মণিরামপুরের ঝাঁপা বাওড়ের ভাসমান সেতু মিনি পর্যটন

মণিরামপুরের ঝাঁপা বাওড়ের ভাসমান সেতু মিনি পর্যটন

সংগৃহীত

টিআই তারেক: এটি যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারের পাশেই অবস্থিত দেশের বৃহত্তর জলামহল ঝাঁপা বাওড়। আর এই বাওড়ের ওপর স্থানীয় মানুষের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে দুটি ভাসমান সেতু। সেতু দুটি নির্মাণের পর থেকে বাওড় এলাকা পর্যটনের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছে।

কপোতাক্ষ নদ তীরবর্তি মল্লিকপুর গ্রাম থেকে ঝাঁপা বাওড়ের উৎপত্তি। ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং প্রায় আধা কিলোমিটার প্রস্থ বাওড়টি ঝাঁপা গ্রামটিকে বেষ্টন করে আছে। ফলে এই গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ এবং আশপাশের আরও ৮টি গ্রামের মানুষের বাওড় পার হবার একমাত্র বাহন ছিল নৌকা। ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামের একটি সামাজিক সংগঠনের ৬০ সদস্যের উদ্যোগে ড্রাম এবং লোহার অ্যাঙ্কেল ও শিট দিয়ে প্রথম সেতুটি নির্মিত হয়েছে। ১৩শ ফুট দৈর্ঘ্যরে এবং ৯ ফুট প্রস্থের ভাসমান সেতু নির্মাণে ৮শ ৮৯টি বড় আকারের প্লাস্টিকের ব্যারেল ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যারেলগুলো লোহার অ্যাংঙ্গেল দিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। ব্যারেলের ওপর দিয়ে চলাচলের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে লোহার পাত।

২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম সেতুটি উদ্বোধন করা হয়। এটির নামকরণ করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ভাসমান সেতু। সেতুটি নির্মাণের ফলে শিক্ষা, চিকিৎসা এবং জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে ঝাঁপা গ্রামের মানুষ বাওড় পার হয়ে উপজেলা বা জেলা সদরে সহজে যাতায়াত করতে পারছেন।

সেতু দিয়ে ভারি যানবাহন যেতে না পারলেও মোটর সাইকেল, ভ্যান, বাইকেলে বা পায়ে হেটে সহজেই চলাচল করা যায়। ৬০ ব্যক্তি তাদের জমানো প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণে সফল হন। সেতু দু’টি দেখতে বর্তমানে দুর দুরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন।

বাওড়ের পশ্চিম তীরে রয়েছে ঝাঁপা, লক্ষ্নীকান্তপুর, বালিয়াডাঙ্গা ও ডুমুরখালী। পূর্ব পাশের হানুয়ার, চন্ডিপুর, মোবারকপুর, মনোহরপুর ও খালিয়া গ্রামের মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজসহ নানা প্রয়োজনে বাওড় অতিক্রম করেন। সেতু নির্মাণে চরম ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেয়েছেন এসব গ্রামের মানুষ। যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে ঝাঁপাসহ অন্যান্য গ্রামের মেয়েদের বিবাহ শাদীতেও দারুন অসুবিধায় পড়তে হতো বলে জানান স্থানীয়রা। সেতু দুটির ফলে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। উভয় পাড়ে মানুষের মধ্যে সম্পর্কের সেতু বন্ধন তৈরি হয়েছে।  

দর্শনার্থীদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাওড় তীরে স্থানীয়রা ফাস্ট ফুড খাবার, ফুচকা, চটপটি ও প্রসাধনীসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের দোকান দিয়েছেন। বিশেষ করে প্রতিদিন বিকেলে এসব দোকানে তরুণ-তরুনীদের ভিড় জমে। ট্রলার এবং স্পীড বোডেও বাওড় ঘুরে দেখার সুযোগ মেলে দর্শনার্থীদের। বেড়াতে আসা রুহুল আমিন, মনিরুজ্জামান এবং তপু রায়হান নামে তিন যুবকের সাথে কথা হয়। তারা জানান, ভাসমান ব্রীজ দুটি নির্মাণের ফলে এখানে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার মানুষের যাতায়াত সহজ হয়েছে। ভোগান্তি কমেছে। একটি দৃষ্টান্ত যে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোন উদ্যোগ নিলে তা বিফল হয় না। ঝাঁপা গ্রামের মানুষ তাদের এই কাজটির মাধ্যমে একতাই বল কথাটির যথার্থতা প্রমান করেছে।

মুক্তিযোদ্ধা ভাসমান সেতু নির্মাণে পর রাজগঞ্জ বাজার সংলগ্ন আরেকটি সেতুও নির্মিত হয়েছে ঝাঁপা বাওড়ের ওপর। ফলে উভয় পারের মানুষের চলাচল আরও সহজতর হয়েছে। স্থানীয়দের দাবী বাওড়টির পানির গভীরতা কোথায় ৩০ ফুট আবার কোথাও সর্বোচ্চ ৬০ ফুট পর্যন্ত। সরকারি এই খাস সম্পত্তি ইজারা নিয়ে বাওড়ে মাছ চাষ করছেন মৎস্যজীবীরা।