ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করে মশা নিধন করা হয় যেভাবে

ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করে মশা নিধন করা হয় যেভাবে

ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করে মশা নিধন করা হয় যেভাবে

ক্রমশই খারাপ হচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। বছরের প্রথম সাত মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। একইসময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ হাজার ১২৭ জন।এ বছর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও নিহতদের বড় একটি অংশই রাজধানী ঢাকার।

প্রথম থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে এমন শঙ্কা জানানো হলেও তা মোকাবেলায় নেয়া হয়নি কার্যকর পদক্ষেপ। এতে করে সমালোচনার মুখে পড়েছে সংশ্লিষ্টরা।বারবার সতর্কতার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার পর মশা নিধনে নতুন উদ্যোগের কথা বলছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। ডেঙ্গুর লার্ভা নিধনে পরিবেশবান্ধব ‘বিটিআই’ প্রয়োগ করবে ডিএনসিসি।

বিটিআই কি?

ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস, সংক্ষেপে বিটিআই মূলত এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া।ব্যাসিলাস গ্রুপের এই ভ্যারিয়েন্ট প্রাকৃতিকভাবে মাটি থেকেই পাওয়া যায়। পরে ল্যবে কালচার করে এটি ব্যবহার উপযোগী করা হয়।জৈবিক পদ্ধতিতে পাওয়া যায় বলে এর যেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, একইসঙ্গে ব্যাকটেরিয়াটি পরিবেশবান্ধব।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বা সিডিসি'র দেয়া তথ্যমতে, বিটিআই মশার লার্ভার জীবনচক্র পূর্ণ করার আগেই মেরে ফেলে। তবে প্রাপ্তবয়স্ক মশার ক্ষেত্রে এটি কার্যকর না।৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মশা নিয়ন্ত্রণে বিটিআই ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতায় বিটিআইয়ের ব্যবহার রয়েছে। এছাড়াও সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনসহ বিশ্বব্যাপী এটি মশা নিধনের প্রচলিত ব্যবস্থা।

বিটিআই কীভাবে মশা মারে?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশারের মতে, বিটিআই ‘টার্গেট স্পেসিফিক’, অর্থাৎ এই ব্যাকটেরিয়া বিশেষভাবে লক্ষ করে শুধু মশা, ব্ল্যাকফ্লাই ও ছত্রাকের লার্ভাকে মারতে পারে।

বিটিআই প্রয়োগ করা হলে মশার লার্ভা তা খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। ফলে এর থেকে বের হওয়া টক্সিনের বিষক্রিয়ায় মশার মিড-গাট বা খাদ্যনালীতে ক্ষত সৃষ্টি হয়ে লার্ভা মারা যায়।বিটিআই প্রয়োগের পর সাধারণত দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে এটি লার্ভাকে মেরে ফেলতে পারে বলে জানান মি. বাশার।তবে প্রকৃতিতে আরও সময় লাগলেও সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি কার্যকার হয়।

বিটিআই ব্যবহার পদ্ধতি

ট্যাবলেট, তরলসহ বিটিআই ব্যবহারের বিভিন্ন পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী প্রচলিত রয়েছে।তবে ব্যবহারের জন্য সুবিধাজনক হওয়ায় সিঙ্গাপুর থেকে এর পাউডার ফরম্যাট বাংলাদেশে আমদানি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শফিকুর রহমান। এই পদ্ধতিতে পানির সঙ্গে মিশিয়ে বিটিআই স্প্রে করা হয়।

 “মশককর্মীরা মূলত এটা ব্যবহার করবে। আর তারা স্প্রে করে অভ্যস্ত”, বলেন তিনি।একইসঙ্গে পরিবেশবান্ধব, দীর্ঘমেয়াদী এবং বিশ্বব্যাপী সবাই এর দিকে ঝুঁকছে বলেই দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বিটিআই ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।প্রয়োগের পর ১৫ দিন পর্যন্ত বিটিআই-এর কার্যকারিতা বজায় থাকে।

বিটিআই ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

মশা নিধনে অন্যান্য প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে পরিবেশে। কিন্তু এদিক থেকে জৈবিক উপায়ে প্রাপ্ত বিটিআই ভিন্ন।বিটিআই ব্যবহারে পরিবেশের কোন ক্ষতি হয় না।

এটি ব্যবহার করা সহজ ও নিরাপদ। এছাড়া বিটিআই ব্যবহারে মানুষ, প্রাণী ও মৌমাছির স্বাস্থ্যঝুঁকিরও কোন সম্ভাবনা নেই।মশা নিয়ন্ত্রণে বদ্ধ জায়গার পাশাপাশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই পুকুর কিংবা হ্রদের মতো বড় জলাশয়েও বিটিআই ব্যবহার করা যেতে পারে।প্রয়োগের পর বিটিআই শতভাগ কার্যকর উল্লেখ করে কীটতত্ত্ববিদ মি. বাশার বলেন, “মাঠ পর্যায়ে সঠিক মাত্রায়, সঠিক সময় পর পর, সঠিক স্থানে প্রয়োগ করলে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে”।

সূত্র : বিবিসি