সময়ের শপথ করে তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে বলেছেন।

২.লকডাউনের জন্য সামর্থবানেরা পেটের খাবার যোগাড়ে কিনা করছি। কিন্তু মনের খাবারের জন্য কোনো পরিকল্পনা ছিল বা এখনো আছে কি? মনটাকে অভুক্ত রেখে দেহের ওজন বাড়ানো যায় কিন্তু মানবিক হওয়ার সুযোগ থাকে না। ঔষধ খেয়ে শরীরের রোগ নিরাময় হতে পারে কিন্তু মনের রোগ না গেলে মানসিক ও সামাজিক অপরাধ কমে না। আর সেজন্যই কি বুভুক্ষ মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে খাওয়ার এ প্রতিযোগিতা, নিজের ভালো বুঝার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছি, আজরাঈলকে সাথে নিয়েই পরস্পর বিবাদে লিপ্ত- যা মেটাতে আইন-শৃঙ্খলার মানুষগুলোকে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে?

৩. একটু ভাববেন কি, আমার নিজের, পরিবারের বা সমাজের দৈনন্দিন কাজের তালিকাগুলো কি, একটুও কি পরিবর্তন হয়েছে, না কি লকডাউন কোর্স শেষ হলেই নিরাপদ?  আমরা কি নিরাপত্তার সনদটা হাতে পেয়ে গেছি-যে জন্য সাবধান হতে, ঘরে থাকতে, জীবনের খেড়ো খাতার হিসেব মিলাতে এতো উদাসীন! এখনই সময় কেবল পাওনার হিসাব না দেনার হিসাবটাও চূড়ান্ত করা। (চলবে)

লেখক:

ড. মীর মনজুর মাহমুদ